২৯ বছরের মধ্যে তেলের সর্বোচ্চ দরপতন

একদিকে বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক। এ আতঙ্কে বিশ্বের বাজার ব্যবস্থায় ঘূর্ণিপাক শুরু হয়েছে। তার ওপর তেলের দাম নিয়ে সৌদি আরব উসকে দিয়েছে তেলের ‘প্রাইস ওয়ার’ বা তেলের দাম নিয়ে লড়াই। এর ফলে ২৯ বছরের মধ্যে আজ সোমবার একদিনে তেলের দরপতন হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এই দর পতন হয়েছে চার ভাগের মধ্যে একভাগেরও বেশি। ওদিকে, করোনার প্রভাবে গত ১০ বছরের মধ্যে ভারতের শেয়ারবাজার সেনসেক্সে সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে। সোমবার সেখানে সূচক পড়ে গেছে ২৩০০ পয়েন্ট।

এতে বলা হয়েছে, সৌদি আরব তাদের তেলের বিক্রয়মূল্য আনুষ্ঠানিকভাবে কমিয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে আগামী মাসে অশোধিত তেল উত্তোলন বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা নিয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে পাল্টাপাল্টিতে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সৌদি আরব এপ্রিল থেকে তেলের উত্তোলন বাড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে রাশিয়াকে শায়েস্তা করতে চায়। আজ ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারের দাম শতকরা ২৬ ভাগ বা ব্যারেল প্রতি ১১.৮১ ডলার কমেছে। গ্রিনিচ মিন টাইম সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে এই দাম কমে দাঁড়ায় ৩৩.৪৬ ডলার। এর আগে দাম কমে দাঁড়িয়েছিল ৩১.০২ ডলার। ২০১৬ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারির পর এটাই ব্রেন্টের সর্বনিম্ন দাম। রয়টার্স লিখেছে, প্রথম পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধের শুরুতে তেলের দাম সর্বনিম্নে পৌঁছেছিল। সেই ১৯৯১ সালের ১৭ই জানুয়ারি থেকে প্রতিদিন তেলের দাম পতনের যে রেকর্ড তার মধ্যে আজ সোমবার ব্রেন্ট ফিউটারের পতন সবচেয়ে বেশি।
অন্যদিকে ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) অশোধিত তেলের দামের পতন হয়েছে শতকরা ২৮ ভাগ বা ব্যারেল প্রতি ১১.৪৮ ডলার। এই পতনের পর প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই তেলের দাম দাঁড়িয়েছে ২৯.৮০ ডলার। এই দাম ২৭.৩৪ ডলার স্পর্শ করার পর এই অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। ২০১৬ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারির পর এই দাম সর্বনি¤œ। অন্যদিকে রেকর্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল ইউএস বেঞ্চমার্ক। ১৯৯১ সালে এর দাম পতনের রেকর্ড ছিল শতকরা ৩৩ ভাগ। সেই রেকর্ডকেও অতিক্রম করে যাওয়ার অবস্থায় ইউএস বেঞ্চমার্ক।
এ অবস্থায় সতর্কতা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনের এআরএম এনার্জির কৌশলগত বিশ্লেষক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কিথ বারনেট। তিনি বলেছেন, তেলের এই দরপতন দু’এক মাসের বেশি স্থায়ী হতে দেয়া উচিত হবে না। তা নাহলে করোনা ভাইরাস নিয়ে বৈশ্বিক বাজারে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে এবং ক্রেতাদের আস্থা পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দায় ভূমিকা রাখবে।
রাশিয়াসহ তেল উত্তোলনকারী অন্যদের নিয়ে গড়ে উঠেছে ওপেক প্লাস নামের গ্রুপ। কিন্তু সেখানেও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এর ফলে তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতায় সমাপ্তি ঘটেছে তিন বছরেরও বেশি সময়। রোববার দু’টি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, তেল উত্তোলন সীমিত রাখতে বর্তমানে যে চুক্তি রয়েছে তা শেষ হচ্ছে মার্চে। এরপরই এপ্রিলে প্রতিদিন এক কোটি ব্যারেল অশোধিত তেল উত্তোলনের পরিকল্পনা নিয়েছে সৌদি আরব। এর মধ্য দিয়ে রাশিয়াকে শাস্তি দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রপ্তানিকারক দেশ সৌদি আরব। রাশিয়া হলো তেলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উত্তোলনকারী। গত সপ্তাহে ওপেক তেলের উত্তোলন কমিয়ে আনার যে প্রস্তাব দিয়েছে তাতে তারা সহযোগিতা করবে না বলে জানিয়েছে। তেল উত্তোলনের এই লড়াইয়ের প্রভাব পড়েছে বাজারে। তেলের বাজারে একই রকম লড়াই ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে করেছে সৌদি আরব, রাশিয়া ও অন্য বড় বড় তেল উত্তোলনকারী দেশগুলো।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button