পর্যটকদের ডাকছে বাংলার কাশ্মীর খ্যাত শহীদ সিরাজ লেক

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তের মেঘালয় পাহাড় সংলগ্ন শহীদ সিরাজ লেকটি আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে দিন দিন। এর পাশাপাশি পর্যটকগন টাংগুয়ার হাওর, বারেকটিলা, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগানসহ উপজেলার বিভিন্ন দর্শনীয় পর্যটন স্পট দেখার পাশাপাশি মেঘালয় পাহাড় সংলগ্ন এই লেকটি দেখতে হাজার হাজার লোকজন আসছে সুন্দর্য উপভোগ করতে।

এই লেকটি নিজস্ব স্বকীয়তায় সবুজ বনানী, উচুঁ নিচু পাহাড়ী, টিলা ও মেঘালয় পাহাড় নিয়ে যেন এর সৌন্দর্য আরো আকর্ষনীয় করে তুলছে পর্যটকদের কাছে। আর এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এই লেকটির নাম ভিন্ন ভিন্নভাবে ফেইসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে দেখার আগ্রহ বাড়ছে।

আর এই লেক সম্পর্কে জানতে ও সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনেই ছুটে আসছে হাজার হাজার দর্শনার্থী। এখানে এসে তারা কেউ বলছে নিলাদ্রী লেক, কেউ বলছে বাংলার কাশ্মির আবার কেউ বলছে তাহিরপুর সীমান্ত লেক আর স্থানীয়রা বলছে পাথর কোয়ারী।

কিন্তু এই পাথর কোয়ারীটি অফিস আদালতসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন স্থানে ও স্থানীয় লোকজনসহ সবাই জানে ও চিনে ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পের পরিতাক্ত পাথর খোয়ারী হিসাবে। সর্বশেষ জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে আনুষ্ঠানিক ভাবেই এই লেকটিকে শহীদ সিরাজ লেক নামকরণ করেন।

জানা যায়, এই লেকটি তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ট্যাকেরঘাটে মেঘালয় পাহাড় সংলগ্ন স্থানে অবস্থিত। এই লেকের টানে আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষনে জনপ্রিয় ইত্যাদির পরিচালক হানিফ সংকেত তাহিরপুরে শহীদ সিরাজ লেক দেখে মুগ্ধ হয়ে গত বছরের ১৯ নভেম্বর জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির শুটিং করেন। এতেও শহীদ সিরাজ লেক নাম বলে প্রচার করা হয়।

এই লেকের পাশের চির নিন্দ্রায় শায়িত আছেন বাংলার বীর সেনানীগন। তাদের মধ্যে শহীদ সিরাজ অন্যতম। লেক সংলগ্ন তার সমাধি দেখতে আসেন অনেক পর্যটক। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর সেনানী শহীদ সিরাজের কবর লেকের সাথেই। নিজস্ব স্বকীয়তায় সবুজ বনানী, উচুঁ নিচু পাহাড়ী, টিলা ও মেঘালয় পাহাড় নিয়ে যেন এর সৌন্দর্য আরো আকর্ষনীয় করে তুলছে পর্যটকদের কাছে।

স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, সীমান্তবর্তী ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পের পরিত্যক্ত এই খোয়ারীটি ১৯৪০ সালে চুনাপাথর সংগ্রহ শুরু করে। এখানে চুনাপাথর সংগ্রহ করে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় নির্মিত আসাম বাংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটানো হত। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর বিভিন্ন সমস্যা ও ব্যয় বৃদ্ধি দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় এর সকল কার্যক্রম।

পরে ১৯৬০ সালে সিমেন্ট ফ্যাক্টরী চালু রাখার জন্য চুনা পাথরের প্রয়োজনে ভূমি জরিপ চালিয়ে সীমান্তবর্তী ট্যাকেরঘাট এলাকায় ৩২৭ একর জায়গায় চুনাপাথরের সন্ধান পায় বিসিআইসি কতৃপক্ষ। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৬ সালে খনিজ পাথর প্রকল্পটি মাইনিংয়ের মাধ্যমে র্দীঘদিন পাথর উত্তোলন করা হয়। ১৯৯৬ সালে এই প্রকল্পটি একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ কোয়ারী থেকে চুনাপাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয়।

এরপর এই কোয়ারীতে পানি জমে কানায় কানায় পূর্ন হয়ে উঠে। তবে দৃষ্টিনন্দন এই লেকটি (চুনাপাথর পরিতাক্ত কোয়ারী) সীমান্ত ঘেষা পাহাড় ও হাওর সংলগ্ন হওয়ায় হাজার হাজার পর্যটকদের আগমন গঠছে প্রতিদিন। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না থাকায় পর্যটকদের কাছে এর নিজস্ব সৌন্দর্য অধরাই রয়েই যাচ্ছে।

সুমন দাস, নরোউত্তম, ধীমান চন্দ্রসহ স্থানীয় এলাকাবাসী ও পর্যটকগন বলেন, মেঘালয় পাহাড় ঘেরা এই সৌন্দর্য সমৃদ্ধ স্থানটি নিয়ে আমরা মুগ্ধ। এই লেকটির নিজস্ব গুন আছে যার জন্য সবাই চুনাপাথর কোয়ারী এক নামেই চিনত এখনও চিনে। এই লেকের পাশেই বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সিরাজের কবর থাকায় তার নামের সাথে মিল রেখে ও এলাকার পরিচিতির স্বার্থে শহীদ সিরাজ লেক নামকরন করেন জেলা প্রশাসক। এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সার্বিক উন্নয় না হওয়ায় চরম দুভোর্গে পরেন পর্যটকগন।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান, শহীদ সিরাজ লেক নাম করণের পূর্বে আগত পর্যটকগন একে নিলাদ্রী লেক, বাংলার কাশ্মির কেউবা পাথর কোয়ারী ডাকে। এখন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে নামকরণ হওয়ায় খুবই ভাল হয়েছে। এই লেক দেখতে অনেক পর্যটকগন আসেন। পাশাপাশি টাংগুয়ার হাওর, যাদু কাটা নদী, শিমুল বাগানও দেখতে আসেন।

কিভাবে যাবেন: রাজধানী ঢাকা থেকে যে কোন বাস দিয়ে সুনামগঞ্জ। এরপর মোটরসাইকেল অথবা সিএনজি দিয়ে (জনপ্রতি ১০০শ’ টাকা) তাহিরপুর উপজেলায় অথবা লাউড়েরগড়। এরপর হলে পায়ে হেটে লাউড়েরগড় গেলেই যাদুকাটা নদী, বারেক টিলা। এরপর আবারও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে সীমান্ত এলাকা দিয়ে ট্যাকেরঘাট। মোটরসাইকেল ছাড়া অন্য কোন যানবাহন নেই। ভাড়া জন প্রতি ৭০-৮০ টাকা। অন্যদিকে তাহিরপুর থেকে বর্ষায় নৌকা দিয়ে জনপ্রতি ৬০-৭০ টাকায় যাওয়া যায়। সময় লাগবে ২ ঘন্টার মত।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button