হজ্জ: অসীম পুণ্যময় বিশ্ব মানবতার মহাসম্মেলন

মাওলানা মুফতী মোঃ ওমর ফারুক: রহমত বরকত ও কল্যাণে ভরপুর বিশ্ব জাহানের মালিকের দরবারে সেলাইবিহীন ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় অসীম এবং অকৃত্রিম ভালবাসার সওগাত নিয়ে একই পদ্ধতিতে সকলের মনে প্রাণে যে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা বিশ্ব তা মূলত বিশ্ব মানবতার মহা সম্মেলন। গোটা বিশ্ব জাহানের রাজাধিরাজ অসীম ক্ষমতার একমাত্র চিরস্থায়ী মালিক যার সমক্ষক আর কেহ নাই, যিনি রাত কে দিন, দিন কে রাতে পরিণত করেন, যার হুকুমে চন্দ্র, সূর্য তাদের নির্দিষ্ট গতিতে চলছে, যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে, সেই মহান মাবুদ তাঁর অসীম দয়ার নির্দশন হিসাবে জগত বাসীর হেদায়াতের জন্য পৃথিবীর ঠিক মধ্যস্থলে স্থাপন করলেন বায়তুল্লাহ। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এরশাদ হচ্ছে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন “মানবজাতির জন্য সর্ব প্রথম যে গৃহ নির্মাণ করা হয়েছিল তাহা তো বাক্কায় (মক্কায়) উহা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারী আলোক বর্তিকা, শান্তি শৃংঙ্খলা ও বিশ্ব মানবতার সকল কল্যাণের হেড কোয়ার্টার।” সুরা আলে ইমরান আয়াত ৯৬।
বিশ্বের সকল মুসলিম উম্মাহর জন্য তাঁর অসীম ভালবাসা ও বিশেষ করুণা লাভের অফুরন্ত সুযোগ গ্রহণের মাধ্যম হিসাবে দান করলেন দুনিয়ার প্রথম ঘরকে কেন্দ্র করে হজ্বের বিধান। দাওয়াত করলেন বিশ্ববাসীকে মহাসম্মেলনের। বিশ্ব জাহান হতে আগত নানা শ্রেণী পেশার মানুষ, নানান দেশের নানান ভাষার মানুষ, কেহ সুন্দর কেহ কালো কেহ লম্বা, কেহ খাঁটো সকলের মুখে একই জয়ধ্বনী একই শ্লোগান একই সুরে “লাব্বায়িক, আল্লাহুম্মা লাব্বায়িক, লা শারি কালাকা লাব্বায়িক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিয়মাতা, লাকা ওয়াল মুলক, লা শারীকালাক্”! আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি হাজির, আমি হাজির, কোন শরীক নাই তোমার, আমি হাজির নিশ্চয়ই সকল প্রসংসা ও অনুগ্রহ কেবলমাত্র তোমারই, সকল সামাজ্যও তোমার, কোন শরীক নাই তোমার। সেলাই বিহীন সাদা কাপড় পরিহিত অবস্থায় খালি পায়ে খালি মাথায় সকলের সম্মিলিত সুরে একই ধ্যান ধারনায় একই সাঁড়িতে একই কাজের দৃশ্য কি যে মনমুগ্ধকর পরিবেশ! কি যে বিশ্বভ্রাতৃত্বের অটুট বন্ধন! যেখানে ভিন দেশী, ভিন্ন ভাষাভাষি লক্ষ লক্ষ জনতা, তবু নেই কোন হাতাহাতি নেই কোন বাড়াবাড়ি, হয়না কোন ধরাধরি, নেই কোন মারামারি, শুধু শান্তির পয়গাম সকলের দাবী, কতই না চমৎকার দৃশ্য! পৃথিবীর আর কোথাও এমন দৃশ্য আছে কি? না না বিশ্বমানবতার এমন মহাসম্মেলনের, মহাব্যবস্থাপনার শক্তি-সামর্থ, স্থান আর কারো নেই আর কোথাও নাই। শুধুমাত্র লা শরীক আল্লাহর।
