রোজা রাখার ওপর চীনা নিষেধাজ্ঞায় ক্ষুব্ধ মুসলিম বিশ্ব

Chainaজিনজিয়াং অঞ্চলের মুসলমানদের পবিত্র রমযান মাসে রোজা রাখার ও মসজিদে নামায আদায়ের ওপর চীনা সরকার আরোপিত নিষেধাজ্ঞার সৌদী জনগণ ও সৌদি আরবে অন্যান্য দেশের বাসিন্দারা কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন।
চীনা নিপীড়ন নীতির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেয়ার সৌদি আরব ও অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোকে তারা আহ্বান জানান। চীনা পণ্য বর্জনেরও তারা আহ্বান জানান।
৫৭ সদস্য সংবলিত ওআইসি ইতিমধ্যে বলেছে, বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য তারা চীনা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। একটি সূত্র আরব নিউজকে জানায়, ওআইসি চীনা জবাবের অপেক্ষায় রয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়, জিনজিয়াং অঞ্চলে রমযান মাসে মুসলিম শিক্ষার্থী ও সরকারি কর্মচারীদের সব ধরনের ধর্মীয় কর্মকান্ডের ওপর চীনা কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। জিনজিয়াংয়ের বাসিন্দাদের ৪৫ শতাংশ মুসলিম।
ওয়ার্ল্ড এসেম্বলি অব মুসলিম ইয়ুথ-এর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ বাদাহদাহ জানান, চীনা সরকার ইসলামবিরোধী নীতি এ অঞ্চলে পেছনের কয়েক বছর ধরে আরোপ করে চলেছে। তিনি বলেন, চীন বাইরের দুনিয়ার কাছে উন্মুক্ত দেশ নয়। মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের নিপীড়ন নীতি সম্বন্ধে আমরা অবহিত হয়েছি সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। তিনি আরো বলেন, মুসলমানদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদ ব্যর্থ থেকেছে।
আরব নিউজকে তিনি বলেন, আমাদের মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ্ শিক্ষায় আমাদের অবশ্যই ফিরে যেতে হবে। এখানেই সব সমস্যার আমরা সমাধান খুঁজবো। অত্যাচারীরা দুনিয়া থেকে একদিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। ইতিহাস এই শিক্ষাই দেয়। বাদাহ্দাহ্ বলেন, ধর্ম পালনের ও নিজস্ব মত পোষণের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদসম্মত অধিকার চীনা কর্তৃপক্ষ লঙ্ঘন করেছে।
রোজা রাখার মাধ্যমে জিনজিয়াংয়ের মুসলমানরা মৌলবাদীতে পরিণত হবেন- চীনা কর্তৃপক্ষের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বাদাহ্দাহ্ বলেন, চীনারা সর্বোচ্চ মাত্রার অন্যায় করছে। তিনি বলেন, চীনা কর্তৃপক্ষের ইসলামবিরোধী মনোভাব তাদের কর্মকান্ডে স্পষ্ট প্রকাশ পেয়েছে। ইসলামের অনুসারীদের তারা সন্ত্রাসী মনে করে। তাদের ইসলামবিদ্বেষী কার্যকলাপ চলতে দেয়া হলে মুসলমানদের হজ্ব ও উমরাহ্ পালনে তারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। চীনাদের এই অন্যায় ও অমানবিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে দুনিয়ার মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং এসব অন্যায় কর্মকান্ডের সমাপ্তি ঘটাতে হবে।
বিশ্বের দেড়শ’ কোটি মুসলমানের বিশাল শক্তি প্রয়োগে মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির শত্রুর এই অপকৌশল আমাদের নস্যাৎ করতে হবে- আহ্বান জানিয়ে বাদাহ্দাহ্ বলেন, এর জন্য আমাদের আল্লাহ্ মদদ চাইতে হবে ও মদদ চাওয়ার প্রয়োজনে প্রকৃত মুসলমানে আমাদের পরিণত হতে হবে।
চীনা ও অন্যান্য স্থানের সংখ্যালঘু মুসলমানের সাহায্যে এগিয়ে আসার সৌদি আরব ও ওআইসিকে আহ্বান জানান, সৌদী ইঞ্জিনিয়ার ফুয়াদ তৌফিক। আরব নিউজকে তিনি বলেন, ইসলাম ও সৌদী পতাকার অবমাননাকারী নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে যেমন কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল সৌদী সরকার, তেমনি শক্ত অবস্থান নিতে হবে চীনের বিরুদ্ধে যতক্ষণ তাদের মুসলিম বিদ্বেষী ভূমিকা তারা পুনর্বিবেচনা না করে। পৃথিবীজুড়ে মুসলমানদের ক্রমানতিশীল অবস্থার জন্য ক্ষোপ প্রকাশ করেন ফুয়াদ তৌফিক।
তিনি বলেন, বড় দুর্ভাগ্যজনক যে কিছু কিছু মুসলিম সরকারও অনৈসলামিক পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আল্লাহ্র কিতাবে আমাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে-প্রতিকূল ও বিঘœসংকুল পরিস্থিতিতে মুসলমানরা নিজেদের বিপদ মুক্তির জন্য আল্লাহ্র মদদ খুব নিকটবর্তী দেখতে পাবেন। কিন্তু তার জন্য ধৈর্য ধারণ করতে হবে।
ব্লগার হাশমত হোসেন বলেন, মুসলিম দেশগুলোকে চীনা পণ্য আমদানি বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, ইসলামী জীবনযাপনের মুসলমানের মৌলিক অধিকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হচ্ছে সন্ত্রাসের নামান্তর। অন্য এক ব্লগার বলেন, তাদের নিজেদের স্বার্থে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ও মুসলমানদের কাছে ক্ষমা চাইতে চীনাদের এগিয়ে আসতে হবে।
-আরব নিউজ অবলম্বনে সৈয়দ আহমদ হোসেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button