মানবসেবায় আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেলেন তুর্কি ফার্স্টলেডি

মানব সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য গ্লোবাল ডোনারস ফোরামের সম্মাননা পদক পেলেন তুরস্কের ফার্স্টলেডি আমিনা এরদোগান। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার লন্ডনে এই পুরস্কারটি গ্রহণ করেন তিনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো ভিত্তিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব মুসলিম ফিলানথ্রপিস্ট’ দুই বছর পর পর গ্লোবাল ডোনারস ফোরামের আয়োজন করে। এবার এই ফোরামে অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন আমিনা এরদোগান।

দাতব্য কাজে তুর্কি ফার্স্টলেডির অবদান বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তার ভুমিকা আন্তর্জাতিক মহলে খুবই প্রশংসিত হয়েছে, যার জন্য এই পদক পেলেন তিনি। ২০১২ সালে প্রাণনাশের হুমকি উপেক্ষা করেও তিনি মিয়ানমার সফর করেন শুধুমাত্র রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়ানোর জন্য। সে সময় তিনি রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন নিপীড়নের খবর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন। রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠিটির জন্য সেবার হাত বাড়িয়ে দিতে আমিনা এরদোগানই পথপ্রদর্শক।

এছাড়া গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর তিনি তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু শিবির পরিদর্শন করেন। সেখানে তারা তুর্কি সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বাস্তুদের জন্য ব্যাপক ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেন। কক্সবাজার থেকে ফিরে গিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর সিএনএন ইন্টারন্যাশনালে একটি নিবন্ধ লেখেন আমিনা এরদোগান যার শিরোনাম ছিলো, ‘রোহিঙ্গাদের আকুতি উপেক্ষা করতে পারে না মুসলিম বিশ্ব’। এই লেখার মাধ্যেমে তিনি আরো একবার বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে রোহিঙ্গাদের দুরাবস্থা তুলে ধরেন।

এছাড়া জাতিসঙ্ঘে তুর্কি পার্লামেন্ট মিশনের আয়োজনে ‘উদ্বাস্তুদের প্রতি সংহতি: ভূমধ্যসাগর, আফ্রিকা ও মিয়ানমারে মানবিক সহায়তা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানেও তিনি রোহিঙ্গাদের দুর্দশার বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরেন। এখানেই থেমে থাকেননি তুর্কি ফার্স্টলেডি, বিশ্বনেতাদের স্ত্রীদের কাছে তিনি চিঠি লেখেন রোহিঙ্গাদের প্রতি সদয় হতে।

এছাড়া ২০০৯ সালে ফিলিস্তিন ও গাজা উপত্যকায় আক্রমণের পর মানবিক দুরাবস্থার বিষয়টি নিয়েও কাজ করেন আমিনা এরদোগান। ওই সময় তিনি ইস্তাম্বুলে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেন যার শিরোনাম ছিলো, ‘শান্তির পক্ষে ফিলিস্তিনি নারীরা’। ওই সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বনেতাদের স্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধের দাবি জানানো হয় সম্মেলন থেকে।

তুরস্কের অভ্যন্তরেও আমিনা এরদোগান প্রচুর দাতব্য কাজ করেছেন বিভিন্ন সময়ে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কাজ করেছেন তিনি। তুরস্কে আশ্রয় নেয়া উদ্বাস্তুদের জন্যও বিভিন্ন দাতব্য রয়েছে তার।

উল্লেখ্য, গ্লোবাল ডোনারস ফোরাম হচ্ছে ‘ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অব মুসলিম ফিলানথ্রপিস্ট’এর একটি দ্বিবার্ষিক উদ্যোগ। বিভিন্ন দেশের দাতা, ব্যবসায়ী, সামাজিক উদ্যোক্তা ও সরকারের প্রতিনিধিরা অংশ নেবে এই ফোরামে। বিশ্বে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও রাজনৈতিক বিভেদের উর্ধ্বে উঠে অর্থসামাজিক বন্ধন তৈরির এর উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উপকরণ বৃদ্ধি এর উদ্দেশ্য। গত ৯ সেপ্টেম্বর লন্ডনে শুরু হয়েছে তিন দিন ব্যাপী গ্লোবাল ডোনারস ফোরামের ৮ম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। ব্রিটিশ মিউজিয়াম, হাউজ অব লর্ডস ও ম্যানসন হাউজের মতো জায়গাগুলোতে আলোচনা হবে মানুষের মর্যাদা, বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও মানব কল্যানে অনুদানের বিষয় নিয়ে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button