কাউকেই নির্বাচন বানচাল করতে দেয়া হবে না : প্রধানমন্ত্রী

PMপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, যে কোনো ভাবেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং কাউকে এ নির্বাচন বানচাল করতে দেয়া হবে না। সোমবার এক জনসভায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মন্তব্যের জবাবে তিনি আরো বলেন, ‘যে কোনো মূল্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি নেত্রীর সাধ্য নেই নির্বাচন বানচাল করার এবং আমরা কাউকে এ কাজ করতে দেব না।’
সোমবার রাজশাহীতে বিএনপি চেয়ারপার্সন জনগণের প্রতি আগামী নির্বাচন ভন্ডুল করার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘তার দল বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর আওতায় যে কোনো নির্বাচন প্রতিহত করবে।’
ওই জনসভায় বিএনপি নেতৃবৃন্দের করা অপর একটি মন্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা (আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক) কখনোই ডুববে না। এটা অবশ্যই তীরে ভিড়বে এবং নোঙর করবে। এই নৌকা বাংলাদেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ থেকে উদ্ধার করবে।
শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সিলেটের গোলাপগঞ্জ স্থানীয় এমসি একাডেমী প্লে গ্রাউন্ডে আওয়ামী লীগের গোলাপগঞ্জ শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন।
এক দিনের সফরে মঙ্গলবার সকালে তিনি সিলেট আসেন। হাজার হাজার মানুষের মুহূর্মুহু করতালির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নৌকা কেবল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নয়- এটা বাংলাদেশের জনগণেরও প্রতীক। এই নৌকা নূহ (আঃ)-এর নৌকা। কাজেই এটা কখনই ডুববে না।’
আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, এই নৌকা বাংলাদেশের জনগণকে রাজাকার, আল-বদর, যুদ্ধাপরাধী, খুনী, জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের নির্যাতন থেকে রক্ষা করেছে এবং ভবিষ্যতেও এ নৌকাই তাদের রক্ষা করবে।
বেগম জিয়ার মন্তব্য খন্ডন করে শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘তিনি (বেগম জিয়া) আমাকে সরকারি অর্থ ব্যয় করে ভোট চাওয়ার দায়ে অভিযুক্ত করেছেন- কিন্তু ২০০৬ সালে ক্ষমতা থাকাকালে তিনি কি করেছিলেন?’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ২০০৬ সালের এপ্রিল মাসের বিভিন্ন পত্রিকার রিপোর্টে চোখ বোলাবার জন্য বেগম জিয়ার প্রতি অনুরোধ জানান। অপরকে অভিযুক্ত করার আগে নিজের চেহারাটা আয়নায় দেখার জন্য বেগম জিয়ার প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি জনগণের কাছে ভোট চাই। কারণ আমি গণতন্ত্রে এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী।’
সভায় অন্যান্যের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাবেক মেয়র বদরুদ্দিন আহমেদ কামরান বক্তৃতা করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ইকবাল আহমেদ চৌধুরী।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছেড়ে না দিলে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে বলে বিরোধী দলীয় নেতার হুমকি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনা কখনো দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। এমনকি আমি বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হুমকির মুখেও দেশে ফিরে এসেছিলাম।’
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রতি ব্যাপক সমর্থন দেয়ার জন্য সিলেটের জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে বলে বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। দেশ এখন দ্রুত অগ্রগতি লাভ করছে এবং জনগণ সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশকে আবার সন্ত্রাসের রাজত্বে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।’
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা গণহত্যা করেছিল, আমাদের মা-বোনদের দখলদারদের হাতে তুলে দিয়েছিল, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছিল এবং দেশের অর্ধেক মানুষকে নির্যাতন করেছিল তাদেরকে একটি জাতি কি করে ক্ষমা করতে পারে?’
তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের বিচার শুরু করেছি। বিএনপি নেত্রী তাদের রক্ষা করতে চান। কারণ, এটি তার জন্য একটি হৃদয় বিদারক পরিস্থিতি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলতে চাই, আপনারা যতো চেষ্টাই করুন না কেন, আপনারা বিচার বন্ধ করতে পারবেন না এবং বাংলাদেশের মাটিতেই বিচারের রায় কার্যকর হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখন বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে পুরস্কার লাভ করে। আর যখনই বিএনপি তাদের ধর্মান্ধ জোট নিয়ে ক্ষমতায় আসে তখনই দেশ নিন্দিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বেগম জিয়া এখন ইসলামের জন্য বিলাপ করছেন। আমি তার কাছে জানতে চাই যে, কারা বিগত ৫ মে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পবিত্র কোরানের শত শত কপি পুড়িয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী সরকার জাতীয় মসজিদের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের জন্য ১৯৯৬ সালে একটি প্রকল্প গ্রহন করেছিল। কিন্তু বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে কাজটি বন্ধ করে দিয়েছিল। তিনি বলেন, বেগম জিয়া যদি ইসলাম রক্ষার জন্য এতোই উদ্বিগ্ন, তাহলে বিএনপি কাজটি বন্ধ করে দিয়েছিল কেন? -বাসস

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button