যুক্তরাষ্ট্রে গোপন পরমাণু মজুদের পরিমাণ কেউ জানে না

বর্তমান সভ্যতা হলো মার্কেট-মিডিয়া আর মিলিটারির সমন্বয়ে গঠিত পরমাণু যুগের সময়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকার পর সামগ্রিক জাতিগুলোর মধ্যে এখনও কোনো বড় যুদ্ধ হয়নি। অবশ্য অধিকাংশ বিশেষজ্ঞেরই ধারণা, যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় তবে সেটা হবে পরমাণু যুগের ইন্তেকাল, অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে মানবজাতির শেষ হয়ে যাবে। অবশ্য যুদ্ধ না লাগলেও পরমাণু সমৃদ্ধ দেশগুলো প্রতিনিয়তই পরমাণু সমৃদ্ধ করতে ব্যস্ত। আর এই পরমাণু প্রকল্পে এগিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির কাছে কি পরিমাণ পারমাণবিক বোমা মজুদ আছে তা কেউ জানে না।
১৯৮৬ সালের চেরনোবিল এবং ২০১১ সালে জাপানের ফুকশিমা পারমাণবিক প্ল্যান্ট দুর্ঘটনা বেশ আলোচিত। পারমাণবিক দুর্ঘটনা বলতেই আমরা এই ঘটনাগুলোকে বুঝে থাকি। কিন্তু সম্প্রতি আমেরিকার বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা ম্যাকক্লাথি এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বিশ্বের বিভিন্ন পরমাণু কেন্দ্রে দুর্ঘটনার কারণে মৃত কর্মীদের সংখ্যা নিয়ে। এক বছরের পরিশ্রমের মাধ্যমে তারা এই তথ্য সংগ্রহ করে। তাদের প্রাথমিক তথ্য মতে, গত সাত দশকে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু প্রকল্পে প্রায় ৩৩ হাজার ৪৮০ জন কর্মী মারা গিয়েছে। এই বিশালসংখ্যক কর্মীর মধ্যে অধিকাংশই অধিক রেডিয়েশনের কারণে মারা গেছে বলে প্রকাশনীটির মতামত।
শুধু তাই নয়, রিপোর্ট মোতাবেক মৃত কর্মীদের বাইরে এক লক্ষাধিক কর্মী ক্যান্সারসহ বিভিন্ন দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক সংক্রান্ত অবিরত তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে এ বিষয়ে জানা যায়। এর বাইরেও প্রকাশনীটির পক্ষ থেকে নূন্যতম শতাধিক পরমাণু কর্মীর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করা হয়। তাদের কাছ থেকেও অনেক তথ্য পাওয়া যায়, যা অনেক সময় সরকারের বিভিন্ন দফতর ঘুরেও জানা যায় না।
প্রথমদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু সংক্রান্ত গবেষণা কমিটি প্রতি বছর তিন হাজার কর্মীর জন্য ১২০ মিলিয়ন ডলার বাজেট রেখেছিল। কিন্তু সেই কমিটির সিদ্ধান্ত নেয়ার ১৪ বছর পর দেখা যাচ্ছে, সরকার মূলত বছরে মাত্র ১২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে আনুমানিক ৫৩ হাজার পরমাণু কর্মীর পেছনে। অনুসন্ধানে অংশগ্রহণ করা লিন্ডসে ওয়াইজ এ বিষয়ে বলেন, ‘এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, অধিকাংশ কর্মীই এই প্রকল্পগুলোতে কাজ করার সময় অধিক রেডিয়েশনসহ অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসেন। অনেক সময় তারা জানেন সেটা এবং অনেক সময় না জেনেই তারা ওই বিষাক্ত পদার্থ নাড়াচাড়া করেন। তারা এতদিন জানতোই না যে, এই কাজের ফলে তারা আক্রান্ত হচ্ছেন। ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি পত্রিকায় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ পাবার পর কর্মীদের মধ্যে কিছুটা সচেতনতা দেখা দিয়েছে।’
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র সরকার পরমাণু প্রকল্পে ব্যয় সংকুলান করার জন্য কর্মীদের ছাটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকি কর্মীরা চাকরি থেকে অবসর নেবার পর যে সুযোগ সুবিধা পায় তাও কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। গত ২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এক লাখ ছিয়াশি হাজার কর্মী সরাসরি রেডিয়েশন দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং দেশটির গণমাধ্যমগুলো এই সংবাদ বেমালুম চেপে যাচ্ছে এবং অন্য দেশের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button