অপ্রতিরোধ্য অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে উঠছে চীন

Chainaএখন আর মার্কিন মুল্লুক নয়, বিশ্বের অর্থনৈতিক মোড়লের আসনের দাবিদার হিসেবে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে চীন। মাও সেতুংয়ের কমিউনিজম শাসনের খোলস থেকে বেরিয়ে সংস্কার বিপ্লবের ৩০ বছরেই দেশটি পৌঁছে গেছে উন্নতির শিখরে। চোখধাঁধানো উন্নয়ন চীনকে তুলে এনেছে বিশ্বের অর্থনৈতিক নেতৃত্বের আসনে। বর্তমান মতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার (সিপিসি) বিভিন্ন স্তরের কর্তাব্যক্তিদের দাবি, সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন চীনকেই মানুষ বিশ্বের নয়া শক্তি হিসেবে দেখবে। পরিশ্রম, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা আর সঠিক নেতৃত্বই দেশটির দারিদ্র্য দূরীকরণে নিরলসভাবে কাজ করেছে। দুর্নীতি আর দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। সে ল্যকে সামনে রেখেই দেশটির বর্তমান নেতৃত্ব নিজেদেরকে বৈশ্বিক অর্থনীতির অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হিসেবে দাঁড় করাতে মরিয়া। নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে দেশটি এখন অর্থনৈতিক শক্তির দিক থেকে প্রথম স্থানে এসেছে বলে জানিয়েছেন তারা।
এ দিকে চীনের মতাসীন দল সিপিসির নেতৃবৃন্দ ও সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশ্নে তারা বাংলাদেশের সাথে আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী। বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের সাংবাদিক প্রতিনিধিদলের সাথে মতবিনিময়কালে তারা এ আগ্রহের কথা জানান। প্রতিনিধিদলটি দেশটির সরকারের আমন্ত্রণে গত ২৩ থেকে ৩০ নভেম্বর চীনে অবস্থান করে। চীনের রাজধানী বেইজিং, ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিং ও চা শিল্পের রাজধানী পুউর শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিদর্শনকালে তারা চীনের এ আগ্রহের কথা জানান।
দেশটির মতাসীন দল সিপিসির নেতৃবৃন্দ ও সরকারি কর্মকর্তারা এ প্রতিনিধিদলের সাথে আলাপকালে বলেছেন, বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের সাথে তাদের মিল রয়েছে। বাংলাদেশও ইতোমধ্যে উঠে দাঁড়ানার চেষ্টা করছে। জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশও সমস্যাগ্রস্ত। তাই বাড়তি জনসংখ্যাকে সমস্যা হিসেবে নয়, বরং এ জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করে আগামী দিনে দেশকে এগিয়ে নেয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে একসাথে কাজ করতে চায় চীন। বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করতে আগ্রহী চীন। দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত, ব্যবসায়-বাণিজ্য, জ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়া স্টাডিজ ইউনান অ্যাকাডেমি অব সোস্যাল সায়েন্সেসের (আইএসএএস) সহকারী পরিচালক অধ্যাপক ইয়ান সিলিং। তিনি বলেন, বাংলাদেশও ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। সে দেশের অনেকের সাথে আমার আলাপ হয়েছে, একসাথে কাজ করেছি। তারা মেধাবী। পরিকল্পনা ঠিক রেখে কাজ করলে তারা দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে। এ ছাড়া নিজেদের উন্নতির পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি রয়েছে তাদের বিশেষ নজর। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও লাউসসহ প্রতিবেশী ও কাছের দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে আগের চেয়ে অনেক যতœশীল চীন। এসব দেশে নিজেদের ব্যবসায়ের ত্রে তৈরিতে অনেকটাই আন্তরিক। দ জনশক্তি, প্রযুক্তিসহ নানা বিষয়ে প্রতিবেশীদের সহযোগিতা করে ইতোমধ্যে তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনও করেছে বলে বিশ্বাস করেন ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (এনডিআরসি) প্রধান কর্মকর্তা হু হাও।