এমন অদ্বিতীয়, অসাধারণ, অতুলনীয়, মানবতা মনুষ্যত্বের, শান্তি শৃঙ্খলার একমাত্র মডেল, সম্মেলনের পরে আর কোন সম্মেলন পাবেন না, যে জায়গার চেয়ে শ্রেষ্ঠ জায়গা পৃথিবীতে আর নেই সেই মহাসমাবেশে আপনী যাবেন না! শক্তি সামর্থ থাকার পরও নানা খোড়া অজুহাতে দেরী করবেন, জীবনে একবার ও যাওয়া হবে না! যাই-যাচ্ছি করে জীবন বাতি নিভে যাবে! জেনে রাখুন! আপনী হতভাগ্য, কপালপুড়া, মহানবীর সুপারিশ আপনার নসীবে নাও হতে পারে! কারণ রাহমাতুল্লিল আলামিন রাসুল (সা.) ধমকি দিয়ে বলেছেন “যার সামর্থ থাকার পরও হজ্ব করে নাই সে হয় ইহুদি কিংবা নাসারা হয়ে মরুক, ইহাতে কিছু যায় আসে না” কি কঠিন ভবিষ্যৎ বাণী! যার প্রতিটি বাণী-ই আল্লাহ প্রদত্ত। সাবধান! সথর্ক হয়ে যান! এ বছর-ই চলুন,এবার সম্ভব না হলে আগামীতে কোন বাধা-ই যেন আপনাকে পেয়ে না বসে এখনি প্রস্তুতি গ্রহণ করুন, খালেস এরাদা করুন, ঘরের মালিকের কাছে বলুন, তাঁর সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে দেন, তাঁর সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে তাহাজ্জুদের সালাত, নিবিড় সম্পর্কের অতি উত্তম সময় এ সময়ে-ই তাঁকে পাবেন, আশা রাখুন, কাজ শুরু করে দেন।
যদি কোন ক্ষেত্রে আপনার শক্তি সামর্থের কোন কমতি থাকে তিনি-ই তা পুষিয়ে দেবেন। যিনি খুঁটি ছাড়া আসমান দিলেন, একফোটা নাপাক পানি হতে আমাদের কে সৃষ্টি করে এত শান শওকত দিলেন, কাউকে ক্ষমতার মসনদে বসিয়ে কাউকে সরিয়ে দেন, তাঁকেই বলুন, ব্যবস্থা হবেই! তিনি-ই মহাব্যবস্থাপক আর কেউ নয়।

একটি বিষয় মনে রাখা দরকার যদি কেহ বড় কোন কোম্পানীর ম্যানেজার হয় অথবা অন্য কোন দামী পোষ্টে আসীন থাকেন আর কোম্পানী তাকে ২/৪ জন কে নিয়ে হজ্বে যাওয়ার সুযোগ দেয় সেই ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঐ ব্যক্তি আত্মীয়-স্বজন, গোষ্ঠী-ঘ্যাতী নিয়ে বার বার হজ্ব ওমরাহ পালন করে নিজকে অনেক বড় মুসলমান হিসাবে জাহির করে কিন্তু বাস্তবে তার অধীনস্থ সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীদের কে সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের সুযোগ সুবিধাও দিতে চান না, অনেক ক্ষেত্রে যেন জুম্মার নামাজ ও আদায় না করতে পারে সে জন্য শুক্রবারে অফিসে আসতে বাধ্য করেন, রমজান মাসে রাতে ফ্যাক্টরীতে কাজ করতে বাধ্য করান এমনটা যেন না হয়, তাহলে তার হজ্ব ব্যর্থ। শুধু তাই নয় দু’এক