চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন মাওলানা মামুনুল হক

মামুনুল হককে রিসোর্টে আটকে হয়রানি, সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড়

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়্যাল রিসোর্টে কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে হয়রানি করার ঘটনায় তোলপাড় চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এই ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে নেট দুনিয়ায়। মামুনুল হকের সাথে করা অপমানজনক এই আচরণের প্রতিবাদে ফেটে পড়েন নেটিজেনরা। তবে কেউ কেউ ফেসবুকে সমালোচনা করেও পোস্ট দিয়েছেন।

গতকাল শনিবার বিকেলে ওই রিসোর্টে মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করা হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনার বেশকিছু ভিডিও ভাইরাল হয়। এতে দেখা যায়, স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগকর্মীরা তাকে হয়রানি করছে। নানা উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করে তারা নাজেহাল করার চেষ্টা করে। ফেসবুকের কল্যাণে সন্ধ্যায় এ খবর ছড়িয়ে পড়লে হেফাজতে ইসলামের হাজার হাজার নেতাকর্মী ওই রিসোর্টে ঢুকে মাওলানা মামুনুল হককে উদ্ধার করে একটি মাদরাসায় নিয়ে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল, একজন নারীকে নিয়ে তিনি ওই রিসোর্টে সময় কাটাতে গিয়েছিলেন। তবে মাওলানা মামুনুল হক বলছেন, দুই বছর আগে এই নারীকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে তিনি বিয়ে করেছেন।
এদিকে গতকালের এ ঘটনা নিয়ে আজ রোববার সংসদে বক্তব্য দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপরই নিজের ফেসবুক লাইভে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন তিনি। এসময় তিনি বলেন, আমি যদি মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকি তবে কোরআনের আয়াত অনুযায়ী, আমি যেন ধ্বংস হয়ে যাই। আমার ওপর যেন আল্লাহর গজব নাজিল হয়। পক্ষান্তরে যারা আমার ব্যাপারে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন, মিথ্যা প্রচার করছেন, আমার স্ত্রীর সম্পর্কে অসত্য ও ভুল তথ্য দিয়েছেন, আমার চরিত্রের উপর কালিমা লেপন করেছেন, আমি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি, ও আল্লাহ তুমি তাদের ওপর তোমার গজব নাজিল কর। ও আল্লাহ তুমি তাদের ওপর তোমার গজব নাজিল কর। ও আল্লাহ তুমি তাদের ওপর তোমার গজব নাজিল কর।
এরপর মাওলানা মামুনুল হক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। বলেন, আমি তাদের সকলকে আহ্বান জানাব, তারাও আমার মতো এরূপ বক্তব্য দিক, যদি তাদের সৎ সাহস থাকে। তারা এ কথা বলুক- যদি আমি মিথ্যাবাদী হয়ে থাকি তো আমার ওপর খোদার গজব নাজিল হোক, আর তারা যদি মিথ্যাবাদী হয়ে থাকে তাদের ওপর যেন আল্লাহর গজব নাজিল হয়। এবং তাদের বংশ যেন নির্বংশ হয়ে যায়। তাহলে তাদের ব্যাপারে আমার আর কোনো অভিযোগ থাকবে না।
এদিকে মামুনুল হকের সাথে করা অপমানজনক এই আচরণের প্রতিবাদে ফেটে পড়েন নেটিজেনরা। ফেসবুকে প্রতিবাদ জানিয়ে রিয়াজ আহাম্মেদ লিখেছেন, ‘‘বিবাহিতা স্ত্রী নিয়ে যাতায়াত ও ভ্রমণ করতে কেহ কাবিননামা সাথে নিয়ে যায়না। মাওলানা মামুনুল হকের সাথে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানাই।’’
