ইরাকের তেল সম্পদ লুটপাটে উন্মত্ত পশ্চিমারা

Oilবিশ্বের বৃহত্তম তেল মজুদকারী দেশের মধ্যে ইরাকের অবস্থান পঞ্চম। ২০০৩ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্র দেশটি আক্রমণ করে, তখন বুশ প্রশাসন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, ইরাকের সমৃদ্ধ তেলের খনিসমূহের পুনর্র্নিমাণ এবং দেশটির গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। কিন্তু বাস্তবতা এখন তার উল্টো। ইরাক আক্রমণের ধারণার পেছনে মূল যে বিষয়টি কাজ করেছে তা হচ্ছে দেশটির তেল সম্পদ। তেলের জন্যই যে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক যুদ্ধে জড়িয়ে ছিল এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু মার্কিন আক্রমণের পর দেশটির তেল সম্পদ আসলে কি অবস্থায় রয়েছে, তা ব্যাপকভাবে অজানাই রয়ে গেছে। আমেরিকান রির্পোটার আরিন ব্যানকোর ‘পাইপ ড্রিমস’ শীর্ষক একটি বইয়ে ইরাকের তেল-সমৃদ্ধ অর্ধ-স্বায়ত্বশাসিত কুর্দিস্তানের তেল সম্পদ লুণ্ঠনের চিত্র ফুটে ওঠেছে।
প্রায় ১০০ পৃষ্ঠার এই বইটি সমস্ত নোংরা চুক্তি এবং দুর্নীতির একটি ব্যাপক বিবরণ হয়তো দিতে পারেনি। কিন্তু কি ঘটেছে তা অনুধাবন করার জন্য এটি যথেষ্ট।
ইরাকের বিভিন্ন তথ্য ইঙ্গিত দেয় যে, ২০০৩ সাল থেকে ইরাক তার তেল সম্পদ থেকে ৭০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় করেছে। দেশটির মোট তহবিলের প্রায় ৮০ শতাংশই তেলের ওপর নির্ভরশীল। এই সম্পদ সিংহ ভাগই অদৃশ্য চুক্তির মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে। ব্যানকো কুর্দিস্থান আঞ্চলিক সরকারকে ‘সম্পদ অভিশাপ’ এর একটি চমৎকার উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তেলের প্রবাহ থেকে আসা অর্থ সাধারণ লোকের খুব কমই পৌঁছেছে।
তার মতে, ‘তেল পাওয়া যায়, পাম্প করা হয়, জাহাজে করে পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং বিক্রি হয় (কখনো কখনো চুরি করা হয়)। এতে লাভবান হন সরকার, রাজনীতিবিদ, মন্ত্রীরা এবং বিভিন্ন কোম্পানি। কিন্তু আম জনতা খুব সীমিত উপকৃত হন কিংবা মোটেই হন না।’
‘পাইপ ড্রিমস’ নামক বইটি রচিত হয়েছে বিভিন্ন কোর্ট নথি এবং এনার্জি কোম্পানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইরাকের সরকারি কর্মকর্তা এবং তাদের মধ্যে মধ্যস্বত্বভোগীদের সাক্ষাৎকারের উপর ভিত্তি করে। নরওয়ের ডিএনও, ইউ.কে’র গাল্ফ কিস্টোন পেট্রোলিয়াম এবং তুরস্কের জেনেল এনার্জি’র মতো সফল বিদেশী ফ্রামগুলি ইরাকের কুর্দিস্তানের ছোট ছোট কোম্পানির দিকে মনোনিবেশ করেছে। কিন্তু কুর্দিস্থান কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত উদার শর্ত থেকে উপকৃত হওয়া ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের জন্য প্রচুর সুযোগ ছিল। দেশের অন্যত্র অস্থিরতার বৈপরীত্যে তুলনামূলকভাবে কেআরজি একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হিসাবে দীর্ঘসময় প্রশংসিত হয়েছে। অঞ্চলটিতে সন্ত্রাসী হামলা এবং বিদ্রোহ তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে। কিন্তু ব্যাপক তেলের মজুদের সংমিশ্রণ এবং এ অঞ্চলের আদিবাসী ও পারিবারিক চরিত্রের রাজনীতি ব্যাপক দুর্নীতিকে উৎসাহিত করেছে।
বেনো তার বইয়ে লিখেছেন, ‘এখানে রাজনীতি, ব্যবসা এবং পরিবার একটি অবিচ্ছেদ্য বিষয়। বারজানি এবং তালাবানির দুই প্রতিদ্বন্দ্বী পরিবার দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলকে নিয়ন্ত্রণ করছে। তেল কুর্দিস্তানের জনগণের কাছে আশীর্বাদপুষ্ট প্রমাণিত না হলে এটি অবশ্যই বারজানি ও তালাবানি, তাদের বন্ধু এবং তাদের ব্যবসায়িক সহযোগীদের জন্য নিশ্চতভাবেই অত্যন্ত লোভনীয় ছিল।’
তেল কোম্পানিগুলি পাশাপাশি খেলতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। তারা পরামর্শমূলক ফি এবং চুক্তি পুনর্বিবেচনার নামে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে এটি চালিয়ে যাচ্ছে।
এক পর্যায়ে বইটিতে সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তাদের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। সরকারি অফিস থেকে একটি ঘূর্ণায়মান দরজা অতিক্রম করার মাধ্যমে এসব কর্মকর্তা কিভাবে ইরাকে সক্রিয় এনার্জি সংস্থায় লাভজনক পোস্টের লোভে কাজ করত তা দেখানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ও কন্ডোলিজা রাইস, সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্টিফেন হ্যাডলি, ইরাকে সাবেক রাষ্ট্রদূত রায়ান ক্রকার এবং সাবেক শীর্ষ রাষ্ট্রদূত আলি খাদেরি সম্প্রতি এক্সনমোবিলের বইগুলোতে রয়েছেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button