বর্তমান বিশ্বে চীনকেই সবচেয়ে বড় শক্তি বলে দাবি করে দেশটির বিভিন্ন পর্যায়ে এসব কর্তাব্যক্তি বলছেন, সেই দিন খুব বেশি দূরে নেই, যেদিন চীনকেই বিশ্বের মানুষ অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হিসেবে জানবে। চীন বরাবরই বড় শক্তি, আর বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড়। কিন্তু কখনোই দখলবাজ নয়। অন্যের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতিও চীন শ্রদ্ধাশীল। প্রতিবেশী দেশসহ সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে রাষ্ট্র পরিচালনায় অহিংস নীতিতে বিশ্বাসী এক-চীন নীতি ও ভাবধারা অনেকটাই স্পষ্ট। তারা বলেছেন, পরিশ্রম ও মানবসম্পদের সঠিক ব্যবহার করে আজ বিশ্বে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছে চীন। এই ধারা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে।
এ বিষয়ে চীন সরকারের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট গুয়ো ইয়োজাউ চীন সফররত বাংলাদেশের সাংবাদিক প্রতিনিধিদলের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, চীনের শক্তি প্রমাণিত সত্য। আমেরিকা বড় শক্তি, কিন্তু চীনও বরাবরই বড় শক্তিই ছিল। তিনি আমেরিকার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, অন্য অনেকের মতো চীন কারো স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে হস্তপে করে না। গুয়ো বলেন, চীন সবেেত্র বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। অন্যদের সাথে সুসম্পর্ক, ব্যবসায়-বাণিজ্য, পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবেশ বজায় রেখে চলার নীতিতে বিশ্বাসী। এ প্রতিনিধিদলের কাছে নিজ দেশের শক্তি ও নীতিগুলো তুলে ধরে গুয়ো বলেন, আমরা যখন কারো দিকে সম্পর্কের হাত বাড়াই, সেখানে শুধুই নিজেদের স্বার্থ দেখি না। অপর দেশটির স্বার্থও আমরা বিবেচনায় রাখি, যাতে এই সম্পর্ক সুদৃঢ়, সুদূরপ্রসারী হয় এবং সেই দেশটিও চীনের প্রতি আস্থাশীল ও শ্রদ্ধাশীল থাকে। ফলে ব্যবসায়-বাণিজ্য প্রসারিত হবে। উভয় দেশই এতে উপকৃত হবে এমনটাই মনে করেন তিনি।
বেইজিংয়ে ইন্টারন্যাশনাল প্রভার্টি রিডাকশন সেন্টার ইন চায়নার (আইপিআরসিসি) প্রধান দফতরে আইপিআরসিসির ডেপুটি ডিরেক্টর অধ্যাপক হুয়াং চেনগুই চীনের শক্তির রহস্য ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে বলেন, চীনের জনসংখ্যা অনেক। কখনো হয়তো সেটিকে সমস্যাও ভাবা হয়েছে। কিন্তু এখন সেই জনসংখ্যাই দতার সাথে ধীরে ধীরে সম্পদে পরিণত হচ্ছে। পরিশ্রম, সঠিক কূটনীতিই শুধু নয়, দারিদ্র্য দূরীকরণেও কাজ করেছে, লড়াই করেছে চীন। সেগুলো কাটিয়েই দেশটি এখন অর্থনৈতিক শক্তির দিক থেকে প্রথম স্থানে এসেছে। অন্য কিছু শক্তিশালী রাষ্ট্রের মতো অন্যের সম্পদে নজর দেয় না চীন। অর্থাৎ অন্যের সম্পদের দিকে নজর দেয় না চীন। বরং সব কিছুই খেটে অর্জন করে। তা ছাড়া যেকোনো সুবিধাবঞ্চিতদের বিষয়ে চীন সরকার অন্য অনেক দেশের চেয়ে অধিক মনোযোগী। দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দেখভাল করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তাদের প্রতি সহযোগিতার ধরনটি হলো তাদের যোগ্য করে তোলা। এমনভাবে সাহায্য করা যাতে তারা দেশের বোঝা নয়, সম্পদে পরিণত হয়। কিছুতেই তাদের কর্মোদ্দীপনা ও উৎসাহ না কমে, কিংবা নিজেকে অন্যের অনুগ্রহভোগী না ভাবে। এসব সুবিধাবঞ্চিতকে নিয়ে যত কার্যক্রম নেয়া হয় তার ব্যয়ের পুরোটাই বহন করে সরকার। এভাবে সবাই দায়িত্বশীল ও দেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠে। এভাবেই বিশ্বসেরার পথে এই জাতি এমনটাই মনে করেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা। – আশরাফ আলী বেইজিং থেকে ফিরে

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button