মোঃ হজরত আলী ফয়সাল লিখেছেন, ‘‘নারীসহ রিসোর্টে আটক হেফাজত নেতা মামুনুল। অথচ হেডিং হওয়া উচিত ছিল স্ত্রীসহ হয়রানির শিকার মাওলানা মামুনুল হক। এরূপ হিংসাত্মক আচরণে সবাই মর্মাহত। আল্লাহপাক হেফাজত করুন। হলুদ সাংবাদিকতা আর কত কবি তোরা!’’
মোঃ জুয়েল সরকার লিখেছেন, ‘‘রিসোর্ট বিষয় টা সন্দেহজনক। তবে মিথ্যা বষয় দিয়ে একজন আলেম কে ফাঁসানো হলে এটিও দুঃখজনক।এখন উনার প্রথম স্ত্রী বা পরিবারের লোকজনে বক্তব্য পাওয়ার আগ মুহুর্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। বাকিটা জানা যাবে তার অপেক্ষায় রইলাম।অহেতুক কিছু বলে গোনাহের খাতা ভারি করতে চাই না।আর যদি সত্যি এটি হয়ে থাকে নারী কেলেংকারীজনিত তাহলে জাতি হিসেবে আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না আপাতত।’’
হাসিবুর রহমান সমালোচনা করে লিখেছেন, ‘‘হুজুর উদ্ধার করতে গিয়ে যে ভাংচুর চালানো হলো তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানাই। ইসলাম কখনো ভাংচুর সমর্থন করে না। অপমানের বদলা গণহারে ভাংচুর হতে পারে না।’’
ক্ষোভ জানিয়ে মাহরুফ খান লিখেছেন, ‘‘জনসচেতন বার্তা এখন থেকে আপনারা কেউ যদি বউকে নিয়ে কোন জায়গায় বেড়াতে যান সাথে আপনার কাবিননামাও নিয়া যাইয়েন সাথে, কাবিননামা না থাকলে আপনাকে! ছাত্রলীগ,যুবলীগ, আওয়ামী, লীগর হাতে হেস্তনেস্ত, অপমান ও মান সম্মান হারাতে পারেন ( So be careful আওয়ামী লীগ থেকে।’’
আনিসুল মোস্তফা লিখেছেন, ‘‘যারাই চরিত্রহননের চেষ্টা করেছে তারা সেই মুনাফিক-কাফিরদের অনুসারী, যারা হযরত আয়েশা ( র ) এর বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল । কিন্তু আল্লাহ নিজেই কোরআনের আয়াত নাজিল করে সকল মুনাফিক-কাফিরদের মুখে চপাটাঘাত করেছিলেন। অহি যেহেতু বন্ধ হয়ে গেছে, অন্যভাবে আল্লাহর সাহায্য চাই।’’
মাজেদুল ইসলাম নাইম লিখেছেন, ‘‘মামুনুল হককে যে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়,সে বিষয়ে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই এবং এটা যে তনি জানেন সে ব্যাপারেও কোনো সন্দেহ নেই! কঠোর গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে কোনো মানুষ অবৈধ নারী নিয়ে কোনো রিসোর্টে ফূর্তি করতে যেতে পারে,এটা আপনার মনে হয়? মামুনুল হক যদি সত্যিই অপরাধী হয়,তবে অবশ্যই তাকে শাস্তির সম্মুখীন করতে হবে,আর যদি কোনোভাবে নিরপরাধ প্রমানিত হয়,তবে তাকে হেনস্তা করেছে যারা,তাদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। হুটহাট মন্তব্য করার আগে কিছুটা কালক্ষেপণ হতে দিন।বুঝুন,জানুন,নিশ্চিত হন;তারপর না হয় মন্তব্য করুন।’’
মনির আহমেদ মামুনুল হকের সমালোচনা করে লিখেছেন, ‘‘কাজটা ঠিক হয় নি! তবে নিজ দলের ১৯ জন কর্মীর শহীদের পরে তিন দিন না যেতেই দলের প্রধান যদি রিফ্রেসমেন্টের জন্যে স্ত্রীকে নিয়ে রিসোর্টে ঘুরতে যাই তাহলে আল্লাহ তাকে একটু অপমান করাবে এটাই স্বাভাবিক। আল্লাহ উত্তম বিচারকারি।’’

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button