জন অসুস্থ কর্মচারী চিকিৎসার অভাবে বিছানায় কাতরাবে, অথবা চিকিৎসার জন্য ছুটি পাবে না সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ম্যানাজারের কোন ভূমিকা থাকবে না তা হয় না। কিন্তু তার নিজের গায়ে সামান্য জ্বর এলে লন্ডনের এলিজাবেত হাসপাতালে চলে যাবে! ইহা কাম্য নয়। সাবধান! এ ব্যাপারে আমাদের সকল কে সজাগ থাকতে হবে। শুধু হজ্ব ওমরা জুম্মার নামাজ-ই ইসলাম নয়,অর্থাৎ এগুলোর মধ্যে ইসলামকে সীমাবদ্ধ করা যাবে না। ইসলামে হজ্জ ওমরার যেমন গুরুত্ব আছে তদরূপ মানবতা মনুষ্যত্ব, অধীনস্থ অসুস্থ প্রতিবন্ধীদের অধিকার আদায়ের ও গুরুত্ব রয়েছে। তাদের অধিকার ও সংরক্ষণ করতে হবে। সকলকেই সকলের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান নামাজ। যার গুরুত্ব ও তাৎপর্যের কথা বলে শেষ করা যায় না। তদুপরি একই সময়ে পৃথিবীর সব জায়গায় তা আদায় করা হয়না। ভৌগলিক কারণে সময়ের ব্যবধানে কোথাও কিছু সময় আগে অথবা কিছু সময় পরে ওয়াক্ত হয় এবং সেই হিসাবে আদায় করা হয়। তদ্রুপ রোজা বা সিয়াম পালনের গুরুত্ব ও অপরিসীম তথাপি সিয়াম সাধনে বিশ্বব্যাপী সেহরী এবং ইফতারের সময়ে পার্থক্য হয়ে থাকে। কোথাও দু’চার ঘন্টা আগে বা পরে হয়ে থাকে। কিন্তু হজ্ব এমন এক মহাবিধান বা ইবাদত যার মৌলিক কর্মসূচিগুলো গোটা পৃথিবী হতে আগত নারী পুরুষ সকলের জন্য একই সময়ে একই ভাবে এক সাথে আদায় করতে হয়।
এর দ্বারা অতি সহজেই বুঝা যায় যে, হজ্বের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। শান্তি শৃংঙ্খলা ও বিশ্ব মানবতার মহাসম্মেলন যার চার পাশে অগণিত শান্তিকামী ফেরেস্তারা মহান মাবুদের মেহমানদের কে সকাল-সন্ধ্যা পাহারা দিচ্ছে তাদেরকে “আহলান সাহলান মারহাবা” বলে স্বাগত জানাচ্ছে! জান্নাতী পরিবেশে আলিঙ্গন করছে। যে ঘরে মাত্র এক রাকাত নামাজ আদায় করলে পৃথিবীর যে কোন মসজিদে এক লক্ষ রাকাত নামাজ আদায়ের সমান ছওয়াব হয়, যে পাথরে চুমু খেলে অতীতের গুনাহসমূহ ক্ষমা হয়ে যায়, যার চার পাশে এমন কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা রয়েছে যে স্থানগুলোতে দো’য়া কবুলের নিশ্চয়তা! যেখানে দুনিয়ায় আগমনকারী সকল নবী রাসুলের পদধূলির সংমিশ্রণ হয়েছে, যেখানে আদি পিতা হযরত আদম আ: ও মা হাওয়া আ: দীর্ঘ প্রায় ৩৫০ বছর পর সাক্ষাৎ হয়েছে। শধু তাই নয় সোয়া লক্ষ সাহাবীর উপস্থিতিতে আরাফার মাঠে বিদায় হজ্বের জগত বিখ্যাত ভাষণ প্রদান করা হয়েছে। যার চতুর পাশ শুধু রহমত, বরকত আর কল্যাণে ভরপুর।
