বঙ্গবন্ধু, আমি এবং জাতীয় শোক দিবস

Roniগোলাম মওলা রনি
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মনে করার মতো চাক্ষুস স্মৃতি হয়তো আমার নেই-কিন্তু আমি যাদের রক্তের ধারক তাদের অনেকের সঙ্গেই আবাল্য বন্ধুত্বের বন্ধনে তিনি সম্পর্কিত ছিলেন। আমার জন্মের ১৫/২০ বছর আগে থেকেই বঙ্গবন্ধু আমাদের এলাকায় নিয়মিত আসতেন। আমার আত্মীয় আব্দুল হামিদ চৌধুরী ছিলেন তাঁর সহপাঠী এবং অন্তরঙ্গ বন্ধু। বহুবার তিনি ঠেঙ্গামারীর চৌধুরী বাড়ীতে এসেছিলেন। মাঝে মধ্যে ভাঙ্গার সামসুদ্দীন মোল্লা ও ফরিদপুরের মোল্লা জালালকেও সঙ্গে আনতেন। ৪ বন্ধু মিলে ফরিদপুর জেলার প্রতিটি গ্রামে যেতেন আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন করার জন্য। হামিদ চৌধুরী ৫৪র যুক্তফ্রন্ট সরকারের এমপি এবং ঐ সময়ে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া আমার অন্য দুই কাকা সেই পঞ্চাশের দশক থেকে বঙ্গ বন্ধুর জীবৎকাল পর্যন্ত সদরপুর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ছিলেন। ফলে ১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ সাল অবধি বঙ্গবন্ধু আমাদের এলাকায় খুব কম গেলেও তাঁর সব কর্মকান্ডের খবর কমবেশী আমাদের পরিবারে আলোচিত হতো এবং তার বয়সী পুরুষেরা এবং সকল বয়সের নারীরা মনে প্রানে তাকে ভালোবাসতেন। ফলে কথায় কথায় তারা বাচ্চা পোলাপানদেরকে বঙ্গবন্ধুর কথা শোনাতেন।
আমাদের পরিবারের অন্য দশটি শিশুর মতো বেড়ে উঠতে গিয়ে- শৈশব থেকে রাজনৈতিক দল হিসেবে কেবলমাত্র আওয়ামীলীগ এবং নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নামই শুনে আসছিলাম। প্রাইমারী স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে হাইস্কুলে যাবার পর শুনেছি কংগ্রেস, মুসলিম লীগ, জামাতে ইসলামী, কম্যুনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন, পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি, জাসদ, ন্যাপ প্রভৃতি রাজনৈতিক সংগঠনের নাম। আমাদের দেশের রাজনীতির যে ধারা এবং ঐতিহ্য তাতে পরিবারের বাইরে গিয়ে ভিন্ন ধারার রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা ধারন করা কঠিন কাজ। আমি জীবনের কোন ক্ষেত্রেই কঠিন কাজে হাত দেইনি। যেখানে বিপদ-আপদও ঝক্কি ঝামেলার নুন্যতম গন্ধ থাকে, আমি ভুলেও সেপথ মাড়াইনি কস্মিনকালে। ওসবের কথা শুনলেই আমার হাত পা কাঁপে। তাই সহজ-সরল পথই আমার ভীষন পছন্দ। আমার জন্য আওয়ামীলীগের বংশবদ ছাত্রলীগের সদস্য হওয়া ছিলো একেবারে সোজা এবং সহজ একটি বিষয়। ফলে সিক্স-সেভেন থেকেই বুঝে হোক কিংবা না বুঝে হোক জয় বাংলা ! জয় বঙ্গবন্ধুর শ্লোগান তুলে চোঙ্গা ফুঁকতাম এবং লাফালাফি করতাম।
