হজ কি কখনো বন্ধ ছিল?

করোনাভাইরাসের কারণে এবার হজ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সারা বিশ্বের পাশাপাশি সৌদি আরবে ভাইরাসটি আত্মপ্রকাশ করায় এমন শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। হজের আগে সৌদি আরবের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলেও বিশ্ব পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হলে সীমিত আকারে অভ্যন্তরীণভাবে হজ কার্যক্রম চালু রাখা হতে পারে। তবে নিজ দেশে করোনা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হলে ওমরাহর পাশাপাশি এ বছরের হজকার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হতে পারে। এপ্রিল মাসেই এই ঘোষণা আসতে পারে।
হজ স্থগিত রাখা হতে পারে এমন প্রবল আশঙ্কা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হজ ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্তদের মধ্যে বিরাজ করছে। এর প্রভাব পড়ছে চলতি বছরের হজ গমনেচ্ছুদের ওপর। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হজ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং হজযাত্রীদের মধ্যেও এ বছরের হজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বিরাজ করছে।

সৌদি কর্মকর্তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সৌদি সরকার নিজ দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে সবধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। ওমরাহ, ভিজিট ভিসা, অন্যান্য দেশের সাথে আকাশ, স্থল ও নৌপথে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ করে দেয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শপিংমল, বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ রাখা এবং অত্যাবশ্যকীয় তিনটি বিভাগ ছাড়া সব সরকারি কর্মকর্তার অফিসে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো কঠোর সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। সৌদি সরকার এখন ভাইরাসটির বিস্তার যাতে না ঘটে সে দিকেই বেশি নজর দিচ্ছে। ওমরাহ বন্ধ করে দেয়া তারই অংশ। হজের জন্য এখনো হাতে সময় থাকায় এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আরো পরে নেয়া হতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, হজের সময় সৌদি আরবে তাপমাত্রা ৪৫ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে। প্রচণ্ড গরমের কারণে তখন করোনা বিস্তারের আশঙ্কা কম। ততদিন পর্যন্ত পরিস্থিতি সৌদি আরবে নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তবে বহির্বিশ্বে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে বাইরের লোকদের সৌদি আরবে প্রবেশের অনুমতি সৌদি সরকার কোনোভাবেই দেবে না। সে ক্ষেত্রে বাইরের লোকদের জন্য হজ বন্ধ রেখে সৌদি আরবে বসবাসরদের জন্য সীমিত আকারে হজের অনুমতি দেয়া হতে পারে।
চীনের পর ইরান এবং সর্বশেষ ইতালিসহ অন্যান্য দেশে করোনা যেভাবে ছড়াচ্ছে তাতে আসন্ন রমজানে মসজিদুল হারামাইনে এতেকাফসহ ওমরাহর অনুমতি দেয়ার সম্ভাবনা নেই। রমজানের আগে এপ্রিল মাসের শেষের দিকে হজের ব্যাপারেও চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে।

হজ পালন ফরজ ইবাদত হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পর থেকে এ যাবৎ আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে ৪০ বার হজ স্থগিত হয়েছিল। যার মধ্যে ১২ বার স্থগিত করা হয়েছিল সম্পূর্ণরূপে। ইতিহাসে অনেকবার হজ বন্ধ কিংবা সীমিত করা হলেও ১৯৩২ সালের পর একেবারেই হজ বন্ধ থাকার কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে একটি পত্রিকার খবরে বলা হয়।

আরব নিউজের খবরে বলা হয়েছে, সৌদি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা: তৌফিক আল-রাবিয়াহ গত সোমবার করোনভাইরাস মোকাবেলার বিষয়ে অবহিত করতে গিয়ে গণমাধ্যমকে বলেছেন, এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার মাধ্যমে হজ ও ওমরাহ পরিচালনার জন্য সরকার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করছে। ‘দ্য নিউ আরবের’ এক প্রতিবেদনে বলা হয় সৌদি আরবে ওমরাহ বন্ধ করা এবং করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে হজের সময় কী হবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমার কোনো লক্ষণ এখনো নেই। ফলে অনেকে হজ বাতিলের আশঙ্কা করছেন।
সংবাদমাধ্যমটির ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ইসলামের ইতিহাসে এর আগেও বহুবার রোগ, সঙ্ঘাত, দস্যু ও আক্রমণকারীদের তৎপরতা বা অন্যান্য কারণে হজ বাতিল করা হয়েছে এবং এই হিসেবে হজ বন্ধ করা নিয়ে মানুষের আশঙ্কা একেবারেই অমূলক নয়। এতে আরো বলা হয়, সম্প্রতি সৌদি কিং আব্দুল আজিজ ফাউন্ডেশন ফর রিসার্চ অ্যান্ড আর্কাইভস ইতিহাসে ৪০ বার হজ বাতিল করা হয়েছিল বা হজযাত্রীর সংখ্যা অত্যন্ত কম ছিল উল্লেখ করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, মহামারী বা এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে আক্রান্ত এলাকা থেকে অন্য এলাকায় এবং আক্রান্ত এলাকায় না যাওয়ার ব্যাপারে রাসূল সা: হাদিসে পরিষ্কারভাবে বলেছেন। ফলে সৌদি সরকার হজের জন্য হাজীদের প্রবেশে নিষেধ করার অবকাশ আছে। তিনি বলেন, হজজীবনে একবার ফরজ। ফলে আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়ার পর ব্যক্তির ওপর ফরজ হয়ে যাবে। এখন আদায়টা বাকি থাকবে। তিনি এ বছর আদায় করতে না পারলে পরের বছর আদায় করবেন। এ বছর আদায় করতে না পারা কেউ যদি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে পড়েন তাহলে তিনি তার উত্তরাধিকারীদের কাছে হজ করার জন্য ওসিয়ত করে যাবেন এবং সে অনুযায়ী পরবর্তীতে সেটি পালন করলে আদায় হয়ে যাবে।
এই ইসলামী গবেষক আরো বলেন, সামর্থ্যবানদের ওপর আল্লাহ হজ ফরজ করেছেন। এখন যাওয়ার পথ এবং যেখানে গিয়ে হজ পালন করবেন সেই স্থান নিরাপদ না হলে, জীবনহানি বা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে বা শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকলে হজ বিলম্বিত করায় কেউ গুনাহগার হবেন না।
মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ ও গবেষক ড. মুহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী এ ব্যাপারে বলেন, ইতিহাসে হজ বন্ধ থাকার নজির আছে। হিজরতের নবম বছরে হজ পালন ফরজ ইবাদত হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পর থেকে এ যাবৎ আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে ৪০ বার হজ স্থগিত হয়েছিল। যার মধ্যে ১২ বার স্থগিত করা হয়েছিল সম্পূর্ণরূপে। করোনাভাইরাসের কারণে হজ ও ওমরাহ ২০২০ সালে স্থগিত হওয়া অসম্ভব নয়, কিন্তু তা নির্ভর করবে এই রোগের সংক্রমণ আন্তর্জাতিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আনার ওপর। ইতিহাসে অনেকবার হজ বন্ধ কিংবা সীমিত করা হলেও ১৯৩২ সালের পর একেবারেই হজ বন্ধ থাকার কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে একটি পত্রিকার খবরে বলা হয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button