বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিল জাতিসংঘ

unbangladeshজাতিসংঘ প্রথমবারের মতো স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
তিনি তার ফেসবুক ভেরিফাইড পেইজে জানান, গতকাল (শুক্রবার) রাতে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের উন্নয়ন বিষয়ক কমিটির বৈঠকে বলা হয়, বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উত্তরণের সব সূচক প্রথমবারের মতো অর্জন করেছে। শনিবার তারা আমাদের জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনে এটা নিশ্চিত করে একটা চিঠি হস্তান্তর করবে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, নিয়ম অনুযায়ী তিন বছরে পরপর দুইবার সূচক অর্জন করলে চুড়ান্তভাবে একটা দেশকে মধ্যমআয়ের দেশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আমাদের এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে এবং ২০২১ সালে আবারও তা নিশ্চিত করতে হবে একই সূচকগুলো অর্জনের মধ্যে দিয়ে।
এসময় বঙ্গবন্ধু ও শহীদদের স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সবাইকে অভিনন্দন জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
এর আগে শুক্রবার (১৬ মার্চ) বিকেলে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিপিডি) এ ঘোষণা সংক্রান্ত চিঠি জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের কাছে হস্তান্তর করে। বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মাসুদের কাছে এ চিঠি হস্তান্তর করেন সিপিডি সেক্রেটারিয়েটের প্রধান রোলান্ড মোলেরাস।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার উপর একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। ভিডিওচিত্রে উঠে আসে জন্মের ৫০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কীভাবে বাংলাদেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মতো সফলতা দেখাতে যাচ্ছে। উঠে আসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কীভাবে পুরো জাতিকে স্বাধীনতার জন্য একতাবদ্ধ করেছিলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে কীভাবে তিনি স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হতে যাচ্ছে- সেসব উন্নয়ন পরিক্রমা। একে একে তুলে ধরা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক। তুলে ধরা হয় পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্প।
বক্তৃতায় স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমাদের সবার জন্য আজ এক ঐতিহাসিক দিন। অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে আপনাদের জানাচ্ছি যে বাংলাদেশ এই প্রথম এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের সব নির্ণায়ক পূর্ণ করেছে।
এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক এ তিনটির যে কোনো দু’টি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ এ তিনটি সূচকের মানদণ্ডেই উন্নীত হয়েছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল (ইকোসক) এর মানদণ্ড অনুযায়ী এক্ষেত্রে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, যেখানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১৬১০ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২.৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম, যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪.৮ ভাগ।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বেলজিয়ামের স্থায়ী প্রতিনিধি মার্ক পিস্টিন, তুরস্কের স্থায়ী প্রতিনিধি সিনিরলিওলু, ইউএনডিপির এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক ব্যুরোর পরিচালক ও জাসিংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হাওলিয়াং ঝু। সবাই এ অর্জনে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে অভিনন্দন জানান এবং অর্জনের পেছনে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ধারাবাহিক অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button