আমি বরাবরই ভালো ছাত্র ছিলাম। ৯বম শ্রেনী থেকে শ্রেনী পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি দেশ বিদেশের নানরকম বইপত্র পড়ার দিকে ভীষন রকম ঝুঁকে পড়লাম। ফলে আগের মতো চুঙ্গা নিয়ে নাচানাচি না করতে পারলেও সময় সুযোগ পেলে মিছিলে যোগ দিতাম। আমার এই অভ্যাস অব্যাহত থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ দিন অবধি। এমনকি এই পরিনত বয়সেও রাস্তায় কোন মিছিল দেখলে আমি দাঁড়িয়ে যাই কিংবা জনসভা হলে মাঠের এককোনে দাঁড়িয়ে বাদাম খেতে খেতে নেতাদের বক্তব্য শুনতে শুনতে সময় পার করি।
আওয়ামীলীগের মিছিল মানেই বঙ্গবন্ধুর শ্লোগান-আর জনসভা মানেই বঙ্গবন্ধুর কথা। আমি তো এগুলো শুনে আসছি গত ৪২/৪৩ বছর ধরে-একই কথামালা-শুধু বক্তা ভিন্ন এবং তাদের পদ পদবী, গায়ের রং এবং কন্ঠের স্বরটাই ভিন্ন। তারপরও আমার বিরক্ত লাগে না। অন্যসব কথা একবারের বেশি শুনলেই বিরক্ত হয়ে যাই। বহুবার শুনলে মেজাজ গরম হয়ে যায়। কিন্তু আমার রাজনৈতিক বিশ্বাস, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার স্মৃতি স্তম্ভের কথামালা গত চার দশক ধরে শোনার পরও বিরক্ত লাগে না। যদি বলা হয় -কেনো লাগেনা? আমার সহজ উত্তর -আমি জানিনা।
দল বা গোত্র প্রীতি মানব সমাজের সব চেয়ে পুরোনো বা আদীম বৈশিষ্ঠ। সকল যুগের সমাজ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগন এই দলপ্রীতিকে ভালোই বলেছেন-কেউ মন্দ বলেননি। দল প্রীতির সবচেয়ে উত্তম ব্যাখ্যা দাতা হলেন ইবনে খালদুন। তারা অবশ্য দলকানাদের সম্পর্কে কিছু বলেননি। দলবাজ, দালাল, সুবিধাভোগী বা বসন্তের কোকিলদের সম্পর্কে কোন কথা আমি ইবনে খালদুনের আল মুকাদ্দিমা বইতে পাইনি। আমি পেয়েছি কিভাবে দলের আনুগত্য করতে হয় এবং কিভাবে নেতার মর্যাদা হৃদয়ে ধারন করতে হয়। কাজেই দলের প্রতি আমার ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছে পারিবারিক কারনে- আর আনুগত্য করছি আমার শিক্ষা-দীক্ষা ব্যক্তিত্ব এবং রুচি বোধ অনুসারে। অন্যদিকে নেতার প্রতি সকৃতজ্ঞ শ্রদ্ধা, ভালবাসা এবং মমত্ববোধ লালন করছি কোরান-হাদিস-ইজমা কিয়াস এবং ইবনে খালদুনের সূত্রমতে। এভাবেই চলছিলো ২০০৮ সালের ১৪ ই ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু ১৫ ই ডিসেম্বর আমার জীবনে ঘটে গেলো এক অনন্য ঘটনা। সেই ঘটনার আলোকে আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখতে পেলাম নতুন রুপে- তাকে অনুভব করলাম ভিন্ন এক আঙ্গিকে-হৃদয়ের প্রতিটি পরতে পরতে আমি তার স্পর্শ অনুভব করতে থাকলাম পরম কৃতজ্ঞতায়।
বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত থেকে ১১৩ পটুয়াখালী-৩ আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পত্রটি পেলাম সকাল এগারটার দিকে। সুধা সদন থেকে বাইরে বের হবার সঙ্গে সঙ্গেই নেতা কর্মীরা সব জড়িয়ে ধরলো। আমি একটি বড় সড় মাইক্রোবাসে উঠলাম। নেতাকর্মীরাও হুড়মুড় করে আমার সঙ্গে উঠলো। কে উঠলো-কারা উঠলো কিংবা কতজন উঠলো-ওসব দেখা বা ভাবার মতো মনের অবস্থা তখন আমার ছিলো না। একটি মাত্র চিঠি – যেখানে বলা হলো-গোলাম মাওলা রনি আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী এবং সেটি প্রচারিত হবার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ আমার দিকে ধাবিত হলো ঠিক যেভাবে রানী মৌমাছির দিকে মৌচাকের সকল মৌমাছি ধাবিত হয়। কেনো এমন হয়? কার জন্য এমন হয়? এসব ভাবার সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখ অশ্রুসজল হয়ে গেলো। আমি ড্রাইভারকে বললাম- অন্যকোথাও নয়- সোজা টুঙ্গিপাড়া চল। সবার আগে আমি তার কবর জিয়ারত করবো যার ওছিলায় মহান রব আমায় জমিনে নতুন রুপে সম্মানীত করলেন।
ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে টুঙ্গিপাড়া গেলাম। সঙ্গে অনেক নেতাকর্মী। কতজন হবে তা আজ আর মনে নেই। তবে শ’ খানেক তো হবেই। ঢাকা থেকে বের হয়ে মাওয়া সড়কে উঠে দেখি আমার মাইক্রো বাসের পেছনে আরো ১৫/১৬ টি মাইক্রো ছুটছে। সবাই শ্লোগান দিচ্ছে-জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু, ও রনি ভাই। ও রনি ভাই! বঙ্গবন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞতায় আমার চোখ বার বার বাস্পরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। আমার গাড়ীর মধ্যে বসা নেতা কর্মীরা আনন্দ উল্লাস করছিলো এবং ছক আঁকছিলো- কিভাবে নির্বাচন করবো, কিভাবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করবো, আর আমি ভাবছিলাম আল্লাহর অনুগ্রহ, করুনা এবং বঙ্গবন্ধুর ওসিলার কথা। একজন মাত্র মানুষ-যিনি এখন আর আমাদের মধ্যে জীবিত নেই- অথচ সেই মৃত মানুষটির ওসিলা করে আমরা কোটি কোটি জীবিত মানুষ আজ একই পরিবারের সদস্যদের মতো ঐক্যবদ্ধ রয়েছি। তাঁর নামের দোহাই দিয়ে আমরা মেম্বর, চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়াম্যান, এমপি, মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী হই এবং শেষ মেষ নিজেদের আখের গোছানোর স্বার্থে বঙ্গবন্ধুকে কলংকিত করি।
আমাদের গাড়ী বহর বঙ্গবন্ধুর মাজারে পৌছালো। আমার শরীরে ওজু ছিলো। নেতাকর্মীদেরকে ওজু করে আসার জন্য বললাম। এরপর সবাই কয়েক রাকাত নফল নামাজ পড়ে কবর জিয়ারতের জন্য দোয়া দরুদ পাঠ করলাম এবং আল্লাহর দরবারে হাত তুলে বললাম- ইয়া আল্লাহ! ইয়া পারোয়ার দিগার-তুমি বঙ্গ বন্ধু এবং তাঁর সঙ্গে ১৫ই আগষ্টে নিহত পরিবারের সদস্য এবং অন্যান্যদেরকে ক্ষমা করে জ্ন্নাাত নসীব করো। তাঁর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অবারিত রহমত, বরকত ও হেদায়াত দান কর। আল্লাহ-তুমি আমাকে নির্বাচনে বিজয়ী কর এবং দেশজাতির কল্যানে আত্ম নিয়োগ করার তৌফিক দান কর। হে আমার মালিক- তুমি আমার চিত্ত, মন, মানষিকতা ও চিন্তা-চেতনাকে বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞ করে তোলো————আমিন।
