ছাতকের কংক্রিট স্লীপার কারখানা বন্ধ, কোটি টাকার কাঁচামাল নষ্ট হচ্ছে

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, ছাতক (সুনামগঞ্জ): ছাতকে বাংলাদেশ রেলওয়ের নিয়ন্ত্রনাধিন দেশের একমাত্র সরকারি কংক্রিট স্লীপার কারখানাটি দীর্ঘ ৭ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। দেশের একমাত্র রাষ্ট্রিয় স্লীপার কারখানা বন্ধ হওয়ার কারনে কারখানার অর্ধশতাধিক শ্রমিক-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট দু’শতাধিক লোক বেকার হয়ে পড়েছে। কারখানার কোটি-কোটি টাকার কাঁচামাল খোলা আকাশের নীচে পড়ে থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দেশে প্রাইভেটভাবে গজে উঠা দুটি স্লীপার কারখানার কারনে রাষ্ট্রিয় এ প্রতিষ্ঠানটি স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয়রা। বুধবার সরজমিনে কারখানা ঘুরে দেখা যায়, এখানের কাঁচামালের উপর নির্ভর করে ১৯৮৮ সালের ২৭ অক্টোবর তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে ছাতক কংক্রিট স্লীপার কারখানায় উৎপাদন শুরু করা হয়। কারখানায় কংক্রিট স্লীপার তৈরির প্রধান কাঁচামাল হাইটেনশন স্ট্রিল রড, ইনসাট স্ট্রিল পাত ভারত থেকে আমদানী করা হয়। এছাড়া ছাতক সিমেন্ট কারখানার স্পেশাল সিমেন্ট, ভোলাগঞ্জ পাথর ও বালু দিয়ে উচ্চ মানসম্পন্ন কংক্রিট স্লীপার এ কারখানায় উৎপাদিত হয়। কারখানা প্রতিষ্ঠার ২৫ বছরের মধ্যে একাধিকবার কাঁচামাল সংকটের কারনে কারখানাটি বন্ধ হলেও বর্তমানে স্থায়ীভাবে কারখানাটি বন্ধের সম্মুখিন হয়ে পড়েছে। দেশের জামালপুরে ‘তমা’ ও পঞ্চগড়ে ‘ম্যাক্স’ নামের স্লীপার কারখানা গড়ে উঠায় এখানের কংক্রিট স্লীপার কারখানাটিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। রেলওয়ের অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রাইভেট কংক্রিট স্লীপার কারখানা গড়ে উঠায় কর্মকর্তারা ছাতক কংক্রিট স্লীপার কারখানার আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করলেও উন্নত মানের উপযুক্ত কাঁচামালের অভাবে তাদের প্রাইভেট কারখানায় উৎপাদিত হচ্ছে অপেক্ষাকৃত নিুমানের স্লীপার। প্রাইভেট খাতে উৎপাদিত স্লীপার ইতিমধ্যেই ঠিকাদারের মাধ্যমে রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে ব্যবহৃত এসব স্লীপার অপেক্ষাকৃত কম সময়ে নষ্ট হয়ে সরকারের আর্থিক ক্ষতি সাধন হওয়ার আশংকা রয়েছে। পাশাপাশি এখানের রাষ্ট্রিয় কংক্রিট স্লীপার কারখানাতেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। তমা ও ম্যাক্স কংক্রিট স্লীপার কারখানায় উৎপাদিত স্লীপার সম্প্রতি টেষ্টিংয়ের জন্য ছাতক কংক্রিট স্লীপার কারখানায় পাঠানো হয়েছে। কারখানার টেম্পারেচার অপারেটর ইসকন্দর আলী জানান, প্রাইভেট কারখানাতে উৎপাদিত স্লীপার অত্যন্ত নিুমানের। টেষ্টের জন্য পাঠানো স্লীপার কোম্পানীর মান সম্মত হলেও ঢালাওভাবে তৈরি হওয়া স্লীপারে এ গুনগতমান অক্ষুন্ন থাকছেনা। কারখানার প্রিন্টার অপারেটর সালেহ আহমদ জানান, প্রাইভেট কারখানা গুলো গজে উঠার কারনে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। প্রাইভেট কারখানায় দেশীয় রড, অখ্যাত কোম্পানীর সিমেন্ট, লাল পাথর ও বালু দিয়ে তৈরি উৎপাদিত স্লীপারের গুনগতমান অবশ্যই নিুমানের। কারখানার আই,ডব্লিউ কবির আহমদ জানান, সেডে স্লীপার ধারন ক্ষমতা না থাকায় এবং ডেলিভারি বন্ধ হওয়ার কারনে কারখানাটি ৭ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। প্রাইভেট কারখানার উৎপাদিত স্লীপার অপেক্ষাকৃত নিুমানের হলেও রেল লাইনে ব্যবহারের উপযোগী। এ ব্যাপারে রেলওয়ের ছাতকস্থ নির্বাহী প্রকৌশলী আবু ইউসুফ মোহাম্মদ শামীম জানান, কংক্রিট স্লীপার টেষ্টের ব্যবস্থা এ কারখানায় রয়েছে। ফলে সম্প্রতি তমা ও ম্যাক্স নামের প্রতিষ্ঠিত দু’টি কংক্রিট স্লীপার কারখানায় উৎপাদিত স্লীপারের প্রেশার টেষ্টের জন্য এ কারখানায় পাঠানো হয়েছে। রেলওয়ে সরাসরি এ কারখানাগুলোর স্লীপার ব্যবহার না করলেও রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে স্লীপার গুলো ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে গুনগত মান বিবেচনায় ছাতকে উৎপাদিত স্লীপার অত্যন্ত ভাল। কারখানা বন্ধের ব্যাপারে তিনি জানান, উৎপাদিত স্লীপার নিয়মিত ডেলিভারি না হওয়ায় সেডের ধারন ক্ষমতা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে কারখানার উৎপাদন বন্ধ রাখা হলেও মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আবারো কারখানা চালু করা হবে। উৎপাদন সচল রাখার মতো যথেষ্ট পরিমান কাঁচামাল কারখানায় মজুত রয়েছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button