আরো আশ্চর্যের বিষয় এই যে ভৌগলিকভাবে যে দেশের ভূখন্ড শুধু ধূধূ মরূভূমি, এবং পাহাড় আর পাহাড়, কিছু খেজুর গাছ ব্যতীত তেমন কোন গাছপালা নেই বল্লেই চলে। সেখানে পৃথিবীর সকল ফল-ফলাদিতে পরিপূর্ণ! কার ইশারায় এমন অসম্ভব কে সম্ভব করা হয়েছে? যেখানে কোন পুকুরের কল্পনাও করা যায় না,এবং নলকূপ বা ডিপ মেশিনে স্বাভাবিক পানি পাওয়া দূরহ ব্যাপার, সেখানে নির্মল স্বচ্ছ ডালিমের রসের চেয়েও সুমিষ্ট, অতুলনীয় স্বাদ ও পুষ্টিতে ভরপুর জান্নাতের ঝর্ণা ধারার সেই সুপ্রসিদ্ধ যমযমের পানিতে সয়লাব! যা একবার পান করলে হৃদয়, মন-প্রাণ ভরে যায় কিন্তু কিছুক্ষণ পর তার নাম ও স্বাদের আর্কষণে আবার ও মন চায় আরো কয়েক গ্লাস পান করি, বাকি জীবনের সবটুকু পিপাঁসা মিটিয়ে যাই! আহ! ইহা যে কি অতুলনীয় রহমত বরকত সুস্থতা ও কল্যাণকর জ্ঞান লাভের মহাঔষুধ! যা নামে যমযমের পানি! কিন্তু বাস্তবে সর্বরোগের মহাঔষুধ! যুগ যুগ ধরে যমযমের পানিকে বিশ্ব মুসলিম উম্মা যে কোন রোগের পার্শপ্রতিক্রিয়া বিহীন, লিকুইড মেডিসিন হিসাবে গ্রহণ করেছে! আপনি তা পান করতে যাবেন না! তাহলে যাবেন কোথায়?
সে কোন মহামানব! যার দো’য়ার বরকতে ধূধূ মরুভূমি, ফলের নগরীতে রুপ নিল, শান্তি নিরাপত্তা শৃঙ্খলার মডেল নগরী হিসাবে পরিগণিত হল! আপনী কি জানেন তিনি কে? তাঁর নীতি আদর্শ কি ছিল? কি ছিল তার দৈনিক কর্মপন্থা? যিনি মুসলিম জাতির নামকরণ করলেন, যিনি মুসলিম জাতির পিতা, যার স্মৃতি বিজড়িত মক্কা, মাকামে ইব্রাহীম, যে দু’জন পিতা পুত্র নিজ হাতে কা’বা নির্মাণ করলেন, যুগ যুগ ধরে যার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর, কুরবানী করছে! ঐ মহা স্থানের মহাসম্মেলনে যোগ দিতে মুসলিম উম্মাহ জান প্রাণ উজাড় করে দিবে কমপক্ষে জীবনে একটি বারের জন্য হলেও ছুটে যাবে! এটাই তো স্বাভাবিক।
গোটা বিশ্বব্যাপী যে দাংগামা হাংগামা হানাহানি মারামারি কাটাকাটি চলছে জঙ্গীবাদ সন্ত্রাসবাদ আত্মঘাতী হামলায় প্রতিনিয়তই সৃষ্টির সেরা আশরাফুল মাখলুকাত কে পাখীর মত গুলী খেয়ে মরতে হচ্ছে গোটা বিশ্ব অশান্তির ধাবানলে জ্বলছে! বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সকল রাষ্ট্রই ভয় আতঙ্কে এবং কি জানি কি এক অজানা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এসব কিছু হতে পরিত্রাণ পেতে হলে, রাস্তা-ঘাট অফিস আদালত রাজ প্রাসাদ সর্বত্র নিরাপত্তা লাভ করতে চাইলে এই ঘরের মালিকের উপাসনা ইবাদত বন্দেগী করতে হবে এর কোন বিকল্প নাই। এরশাদ হচ্ছে “তারা যেন এই ঘরের মালিকের-ই ইবাদত করে যিনি খোদায় অন্ন যোগান এবং ভয়-ভীতি হতে নিরাপত্তা দান করেন”। সুরা কুরাইশ আয়াত(৩-৪)
