ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে সারা বিশ্বের তীব্র প্রতিক্রিয়া

worldledমুজাহিদুল ইসলাম: গত মঙ্গলবার জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান এবং সেখানে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের ঘোষণার সাথে সাথে আরব ও আন্তর্জাতিক তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়।
ইতোপূর্বে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল থেকে সতর্ক করা হয় এই ধরনের পদক্ষেপ ইজরাইল ও ফিলিস্তিনের মাঝে গভীর মতানৈক্যের মাত্রা কেবল গভীর থেকে গভীরতর করবে এবং এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে ফেলবে।
সারা বিশ্বের মতামত ও হুমকি উপেক্ষা করে ট্রাম্প জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর প্রতিবাদে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া নিম্নে তুলে ধরা হলো।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত ও শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এর সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং তারা তাদের দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানন্তর করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
জাতিসংঘ
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস ডোনাল ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে ফিলিস্তিন ও ইজরাইলিদের মধ্যকার শান্তি প্রক্রিয়ার হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে বলেছেন, জেরুজালেম আলোচনার সর্বশেষ এজেন্ডা।
গুতেরেস আরো বলেন, দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের কোন বিকল্প নেই এবং জেরুজালেম ফিলিস্তিন ও ইজরাইল উভয়েরই রাজধানী।
ফ্রান্স
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন বলেন, তার দেশ ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে না এবং একে তিনি একক সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত হতাশাব্যাঞ্জক। ফ্রান্স এটাকে সমর্থন করে না এবং এটা আন্তর্জাতিক আইন ও নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের সাথে সাংঘর্ষিক।
ম্যাক্রোন আরো বলেন, আলোচনার মাধ্যমেই ফিলিস্তিনি ও ইজরাইলি জনগণ জেরুজালেমের ব্যাপারে এর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। পাশাপাশি এই অঞ্চলে শান্তি রক্ষার ব্যাপারে আহবান জানান।
ব্রিটেন
ব্রিটেন লেবার পার্টির নেতা জিমি কর্বিন বলেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত এলোপাতাড়ি। এটা শান্তি প্রক্রিয়াকে শেষ করে দিবে। ব্রিটেন সরকারের কর্তব্য এটার নিন্দা জানানো।
কানাডা
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়অ ফিলেন্ড বলেন, ইজরাইলি ও ফিলিস্তিনি সংঘাতের ব্যাপক ভিত্তিক সমাধানের আওতা ছাড়া জেরুজালেম সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
তুরস্ক
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাউইস উগলু জেরুজালেমকে ইজরাইলের রাজধানী ঘোষণা করার মার্কিন সিদ্ধান্তের নিন্দা জানান।
তিনি এক টুইট বার্তায় জানান, আমরা উদ্বেগ অনুভব করছি। জেরুজালেমকে ইজরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান এবং সেখানে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরে আমেরিকান প্রশাসনের দায়িত্বহীন কাজের নিন্দা জানাচ্ছি।
পাশাপাশি তিনি এই সিদ্ধান্তকে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের এ-সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করেন।
সৌদি আরব
সৌদি আরব ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক, দায়িত্বহীন ও নিন্দাযোগ্য বলে আখ্যায়িত করে।
সৌদি রাজকীয় ফরমানে জানানো হয়, সৌদি আরব জেরুজালেমকে ইজরাইলের রাজধানী ঘোষণা করার মার্কিন সিদ্ধান্তের নিন্দা ও গভীর দুঃখ প্রকাশ করছে।
সৌদি আরব আরো বলে, জেরুজালেমে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিষ্ঠিত ও ঐতিহাসিক অধিকারের বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ বড় ধরনের পক্ষপাতিত্ব। সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্তগুলো ফিলিস্তিনি জনগণের এই অধিকারের সমর্থন স্বীকৃতি ও দায়িত্বভার নিয়েছে।
