এক তরফা নির্বাচন প্রতিহত করা হবে : খালেদা জিয়া

Kaledaবিএনপি চেয়ারপার্সন ও জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগ যদি এক তরফা নির্বাচন করতে চায়, তাহলে জনগণকে সাথে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে। এজন্য প্রয়োজনে কেন্দ্র ভিত্তিক সংগ্রাম কমিটি গঠন করা  হবে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রতিহত করতে সবার প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী ২৫ অক্টোবর থেকে যদি নিরপেক্ষ সরকার না দেয়া হয়, তাহলে চুড়ান্ত আন্দোলন শুরু হবে। তাই এখন থেকে সংগ্রাম কমিটি গঠন করুন।
শনিবার বিকালে সিলেট আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে ১৮দলীয় জোট আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। প্রথমে হযরত শাহ পরাণ (র.) এবং পরে হযরত শাহজালাল (র) এর মাজার জিয়ারত করে বেলা ৩টার দিকে সমাবেশে পৌঁছান বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন,  ‘পূণ্যভূমিতে আসতে পেরে আমি আনন্দিত। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
তিনি বলেন, সিলেটবাসী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে লাল কার্ড দেখাবে। সরকারের জুলুম এখন সবকিছু ছাড়িয়ে গেছে। তারা অত্যাচার করছে।
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ভয়ে চিৎকার করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার চারপাশে কেউ নেই। তাই তিনি চিৎকার করছেন। তিনি যতই চিৎকার করুন হাসিনা আর আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ আমাদের দরকার, সেজন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রও দরকার। কিন্তু বিদ্যুৎ কেন্দ্র রামপালে হলে আমাদের সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের পশুপাখি ধ্বংস হয়ে যাবে। সমস্ত গাছ পুড়ে যাবে। পানি শুকিয়ে যাবে। নদীর পানি লবনাক্ত হবে। রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নয়, অন্য কোথাও করেন আমাদের আপত্তি নেই।
বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে দেয়া যাবে না। দেশের পরিবেশ নষ্ট করে এইভাবে কিছু করতে দেয়া যাবে না। জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হবে। ভারতে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের চেষ্টা করেছিলো। সেখানকার জনগণ এটা করতে দেয় নাই। তাই এ প্রকল্প বাংলাদেশে করছে। বাংলাদেশের জনগণকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।
তিনি বলেন, টিপাইমুখ বাঁধ হলে সিলেটের পরিণতিও খারাপ হবে। এই ইস্যুতে ইলিয়াস আলী আন্দোলন করেছিলো তাই তাকে গুম হতে হয়েছে। খালেদা জিয়া বলেন, আমরা সরকারের কাছে জানতে চাই ইলিয়াস আলী কোথায় ? তাকে ফিরিয়ে দিন। ইলিয়াস আলী ছাত্র জীবন থেকে আমাদের সাথে কাজ করেছে।  সে নিজেদের দেশকে ভালবাসে, নিজের জেলাকে ভালবাসে তাই টিপাইমুখের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলো।
বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, এই সরকারের কাছে আর আমরা নির্যাতিত হতে চাই না। আমাদের প্রতিবাদ করার সময় এসেছে। শিবির নেতা দেলোয়ারকে নির্যাতন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ কি এজন্যই ভোট দিয়েছে ? খালেদা জিয়া বলেন, জনগণ ভোট দেয়নি, তারা চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে।
তিনি বলেন, এ সরকার  যে ওয়াদা দিয়েছিলো তারা কোনো ওয়াদা পূরণ করেনি। মধ্যপ্রাচ্যের সাথে সরকার এমন সম্পর্ক তৈরি করেছে সেখানে কোনো লোক যেতে পারছে না। সৌদি আরব ভিসা পর্যন্ত দেয় না। মালয়েশিয়া মুসলমানের দেশে সেখানো লোক যেতে পারছে না।
মহাজোট সরকারকে মিথ্যাবদী আখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় এসে সার, ডিজেলসহ অন্যান্য উপকরণের দাম ৩ গুণ বাড়িয়েছে। বিদ্যুতের দামও কয়েকগুণ বাড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার নিজেদের পকেট ভারী করার জন্য কুইকরেন্টাল বসিয়েছে। জনগণ বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, শহীদ জিয়া এই দেশে প্রথম গার্মেন্ট শিল্প প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই শিল্পও এখন ধ্বসের মুখে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মানে দেশ ধ্বংসকারী। তাই আওয়ামী লীগ থেকে সাবধান হতে হবে। আওয়ামী লীগকে সব কিছু থেকে দূরে রাখতে হবে। নাহলে  দেশ রক্ষা করা যাবে না।  কেউ সুখে থাকতে পারবে না।