এই ঘরকে সামনে রেখে যে ব্যাক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্র তাদের কর্মসূচি প্রণয়ন করবে, তারা সর্বত্র শান্তি সমৃদ্ধি লাভ করবে, পাবে সকল নিরাপত্তা, দূর হবে সকল প্রকার ভয় ভীতি। দুনিয়ায় আগত সকল নবী রাসুল যে সকল বিষয়াবলীর সাথে সরাসরি জড়িত তাঁহারা যে স্থানে যে তারিখে যে কাজটি করেছেন আপনি সেই স্থানে সেই কাজটি করবেন। ইহা আসলেই কত মহা সৌভাগ্যের বিষয় তা কি একবার ও গভীরভাবে চিন্তা করেছেন? যদি বিষয়টি কে ঐভাবে বিবেচনায় না নিয়ে থাকেন, তাহলে আজ থেকে এখন থেকে একটু ভেবে দেখুন! আপনার মন কে জিজ্ঞাসা করুন, দু’চোখ বন্ধ করে সামান্য সময় ফিকির করুন, দেখবেন জবাব পেয়ে যাবেন। দুনিয়ায় এর চেয়ে উৎকৃষ্ট স্থান, মান, সম্মান চাওয়া পাওয়ার আর কোন কিছু আছে কি? না না পৃথিবীতে এর চেয়ে উত্তম স্থান আর নেই, এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ জায়গা আর নেই। থাকবেই কি করে যিনি বিশ্বজাহানের মালিক তাঁর ঘর কে কেন্দ্র করে তিনি-ই এসব আয়োজন করেছেন।
বিশ্ব মানবতার মহান শিক্ষক স্যাইয়েদুল মুরসালিন যিনি মহান মা’বুদের সকল বিধি বিধান অক্ষরে অক্ষরে পালন করে তাঁর নৈকট্য লাভ করে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন। যার জীবনের সকল কিছু এ শহরে।যিনি মদিনা মুনাওয়ারায় শুয়ে থেকে তাঁর রওজায় আমাদের কে সালাম দেওয়ার সুযোগ করে দিলেন। যার নিজ হাতে তৈরী মসজিদে নববী, যেখানে এক রাকাত নামাজ আদায় করলে দুনিয়ার অন্য যে কোন মসজিতে পঞ্চাশ রাকাত নামাজ আদায়ের ছওয়াব পাওয়া যায়।
আপনি সেখানে যেতে গড়িমশি করবেন, সেই মহস্থানের মহাসম্মেলনে! যাকে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সুরা আত্ তীনের ৩ নং আয়াতে বালাদিল আমিন (নিরাপদ শহর) বলে ঘোষণা করা হয়েছে। যে এলাকায় বিশ্বমানবতার মহান শিক্ষকের জন্ম কর্ম, যেখানে তাঁর বেড়ে ওঠা, যে পাহাড়ের গুহায় বিশ্ব মহিয়সী নারীকূলের শিরমনি হযরত খাদিজাতুল কুবরা রা: এর পথচলা, যে জমীনের বুকে এতীম নবী মুহাম্মাদুর রাসুল সা: কে হালিমাতুস সাদিয়া রা: দুধ পান করিয়েছেন, যেখানে রয়েছে জান্নাতে প্রবেশকারী প্রথম ব্যক্তি মহাপুরুষ হযরত আবু বকর রা: যার পাশে ঘুমিয়ে আছেন বিশ্ব সেরা ন্যায়বিচারের জ্বলন্ত প্রতীক হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা:। যার চলার পথে মরদুদ শয়তান পথ চলতে সাহস করত না।
যে মহা মানব কে উদ্দেশ্য করে রাসুল সা: ঘোষণা করেছেন, “মোর পরে যদি হত কোন পয়গাম্বর তাহলে হত সে এক ওমর। যে হেরা গুহায় দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব সাইয়্যেদুল মুরসালিন ধ্যানমগ্ন থেকে সকল আসমানী কিতাবের শ্রেষ্ঠ কিতাব মহা গ্রন্থ আল কুরআনের প্রথম ওহী পেয়ে মানবতা মনুষ্যত্বকে জাহিলিয়াতের ঘোর অন্ধকার হতে উদ্ধার করে জান্নাতের মেহমান বানিয়েছেন।
