বাবুর্চিকে নির্যাতনের অভিযোগ স্ত্রীর বিরুদ্ধে

দেবযানীর পর রবি থাপার

Robiদেবযানী খোবরাগাড়ের পর এবার রবি থাপার৷ পরিচারকের পর এবার শেফের নিগ্রহে নাম জড়াল ভারতীয় কূটনীতিকের৷ তবে অভিযোগ সরাসরি তার বিরুদ্ধে নয়, তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। কলকাতার এই সময় পত্রিকা এ খবর জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে খবর, রবি থাপারের স্ত্রী শর্মিলার বিরুদ্ধে তাদের বাড়ির শেফকে নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে৷ আর তার জেরেই নিউজিল্যান্ডের ভারতীয় হাই কমিশনারকে দিল্লিতে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ রবি থাপারের অবশ্য দাবি, মায়ের দেখাশোনা করার জন্যই দেশে ফিরছেন তিনি৷
ঘটনাটি মে মাসের গোড়ার দিকের৷ নিউজিল্যান্ডের মিডিয়া সূত্রে খবর, এক দিন রাতে হঠাৎই থাপারের বাড়ির শেফ ওয়েলিংটনে কূটনীতিকের বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাঁটা দেন৷ প্রায় ২০ কিলোমিটার হেঁটে আসার পর তার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেলে এক পথচারী তাকে উদ্ধার করে। ওই ব্যক্তির সাহায্য নিয়েই থানায় যান শেফ৷ পরে ওয়েলিংটনের রাত্রিবাসে বেশ কয়েক রাত কাটান তিনি৷
পুলিশ সূত্রে খবর, শেফ জানিয়েছেন, থাপারের বাড়িতে তার সাথে ক্রীতদাসের মতো ব্যবহার করা হতো৷ শর্মিলা তাকে যারপরনাই হেনস্থা করতেন৷ সরকারি তরফেও কমিশনার ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা স্বীকার করা হয়েছে৷
তবে, ওই শেফ লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে চাননি, আর তাই পুলিশও কূটনীতিক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি৷ পুলিশ নাকি এ ব্যাপারে নিউজিল্যান্ডের ‘মিনিস্ট্রি অফ ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড’ (এমএফএটি)-এর সাথেও যোগাযোগ করে৷
এমএফএটি তখন বিষয়টি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়৷ পরে এমএফএটি-র সাথে যোগাযোগ করলে অবশ্য জানা যায়, ভারতীয় হাই কমিশনার যে নিউজিল্যান্ড ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, সে খবর তারা পেয়েছেন৷ তবে তাদের বিষয়টি নিয়ে বেশি অগ্রসর হতে বারণ করা হয়েছে৷ আর তাই কূটনীতিকের ব্যাপারে যা ব্যবস্থা নেয়ার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই নেবে৷ তবে, ভারতীয় সেই শেফ দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন এবং ভারত সরকারই তার ফেরার ব্যবস্থা করে বলে জানায় এমএফএটি৷
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ জানান, ১০ মে বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের গোচরে আসে৷ কারণ সেদিনই হাই কমিশনার জানতে পারে, সার্ভিস স্টাফ মেম্বারদের মধ্যে একজন নিখোঁজ৷ হাইকমিশন সাথে সাথে নিউজিল্যান্ডের পুলিশ ও পররাষ্ট্র দফতরের কার্যালয়ে যোগাযোগ করে৷ জানা যায়, ওই শেফ ১১ মে পুলিশের কাছে গিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ জানিয়েছেন৷ বিকাশের দাবি, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে সাথে সাথে দিল্লি থেকে নিউজিল্যান্ডে একটি দল পাঠায়৷ তাদের বিষয়টি সম্পর্কে বিশদে খোঁজ খবর নেয়া ও নিরপেক্ষ তদন্ত চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছিল৷ বিষয়টির মীমাংসার জন্য দলটি নিউজিল্যান্ড প্রশাসনের সাথে কথাবার্তা বলে৷
অভিযোগকারী ওই শেফ দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন, তার ফেরার ব্যবস্থাও করেছে ভারতীয় দলটি৷ ২৮ মে দেশে ফিরেছেন তিনি৷’ বিকাশের দাবি, তদন্তকারী ওই দলের রিপোর্টের ভিত্তিতেই থাপারকে দিল্লিতে ফেরানোর ব্যবস্থা করে সরকার৷
রবি থাপার নিজে কিন্তু অন্য কথা বলছেন৷ শনিবার সকালে তাদের ওয়েলিংটনের বাড়ির সামনে একটি গাড়ি দেখা গেছে, তাতে স্পষ্ট, বাড়ি ছাড়ছেন তারা৷ শর্মিলা পুলিশ বা সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলতে চাননি৷ তবে, রবির দাবি, ‘আমি মায়ের দেখভাল করার জন্য দেশে ফিরছি, কারণ গত বছরই আমার বাবা মারা গেছেন৷’
আর তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে নিগ্রহের অভিযোগ?
রবির জবাব, ‘এমন কিছু মানুষ আছেন যারা পরিচিতি পান না তেমন শিক্ষিত নন বা প্রথমবার বিদেশে এসেছেন, তারা এই ধরনের সুযোগ ব্যবহার করে অন্য সংস্থা থেকে সহমর্মিতা কুড়োনোর চেষ্টা করেন৷ শর্মিলা একজন অভিজ্ঞ কূটনীতিকের স্ত্রী৷ তিনি একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে কোনোভাবেই হেনস্থা করতে পারেন না৷’
রবি যাই দাবি করুন না কেন, তার এই ঘটনা দেবযানী খোবরাগাড়ের স্মৃতি উস্কে দিচ্ছে৷ নিউইয়র্কে নিযুক্ত ভারতীয় এই কূটনীতিকের বিরুদ্ধে জোর করে বেশি খাটানো ও কম বেতন দেয়ার অভিযোগ এনেছিলেন তার পরিচারিকা৷ দেবযানীর বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ ছিল মিথ্যে তথ্য ও ভিসার সাহায্যে ওই পরিচারিকাকে নিউইয়র্কে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি৷ পরিচারিকার অভিযোগ পাওয়ার পর দিনই দেবযানীকে গ্রেফতার করে মার্কিন পুলিশ৷
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই প্রতিবাদ জানায় ভারতীয় প্রশাসন৷ দেবযানীকে বদলি করে জাতিসঙ্ঘে নিয়োগ করা হয়৷ তবে দেবযানীর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে দীর্ঘদিন রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলেছে৷

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button