আমেরিকার প্রথম মসজিদ

Mosqueমুসলিম অভিবাসীদের জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ড্যাকোটায় একটি বিশেষ স্থান রয়েছে যার রয়েছে ঐতিহাসিক মর্যাদা। মুসলিম অধিবাসীরা আমেরিকায় আসা শুরু করলে তারা এমন একটি জায়গা খুঁজছিল যাকে তারা তাদের ঘর বলতে পারে। এবং তারা সে জায়গাটি খুঁজে পায় এই নর্থ ড্যাকোটায়। প্রথম আগতদের চোখে পশ্চিম নর্থ ড্যাকোটার একটি স্মৃতিচিহ্ন। এটি ছয় মাইল দূরত্বের স্ট্যানলির মানুষের কাছেও ছিল অপরিচিত। অপরিচিত ছিল তাদের কাছেও যারা সেখানে তাদের পুর্বপুরুষদের উপসনা করতো এবং তাদের কেউ মারা গেলে সেখানে কবর দিত।
এটিই আমেরিকার প্রথম মসজিদ: ফাদার উইলিয়াম শেরম্যান যিনি কিনা প্রথম মুসলিম বসবাসকারীদের নিয়ে একটি বই লিখেন, তাতে তিনি বর্ণনা করেন, ‘বসতি গড়ে ওঠার সময়ে মানুষ এখানে আসতে শুরু করে উন্মুক্ত ভূমির কারণে।’  বর্তমানে লেবানন যেমন, তেমন ভূমির আশাতেই ঔপনিবেশিকরা এখানে ছুটে আসে। লেবানন অঞ্চলটি ছিল সিরিয়ায় কিন্তু ওসমানী খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত।  প্রায় তিনশত মুসলিম পরিবার নর্থ ড্যাকোটায় আসেন। সেসব অধিবাসীদের মাঝে ছিলেন আলী ওমর, যিনি ওসমানী খিলাফতের সৈন্য ছিল কিন্তু ওসমানী খিলাফতের হয়ে যুদ্ধ করতে রাজি ছিলেন না। তাই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। তিনি ১৯০৯ সালে নর্থ ডাকোটায় আসেন।  কিন্তু তার আসার আরো ২০ বছর পর আমেরিকায় প্রথম কোনো মসজিদ স্থাপিত হয়।
কারণ শুরুর দিকে তারা পরিপূর্ণ গোষ্ঠী হয়ে ওঠতে পারেনি যার ফলে একটি মসজিদ স্থাপন করা যায়। মসজিদটি প্রথম স্থাপন করা হয় ১৯২৯ সালে যেখানে মুসলিম ঔপনিবেশিকরা তাদের ধর্মের চর্চা করতো।
স্থায়ী কোনো ইমাম ছাড়াই পরিচালিত হতে থাকা মসজিদটি ১৯৩০ সালের দিকে ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। এর অন্যতম কারণ ছিল খরা ও অর্থনৈতিক মন্দা যার প্রভাব মুসলিম জনসংখ্যার ওপর পড়ে। সেজন্য অনেকেই পশ্চিম উপকূলের দিকে পা বাড়ায় কিছু কাজ পাবার আশায়। তারপর অনেকেই ধরে নিয়েছিল আদি এই মসজিদটা বন্ধ হয়ে গেছে এবং প্রার্থনাকারীরা নর্থ ড্যাকোটার এই ঐতিহাসিক স্থাপনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু ৮০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর, মুসলিমদের আনাগোনায় এ জায়গাটি আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পায়।  মুসলিম ঔপনিবেশিকদের উত্তরসƒরীরা আবার এ ভূমির বুকে পদচিহ্ন ফেলেন। তারা জড়ো হন উইলস্টন, বিসমার্ক, রেড ভ্যালীতে। তারপর থেকে এই অধিবাসীরা অন্য আদি নর্থ ডাকোটাবাসীদের সাথে মিলেমিশে বসবাস করে ভিন্ন নজির সৃষ্টি করে।
লম্বা ইতিহাস থাকা সত্তেও নর্থ ড্যাকোটায় এখন মুসলিম বিরোধী মানসিকতা গড়ে ওঠছে। ফার্গো তে লুথেরান সোস্যাল সার্ভিস নামের একটি সংগঠন শরনার্থীদেরকে পূণর্বাসনে সহযোগিতা করায় রোষানলের স্বীকার হয়েছে। একটি সোমালি মালিকানাধীন রেস্তোরাঁয় বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে এবং ভবনের দেয়ালে রঙ দিয়ে নাৎসী সমর্থনের উক্তি একে দেওয়া হয়। সারাদশে জুড়ে থাকা মুসলিমরা প্রায়ই এখানে সফর করে আমেরিকায় প্রথম স্থাপিত এই মসজিদটি একনজর দেখতে। মসজিদটি এখন রক্ষণাবেক্ষণ করেন এই এলাকায় আদি বসতি স্থাপনকারী মুসলিমদের সন্তান ও তাদের নাতি-নাতনিরা। এ মসজিদটিকে একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে নর্থ ড্যাকোটা সরকার যেন স্বীকৃতি দেয় তারা সে ব্যাপারে আলোচনা করছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতারা।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button