মুসলিমদের ওপর হামলা ও হত্যা চলছে ভারতে

Indiaভারতের ঝাড়খাণ্ডে গরু চুরির কথিত অপরাধে দুজন মুসলিমকে পেটানোর মাত্র কয়েক দিন পরেই ১৯ জুন উত্তর প্রদেশে একই ধরণের কথিত অভিযোগে এক মুসলিম কৃষককে হত্যা করেছে উত্তেজিত জনতা। বিষয়টি নিয়ে ভারতের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন তোলপাড় চলছে।
এক ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে পিলখুয়া কোতয়ালি এলাকার বাঝেদা খুর্দ গ্রামের লোকেরা দুজন মানুষকে গরু কোরবারি দেয়ার কথিত অপরাধে নির্দয়ভাবে পেটাচ্ছে। ভুক্তভোগীদের একজন কাসেম (৪৫)। হাসপাতালে নেয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার অপর সঙ্গী গুরুতর আহত অবস্থায় এখনও চিকিৎসা নিচ্ছে। ওই দুইজন কোরবানি দেয়ার জন্য দুটো গরু এবং একটি বাছুর চুরি করেছে বলে এলাকায় গুজব রটিয়ে পড়লে ওই দুজনকে পেটায় উত্তেজিত গ্রামবাসীরা।
একটি ছবি প্রকাশিত হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, কিছু লোক এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার পর তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে আর পুলিশ ওই লোকগুলোকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই ছবি প্রকাশের পর আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছে উত্তর প্রদেশের পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ছবিটি প্রকাশিত হওয়ার পর পুলিশের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। উত্তর প্রদেশের হাপুর জেলায় ওই ঘটনাটি ঘটে। ওই ছবিতে হত্যাকারীদের সাথে তিনজন পুলিশকেও দেখা গেছে।
পুলিশ ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার পরপরই ওই ছবিটি তোলা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া না যাওয়ার কারণে মৃতদেহ নিয়ে ওই ধরণের দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। পুলিশদের বিষয়টি নিয়ে আরও যত্নবান হওয়া উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেছে পুলিশ।
এর আগে ১৪ জুন ঝাড়খাণ্ড রাজ্যের এক গ্রামে স্থানীয় গ্রামবাসী দুজন মুসলিমকে পিটিয়ে জখম করে। এদের মধ্যে একজন মারা যায়। ভুক্তভোগি দুজন কিছু হারিয়ে যাওয়া মহিষ খুঁজে নিয়ে ফিরছিল। এ সময় তাদের উপর হামলা করে স্থানীয় গ্রামবাসী।
ভারতে মুসলিম সংখ্যালঘুদের উপর হিন্দু সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনাগুলোর মধ্যে এগুলি সাম্প্রতিক ঘটনা। এপ্রিল মাসে  উত্তরখাণ্ডের অগস্তমুনি শহরের কয়েকটি হিন্দু ডানপন্থী গ্রুপ এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী শুক্রবার শহরে মুসলিম মালিকানাধীন প্রায় ১৫টি দোকানপাটে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে যেখানে বলা হয়েছে যে ১০ বছর বয়সী এক হিন্দু মেয়েকে ধর্ষণ করেছে একজন মুসলিম। ওই ভুয়া ভিডিওটির সাথে সাথে দেয়া ঘৃণামূলক বিবৃতি ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় জনতা ক্রুদ্ধ হয়ে মুসলিমদের দোকানপাটগুলোতে হামলা চালায়।
শুক্রবার সকালে অগস্তমুনি পুলিশ স্টেশানের কাছে প্রায় দুই হাজার মানুষ জড়ো হয়। তারা কথিত ধর্ষণের বিচার দাবি করে। এ সময় অন্তত ১৫টি দোকান ভাংচুর করে তারা, যেগুলোর মালিক মুসলিম। এই হামলাকারীদের মধ্যে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংগঠন এবং স্থায়ীয় ছাত্রদের গ্রুপ ‘জয় হো’-ও ছিল।
২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে হিন্দুত্ববাদী জঙ্গিরা ভারতের অধিকাংশ এলাকায় সোচ্চার হয়ে উঠেছে। এইসব বর্বর জঙ্গিরা মূলত মুসলিমদের উপর হামলা নির্যাতন করছে এবং তাদেরকে হত্যা করছে। যে সব কারণে হত্যা করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে গো রক্ষা এবং লাভ জিহাদের মতো কারণ।
হিন্দুত্ববাদ রক্ষার নামে ভারতের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে দিয়েছে গেরুয়া সন্ত্রাসীরা। উত্তেজিত জনতার সহিংস হত্যাকাণ্ড একদিকে বেড়েছে। অন্যদিকে নিশ্চুপ হয়ে আছে মোদি সরকার। সরকারের নিরবতার কারণে জেগে উঠেছে আরও বহু ঘৃণাবাদী ও সন্ত্রাসী গ্রুপ, যারা মুসলিম ও নিম্নবর্ণের হিন্দুদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button