দেশে সব ধর্মের মানুষ বসবাস উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, এই আওয়ামী লীগের সময়ে মন্দিরে হামলা হয়েছে। মসজিদে তালা দেখেছেন। চট্টগ্রামের বৌদ্ধমন্দিরে হামলা দেখেছেন। হামলাকারীরা সবাই আওয়ামী লীগের।’
তিনি বলেন,প্রধানমন্ত্রী  আরেকবার সুযোগ চেয়েছেন। এবার সুযোগ পেয়ে তারা সব লুটেপুটে খেয়েছে।  সোনালী ব্যাংকের যে অবস্থা করেছে তা পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসতে ৩০৯ বছর সময় লাগবে।
খালেদা জিয়া বলেন, এই আওয়ামী লীগের সময় পদ্মা সেতু হবে না। তারা বিদেশে টাকা পাচার করেছে। তারা আগামীতে এলে পুরো দেশ খেয়ে ফেলবে। আওয়ামী লীগকে আর সুযোগ দেয়া যায় না।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে পিলখানায় সেনা বাহিনীর কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়েছে। এর জবাব দিতে হবে বলে সরকার প্রধানকে হুশিয়ারি দেন খালেদা জিয়া।
প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) কে নিয়ে যারা কটুক্তি করেছে সরকার তাদের প্রশয় দিয়েছে অভিযোগ তুলে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এর প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা ঢাকায় কোরআন শরীফ আর তজবিহ নিয়ে এসেছিলো। তাদের ওপর আওয়ামী লীগ হামলা করেছে। তাদের নেতা শফি সাহেবকে আওয়ামী লীগ আসতে দেয়নি।
খালেদা জিয়া বলেন, শফি সাহেবকে যদি আসতে দিতো তাহলে এই সমাবেশ ভালোভাবে শেষ হতো। তিনি বলেন, বিডিআর বিদ্রোহ দমনের  জন্য একটা গুলি চললো না। আর আলেমদের ওপর লক্ষাধিক রাউন্ড গুলি খরচ করেছে এ সরকার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে গেলে নাকি জঙ্গিবাদ বেড়ে যাবে, অন্য ধর্মের আনাগোনা বেড়ে যাবে এসব বানোয়াট দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন  বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে যশোরে, রমনার বটমূলে, পল্টনে, গোপালগঞ্জের গীর্জায় বোমা হামালা হয়েছিলো।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটা সন্ত্রাসীকে ধরে নাই। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর র‌্যাব গঠন করেছিলাম। বাংলা ভাই, শায়খ আব্দুর রহমানকে চারদলীয় জোট সরকার ধরেছে।
তিনি বলেন, বিএনপি শান্তি ও উন্নয়নের রাজনীতির বিশ্বাসী । কোনো সন্ত্রাসীরা জায়গা বিএনপি, ১৮দল বা বাংলাদেশে হবে না।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায় থাকতে চায়। তাই শুনতে পাচ্ছি হিন্দুদের বাড়ি ঘর, মন্দিরে ভাংচুর করে বিএনপি জামাতের নামে চালাবে। আমি পরিস্কার করে বলে দিতে চাই, আমরা সবাই একসাথে থাকবো। ১৮দল আপনাদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেবো। আপনাদের কেউ ক্ষতি করলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক রাখতে চাই। বিএনপি এবং ১৮ দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা তাদের লাভ উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক মানে একটি দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা। আর বিএনপি এবং ১৮ দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা মানে একটি দেশ ও জাতির সঙ্গে সম্পর্ক রাখা।
তিনি বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হোক আমরা সেটা চাই। কিন্তু আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। উপ-নির্বাচনগুলো আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু হয় নাই।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করা যায়  না। তাই একটা নিরপেক্ষ সরকার দাকার। তিনি বলেন, আমাদের সময়ে আওয়ামী লীগ এই দাবি করেছিলো। তখন জামায়াতে ইসলাম তাদের বন্ধু ছিলো। তারা জ্বালাও পোড়াও আর দ্বংসের আন্দোলন করেছে। গান পাউডার দিয়ে মানুষ মেরেছিলো।
শেখ হাসিনার প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এই নেত্রী মানুষ খুন করার কথা বলেছিলেন। এই নেত্রীর কাছে দেশ নিরাপদ নয়। সেজন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সুষ্ঠু নির্বাচন। আমরা বলেছি সংসদে নির্দলীয় সরকারের বিল আনুন। যতদিন ক্ষমতায় আছেন থাকেন।