আল্লাহর রহমতে ৯বম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে আওয়ামীলীগ দলীয় সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহনের দিন থেকে আজ অবধি বঙ্গবন্ধুর মাজারে কৃত মোনাজাতের শব্দমালা হৃদয়ে ধারন করে আছি এবং সেভাবেই চলছি। এবার আমি ১৫ ই আগষ্টের আনুষ্ঠানিকতা এবং নানামুখী কর্মসূচীর অন্তরালের কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে সামান্য কিছু আলোচনা করে আজকের প্রসঙ্গের ইতি টানবো।
২৯ই ডিসেম্বর ২০০৮ সালের নির্বাচনে এমপি হবার পর আমার নির্বাচনী এলাকার প্রশাসন, রাজনীতি, সংগঠন, উন্নয়নসহ ছোট খাটো পারিবারিক বিরোধের নিষ্পত্তির ভারও আমার ওপর এসে পড়ে। এসব করতে করতে আমি প্রচন্ড ব্যস্ততা এবং নিত্য নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের মধ্য দিয়ে আমার দিন পার করছিলাম। এরই মধ্যে দেখতে দেখতে ১৫ ই আগস্ট ২০০৯ সাল চলে এলো। নেতাকর্মীদের সবারই আব্দার এবার একটা ফাটাফাটি ১৫ ই আগষ্ট করতে হবে। আমি বললাম ১৫ই আগষ্ট আবার ফাটাফাটি হয় কিভাবে। তারা বললো-ফাটাফাটি মানে জাঁকজমকপূর্ন। আগের এমপি সাব কোনদিন পকেটে হাত দেননি। চেয়ে চিন্তে, শহর-বন্দর-গ্রামের লোকজনের নিকট চাঁদা আদায় করে কোনমতে ১৫ ই আগষ্ট পালন করতেন। আপনি বড়লোক (ধনী) মানুষ। দিল দরিয়া হয়ে খরচাপাতি করেন- তাই বলছিলাম—-। আমি বললাম – ঠিক আছে-কিভাবে করবেন। তারা বললো- প্রতি ওয়ার্ডে একটা করে গরু এবং নগদ ১০ হাজার করে টাকা দিলেই হবে। আমি বললাম- গরুর দাম কতো? তারা বললো-হাজার পঁচিশেক হলেই চলবে। অর্থাৎ প্রতি ওয়ার্ডে সাকুল্যে মাত্র ৩৫ হাজার টাকা দিলেই চলবে। বাকীটা আমরা ম্যানেজ করে নেবো। তাদের কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে গেলো। দুইটি উপজেলায় ১৮ টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা। প্রতি ইউনিয়নে ৯টি করে ওয়ার্ড। পৌরসভাতে নাকি একটু বেশী করতে হবে- সেখানে ১৫টি গরু লাগবে বলে তারা বায়না ধরলো। আমি মনে মনে হিসেব করলাম ১৮*৯+১৫=১৭৭ টি স্পটে ৩৫ হাজার করে দিলে মোট টাকা লাগে ৬৯ লাখ ৯৫ হাজার। আমি হঠাৎ লক্ষ করলাম টাকার চিন্তায় আমি বাপের নাম ভুলে গেছি। অনেক চেষ্টা করেও আমার জন্মদাতা পিতা মোঃ সামসুদ্দীন মুন্সীর নাম স্মরনে আসছে না।
