অবরোধের প্রথম দিনে নিহত ৫ : সহিংসতায় আহত তিন শতাধিক

Oboবিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের প্রথম দফা নজিরবিহীন অবরোধের পর দ্বিতীয় দফার প্রথম দিন শনিবার প্রাণহানি, ব্যাপক ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে। ঝিনাইদহে পুলিশের গুলিতে শিবিরকর্মীসহ পাঁচজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া এদিন অন্তত ৩০ জেলায় সংঘর্ষ-সহিংস ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে ঝিনাইদহে পুলিশের গুলিতে শিবির কর্মী, পাবনার ঈশ্বরদীতে অবরোধকারীদের ওপর ট্রাক উঠিয়ে দিলে যুবদল কর্মী ও রাজধানীর মালিবাগে বাস লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোল বোমা থেকে পালাতে গিয়ে চাপা পড়ে এক পথচারি নিহত হয়। অন্যদিকে অবরোধকারীদের ধাওয়ার মুখে পালাতে গিয়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় পিকআপ উল্টে একজন ও বগুড়ায় বাস থেকে পড়ে আরেক জন নিহত হয়।
এদিকে অবরোধের প্রথম দিনে গাজীপুরে বিএনপির জেলা অফিস এবং গাইবান্ধার পলাশবাড়ী ও নাটোরে নির্বাচন অফিসে আগুন দেয়া হয়। যশোরে খান টিপু সুলতান ও নাটোরে এমপির গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া এ সময় ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দেয় ট্রেনের শিডিউলে। কোনো ট্রেনই গন্তব্যে পৌঁছতে ও স্টেশন থেকে ছাড়তে পারেনি।
এর আগে প্রথম দফা অবরোধে সহিংস ঘটনায় ২৬ জন নিহত হয়। গতকালের ৫ জনের প্রাণহানির পর দু’দফা অবরোধ কর্মসূচিতে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ৩১ জনে। এর মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতেই গতকালের এক জনসহ নিহত হন বিএনপি-জামায়াতের ৯ নেতাকর্মী।
এদিকে দ্বিতীয় দফা অবরোধের প্রথম দিনে গতকালই বিভিন্ন স্থানে ট্রেনের শিডিউলে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে। এছাড়া এদিনও বিভিন্ন জায়গায় অবরোধকারীরা রেলপথ অবরোধ ও অগ্নিসংযোগ করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
অবরোধের সকালেই চট্টগ্রামের একে খান মোড় এলাকায় রেললাইনে অবরোধকারীরা অবস্থান নিলে বন্দরনগরীর সঙ্গে ঢাকা ও সিলেটের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে কয়েকটি ট্রেন আটকে যায়। তিন ঘণ্টা পর পুলিশ অবরোধকারীদের সরিয়ে দিলে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
এছাড়া চাঁদপুর, লালমনিরহাট, নাটোর ও সিলেটে রেললাইন অবরোধ করে অবস্থান নেন বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা।
এভাবে বিভিন্ন স্থানে রেললাইনে আগুন দেয়ায় ট্রেন চলেছে ধীরগতিতে। ফলে সময় ধরে চলতে পারেনি ট্রেন।
এছাড়া গতকাল সকালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা দেরিতে কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছায় বলে জানা গেছে।
কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. খায়রুল বশীর জানান, উত্তরবঙ্গের ট্রেন একতা, রংপুর এক্সপ্রেস ঠিক সময়ে স্টেশনে আসেনি।
চট্টগ্রামের তূর্ণা নিশিথা সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা থাকলেও তা সাড়ে ৯টায় স্টেশনে আসে।
সকালেই এসব ট্রেন আবার ঢাকা ছাড়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। বিকালের দিকে এসব ট্রেন ছাড়ার আশা করছে কর্তৃপক্ষ।
ট্রেন চললেও বিভিন্ন স্থানে অবরোধকারীদের অবস্থানের কারণে সময়সূচি ধরে রাখতে পারছে না। লঞ্চ ও বিমান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও যাত্রীসংখ্যা ছিল কম।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গত সপ্তাহে তিন দিন অবরোধের পর গতকাল সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টার একই কর্মসূচি শুরু করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল।
অবরোধের প্রথম দিন গতকাল সকালেই বিভিন্ন জায়গায় মাঠে নেমে পড়ে অবরোধকারীরা। পরে সংঘর্ষ, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, সিলেট, খুলনা, ঝিনাইদহ, বগুড়া, মেহেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, সিরাজগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, নারায়ণগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নাটোর, চাঁদপুর, ময়মনসিংহ, গাইবান্ধা, যশোর, মুন্সীগঞ্জ, কক্সবাজার, গাজীপুর, নীলফামারী, জামালপুরসহ অন্তত ৩০ জেলায়। এসব ঘটনায় আহত হন দু’শতাধিক নেতাকর্মী।
এর মধ্যে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে পুলিশের গুলিতে এক শিবিরকর্মী নিহত হওয়া ছাড়াও আহত হন আরও অন্তত ২৫ জন। অনুরূপ সংঘর্ষে মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ২৫ ও সিরাজগঞ্জে আহত হন একই দলের আরও ১০ নেতাকর্মী।
বগুড়ার শেরপুর ও শাহজাহানপুরে পুলিশের হামলায় আহত হন অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। মেহেরপুরে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে আহত হন অন্তত ১২ জন। ভাংচুর করা হয় ৮টি বাড়ি। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া। গুলিবিদ্ধ হন ১৫ বিরোধী নেতাকর্মী।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button