বলা হয়, এটা ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন আনবে না। কেবলমাত্র শান্তি প্রক্রিয়ার চেষ্টাকে বহুগুণ পিছনে ফেলে দিবে। জেরুজালেম বিষয়ে এই সিদ্ধান্ত ঐতিহাসিকভাবে আমেরিকার নিরপেক্ষ অবস্থানের পরিপন্থী, যা ফিলিস্তিনি ও ইজরাইলি সংঘাতকে আরো জটিল করবে।
সৌদি আরব আশা করে, আমেরিকান প্রশাসন এই ধরনের পদক্ষেপ কার্যকর করা হতে পিছু হটবে এবং ফিলিস্তিনিদের বৈধ অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে যোগ দিবে।
মিশর
মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জেরুজালেমকে ইজরাইলের রাজধানী ঘোষণা করার মার্কিন সিদ্ধান্তের নিন্দা জানান এবং এ সংশ্লিষ্ট যে কোন পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন।
একই সাথে শায়খুল আজহার আহমাদ আত্ তায়্যিব, আগামী জানুয়ারীতে আঞ্চলিক ও সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং খ্রিস্টান ও মুসলিম বিশ্বের চিন্তাবিদদের অংশগ্রহণে জেরুজালেম বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের আহবান জানান।
আহমাদ আত্ তায়্যিব জেরুজালেমকে ইজরাইলের রাজধানী ঘোষণা করার মার্কিন সিদ্ধান্ত ও সেখানে দূতাবাস স্থানান্তরকরণের ভয়াবহ পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করেন।
তিনি মনে করেন, জেরুজালেমে থাকা আরব ও ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি এটা স্পষ্ট হুমকি।
ইরান
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তেহরান জেরুজালেমকে ইজরাইলের রাজধানী ঘোষণা করার মার্কিন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানায়। এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক সকল সিদ্ধান্তের পরিপন্থী এবং হুঁশিয়ারী প্রদান করে যে, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের কারণে যে কোন ধরণের সংঘাত ও চরমপন্থার দায় ইজরাইল ও আমেরিকাকেই নিতে হবে।
পাশাপাশি জেরুজালেম বিষয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রতিরোধে ইসলামী বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানায়। এর আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামিনী বলেন, আমেরিকা ইজরাইলের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য যুদ্ধ উস্কে দেয়া ও এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে ফেলার চেষ্টা করছে।
কাতার
কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মাদ বিন আবদুর রহমান আল সানী বলেন, জেরুজালেমকে ইজরাইলের রাজধানী ঘোষণা করার মার্কিন সিদ্ধান্ত চরম উস্কানীমূলক এবং সকল শান্তি প্রক্রিয়াকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার শামিল।
তিনি আরও বলেন, জেরুজালেমের এই বিষয়টা কেবল ফিলিস্তিনি জনগণের নয়; বরং পুরো আরব ও ইসলামী জনগণের।
লেবানন
লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন বলেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত শান্তি প্রক্রিয়া ও এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।
মাহমুদ আব্বাস
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, জেরুজালেমকে ইজরাইলের রাজধানী ঘোষণা করার মার্কিন সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনের স্থায়ী রাজধানী এবং খ্রিস্টান ও মুসলিমদের ইতিহাস ও পরিচয়ে কোন পরিবর্তনই আনবে না।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, জেরুজালেম তার আরব পরিচয়ের যে কোন সিদ্ধান্ত থেকেও প্রাচীন এবং ফিলিস্তিনি জনগণ যে কোন ধরণের ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করতে পারবে বলে তিনি তার আস্থা প্রকাশ করেন।
হামাস
ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন (হামাস) বলে, জেরুজালেমকে ইজরাইলের রাজধানী ঘোষণা করার মার্কিন সিদ্ধান্ত আমেরিকার স্বার্থের জন্য জাহান্নামের দরজা খুলে দিবে এবং হামাস এই ঘোষণাকে ফিলিস্তিনি জনগণের উপর স্পষ্ট আগ্রাসন হিসেবে বিবেচনা করে।
অন্যদিকে মাহমুদ আব্বাস ও হানিয়া এক বিবৃতিতে জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহবান জানান।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button