চিন্তায় আমার ঘুম হলো না সারা রাত। নতুন এমপি-নিয়ম কানুন বা কায়দা কানুন কিছুই জানিনা। পুরোনো এবং অভিজ্ঞ কয়েকজন স্থানীয় নেতাকে ডাকালাম। জিজ্ঞাসা করলাম আগের এমপি সাহেব কি করতেন। তারা সত্য কথা বললো- এমপি সাহেব ১৫ই আগষ্টের শোক দিবসের বেশির ভাগ সময়ই এলাকায় থাকতেন না। ঢাকায় থেকে ৫/১০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিতেন আর বলতেন-তোমরা চালিয়ে নাও-যেভাবে পারো। নেতা কর্মীরা মহা উল্লাসে নেমে পড়তো দোকানে দোকানে। যেভাবে পারতো আদায় করতো যতো খুশি ততো। ব্যবসায়ীরা অসহায়ের মতো তাদের দাবী পুরুনে বাধ্য হতো। পরের দিন আমি দুই উপজেলার সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে নির্দেশ দিলাম- কোন অবস্থাতেই চাঁদাবাজি চলবে না। একটি দোকান থেকে যদি একটাকা চাঁদাও আদায় হয় তবে খবর আছে। আমার নির্দেশ ওষুধের মতো কাজ করলো। আমার এমপি কালীন সময়ে আল্লাহর মেহেরবানীতে পুরো নির্বাচনী এলাকায় ১৫ ই আগষ্ট উপলক্ষে একটি পয়সার চাঁদাবজির অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি।
সিদ্ধান্ত মতে- আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডের পরিবর্তে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে স্পট নির্ধারন করে কাঙ্গালী ভোজের আয়োজন করলাম। ইউনিয়নের স্বচ্ছল নেতা কর্মীদের কয়েকজনকে আহবান করলাম স্ব স্ব ইউনিয়নের দায়িত্ব নিতে এবং তারা তা নিলো অত্যন্ত সন্তুষ্ট চিত্তে। কিন্তু শর্ত ছিলো যে, আমাকে প্রতিটি ইউনিয়নে যেতে হবে এবং আমার উপস্থিতিতেই তারা কাঙ্গালী ভোজের খাদ্য বিতরন করবে। আমি পাল্টা শর্ত দিলাম-যত কষ্ট হোক আমি ১৮টি স্পটেই যাবো তবে প্রতি স্পটে কম করে হলেও ১০ জনকে বঙ্গবন্ধুর জন্য রোজা রাখতে হবে। তারা রাজি হলো। মিলাদ ও কোরানখানি করতে হবে। আমি গিয়ে মোনাজাত পরিচালনা করবো। সকলে মহা আনন্দে রাজী হয়ে গেলো।
১৫ ই আগষ্ট ২০০৯ সালের সকাল ৮ টার সময় আমি বের হলাম। পূর্ব নির্ধারিত সময় সূচী অনুযায়ী প্রতি স্পটে গেলাম। দেখতে পেলাম নির্দেশ অনুযায়ী সবকিছু প্রস্তুত। সেদিন সারাক্ষন অঝোরে মুষলধারে বৃষ্টি নামছিলো-সেকি বৃষ্টি! একেকটি বৃষ্টির ফোটার ওজনে মনে হয় শরীর বুঝি ছিদ্র হয়ে গেলো। সেই বৃষ্টির মধ্যে রেইন কোট গায়ে একটি হোন্ডায় চড়ে সকল ইউনিয়নে গেলাম কেবল চরাঞ্চলের দুইটি বাদে। প্রতিটি স্পটে গিয়ে রোজা মুখে বঙ্গবন্ধুর জন্য মিলাদ পড়লাম-নিজে দোয়া পরিচালনা করলাম। বৃষ্টির পানি আর চোখের পানিতে বঙ্গবন্ধুকে স্মরন করলাম। মনে হয়েছিলো বঙ্গ বন্ধু বোধ হয় আমার সামনে বসা-আমার মাথায় হাত রেখে মুচকী মুচকী হাসছেন এবং কি যেনো বলছেন। সন্ধার পর বাড়ীতে ফিরলাম। জ্বর এলো-কিন্তু কোন কষ্ট নেই। বরং এক অসাধারন তৃপ্তি বোধ আমাকে প্রেরনা জোগালো পরবর্তী শোক দিবস আরো সুচারু এবং সুন্দর ভাবে আয়োজন করার জন্য।
(মতামত একান্তই লেখকের এবং নিউজ ইভেন্ট ২৪ ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির আওতামুক্ত)

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button