আলো দেখাচ্ছে একমাত্র প্রবাসী আয়

ডিসেম্বরের আট দিনেই ৫৫ কোটি ডলার আহরণ

প্রবাসীদের পাঠানো প্রবাসী আয় (রেমিটেন্স) বাড়ছেই। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরের আট দিনেই ৫৫ কোটি ডলার প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন তারা। এর আগে কখনই এক সপ্তাহে এত বেশি প্রবাসী আয় বাংলাদেশে আসেনি। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ডিসেম্বরে প্রবাসী আয় ২০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছবে। আর তা হবে এক মাসের হিসাবে রেকর্ড।

এখন পর্যন্ত এক মাসে ১৭৪ কোটি ৮২ লাখ ডলার প্রবাসী আয় পেয়েছে বাংলাদেশ; মে মাসে। আর প্রবাসী আয় প্রবাহের এই ইতিবাচক ধারায় বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ফের ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে। অর্থনীতির প্রায় সব সূচক নিম্নমুখী। এই ‘বৈরি হাওয়ার’ মধ্যে একমাত্র প্রবাসী আয়ই আশার আলো ছড়াচ্ছে বলে মনে করেন অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর।

গত নভেম্বরে ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ (১.৫৫ বিলিয়ন) ডলারের প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা ছিল গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে ৩১ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। আর চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) প্রবাসী আয় এসেছে ৭৭১ কোটি (৭.৭১ বিলিয়ন) ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা, জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় প্রবাসী আয় প্রবাহ বাড়ছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমালে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক প্রবাসী আয় আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার প্রবাসী আয়ের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ডিসেম্বরের আট দিনে (১ থেকে ৮ ডিসেম্বর) ৫০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এ নিয়ে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের পাঁচ মাস আট দিনে (১ জুলাই থেকে ৮ ডিসেম্বর) প্রবাসী আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮২৬ কোটি ৪২ লাখ (৮.২৬ বিলিয়ন) ডলার।

অক্টোবরে ১৬৪ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল এক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়। তার আগে সেপ্টেম্বরে পাঠিয়েছিলেন ১৪৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ১৫৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। আগস্টে আয় আসে ১৪৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলার।

প্রবাসীদের পাঠানো প্রবাসী আয় প্রবাহে সুখবর দিয়ে শেষ হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছর। গত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি প্রবাসী আয় পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। তার আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবাসী আয় প্রবৃদ্ধি ছিল আরও বেশি; ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ।

প্রবাসী আয় ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। প্রবাসীরা এখন ১০০ টাকা দেশে পাঠালে যার নামে টাকা পাঠাচ্ছেন তিনি ওই ১০০ টাকার সঙ্গে ২ টাকা যোগ করে ১০২ টাকা তুলতে পারছেন। বাজেটে এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা ঘোষণা করেছে। ৬ আগস্ট তা প্রকাশ করা হয়েছে; তাতে বলা হয়েছে- প্রবাসীদের পাঠানো আয়ে প্রণোদনা পেতে ১ হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত কোনো ধরনের কাগজপত্র লাগবে না।

তবে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ এই অংকের বেশি হলে প্রাপককে প্রেরকের পাসপোর্টের কপি এবং বিদেশি নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপত্র অবশ্যই জমা দিতে হবে। আর ব্যবসায়ী ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবসার লাইসেন্সের কপি দাখিল করতে হবে।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এক হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ (১৬.৪২ বিলিয়ন) ডলারের প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এসেছিল এক হাজার ৪৯৮ কোটি ১৭ লাখ (১৪.৯৮ বিলিয়ন) ডলার। বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হলো বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স। বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। জিডিপিতে তাদের পাঠানো অর্থের অবদান ১২ শতাংশের মতো।

ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেন, একমাত্র প্রবাসী আয় ছাড়া অর্থনীতির অন্য সব সূচকের অবস্থা এখন খারাপ। রপ্তানি বাণিজ্যে ধস নেমেছে। রাজস্ব আদায় কমছে। মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। চাপে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ। আমদানিও কমছে। বিনিয়োগে খরা কাটছে না। ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পাহাড়। শেয়ারবাজারে তো মন্দা লেগেই আছে।

‘সে কারণেই বলা যায়, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থই এখন সচল রেখেছে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা।’

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button