যে এলাকায় আশারায়ে মোবাশ্শারা, অগণিত সাহাবায়ে আজমায়ীন ঘুমিয়ে আছেন যার অদূরে রওজাতুম মিন রিয়াজীল জান্নাহ অবস্থিত। সেই পাক পবিত্র, দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম স্থানের মহাসম্মেলনে সুযোগ থাকার পর ও যোগ না দেয়া, না যাওয়া নানা রকম গড়িমশি করা এবছর নয় পরের বছর, মেয়ের বিয়ে শেষ করে, ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর পরে, আগামী বছর ভাল ব্যবসা করতে পারলে, চাকুরী হতে রিটায়ার্ড করলে, বাড়ী বানানোর কাজ শেষ হলে ইত্যাদি অজুহাতে কিছু বয়:বৃদ্ধ অতি বয়স্ক নারী পুরুষ বাংলাদেশ থেকে হজে¦ যান যাদের অধিকাংশই হজে¦র আরকান আহকাম গুলো যথাযথ ভাবে পালন করতে পারেন না। বরং অনেকের ক্ষেত্রে বায়তুল্লাতে নিয়মিত নামাজ আদায় করাই সম্ভব হয় না। শারীরিক দুর্বলতার কারণে বাধ্য হয়ে সংশ্লিষ্ট বাসা বাড়ীতে অথবা ঘরে বসে নামাজ আদায় করেন।
এমনটা হওয়া উচিৎ নয় যেহেতু হজ্জের অনেক কাজ শারীরিক শক্তি সামর্থ্যরে ওপর নির্ভর করে তাই যুবক বয়সে-ই যাওয়া উচিৎ। পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রের মুসলমান তাই করেন। ভিন্ন ধর্মাম্বলী অনেকে হয়ত আফসোস করেন! আহ! যদি আমাদের সুযোগ থাকত? হ্যাঁ তাদেরও এই ঘরের সম্মানিত মেহমান হওয়ার সুযোগ রয়েছে!! যদি তারা ঈমান নামের ভিসা গ্রহন করেন এবং ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেন। অবশ্য ঈমানের দাবীদার অনেক মুসলমান ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাত কে যথাযথ পালন না করেও নিজকে খাঁটি মুসলিম হিসাবে পরিচয় দিয়ে গর্ববোধ করেন এবং মাঝে মধ্যে ইসলামের বিধি বিধান কে কটাক্ষ করে কথা বলেন যা কোন ক্রমেই কাম্য নয়। সম্মেলনের সকল ডেলিগেটদের ভাল করে মনে রাখতে হবে যে, যে সকল বৈধ বিষয় সম্মেলন চলাকালীন সময়ের জন্য নিষিদ্ধ এবং যে সমস্ত বিষয় সব সময়ের জন্যই নিষেধ সে সকল বিষয়াবলী অত্যন্ত সর্তকতার সাথে পরিহার করে চলতে হবে যেমন গিবত, পরচর্চা অন্যের হক নষ্ট করা, অবৈধ ইনকাম, গর্ব-অহংকার করা, তাগুতের অনুসরণ, অনুকরণ হতে সম্পূর্ণরূপে নিজকে শতমাইল দূরে রাখতে হবে তবেই আশা করা যায় যে অসীম পূর্ণময় মহাসম্মেলনের যোগদান সফল হয়েছে, হজ্জে মাবরুর নসীব হয়েছে। মহান মা’বুদ আমাদের কে দ্বীনের সঠিক সমজ দান করেন।
লেখক: কলামিষ্ট, কবি, সাহিত্যিক, গবেষক ও বিশিষ্ট ব্যাংকার।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button