খালেদা জিয়া বলেন, তিনি ( শেখ হাসিনা) ক্ষমতায় থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। যেহেতু নিরপেক্ষ সরকারের জায়গা তিনি বসে আছেন, তাই বিচার বিভাগ, প্রশাসন তাদের কথা মতো কাজ করবে।
তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয় যে নির্দেশ দেয় বিচার বিভাগ তার বাইরে কাজ করতে পারে না। মানুষ ন্যায় বিচার পায় না। বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, তারা যা বলে নির্বাচন কমিশন বলে জ্বী স্যার, জ্বী স্যার।
লেভেল প্লেইং ফিল্ড হতে হবে উল্লেখ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেন, তা না হলে জনগণের রায় প্রতিফলিত হবে না। খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন তারা কেন সংবিধান সংশোধন করেছে? তিনি বলেন, বিচারপতি কে এম হাসানের সঙ্গে বিএনপি সম্পর্ক ছিলো না। আপনারা তাকে মানেন নি। আপনি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আপনাকে মানবো কেন ?
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ যদি এককভাবে নির্বাচন করতে চায় বিশ্ববাসী তা গ্রহণ করবে না। তিনি বলেন, এই সিলেটে যত উন্নয়ন হয়েছে তা বিএনপির আমলে হয়েছে। সাইফুর রহমান ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। আরো যা বাকি আছে তাও করা হবে। আপনাদের সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক আছে।
উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে সিলেটে প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়, চার লেন রাস্তা,  দ্রতগামী ঢাকা-সিলেট রেল ব্যবস্থা, মেয়েদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে । সিলেটে ইপিজেড করা হবে। রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন হবে। তিনি বলেন, দেশ থেকে সন্ত্রাস দূর করবো। মাদক মুক্ত বাংলাদেশ গড়বো।
তিনি বলেন, আমাদের চিন্তু শুধু সিলেট নয় সারা বাংলাদেশ নিয়ে। ক্ষমতায় গেলে সবার জন্য উন্নয়ন করবো। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে তৈরি করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়া বলেন, অবিলম্বে ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেন। আপনি কথায় কথায় মানবতাবিরোধী বলেন, আপনার সময়ে মানুষ খুন হয়েছে, গুম হয়েছে। আপনার সময়ে অনেক মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে। তার জবাব আপনার দল ও জোটকে দিতে হবে।
প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা কারো প্রতি জুলুম করবেন না। আমরাও কাউকে চাকুরীচ্যুত করবো না। যাদের  বরখাস্ত হয়েছে তাদের পুনর্বহাল করা হবে। অতীতেও সফল হয়েছি। এবারও সফল হবো।
এরশাদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করবো না। আপনি ভয় পাবেন না। আমরা আপনাকে সম্মান করবো।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকার পতনের আন্দোলনের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, সরকারের আর মাত্র ২০দিন সময় আছে। এই সরকারকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া যাবে না। তাই সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ২০দিন সময় আছে। আন্দোলনের জন্য সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার আহবান জানান তিনি।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি এম এ হক এর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে এলডিপি সভাপতি অলি আহমেদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পাটির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইবরাহিম, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামী, খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা ইসহাক, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারররফ হোসেন, মওদুদ আহমেদ, মির্জা আব্বাস, রফিকুল ইসলাম মিয়া, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুল্লাহ আবু তাহের, নিঁখোজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসীনা রুশদীর লুনাসহ ১৮দলীয় জোটের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button