তারেক রহমানকে ফেরত পাঠাতে ব্রিটিশ সরকারকে চিঠি

Tareqবিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে ব্রিটিশ সরকারকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এই প্রথমবারের মতো তারেক রহমানকে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানো হলো। সরকারের উচ্চপদস্থ সূত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী স্বাক্ষরিত এ চিঠি বৃহস্পতিবার লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে চিঠিটি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ডের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, লন্ডনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ আব্দুল হান্নান ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাক্ষাতের জন্য সময় চেয়েছেন এবং যত দ্রুত সম্ভব ওই চিঠি ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করা হবে।
২০০৮ সালে  সেনাবাহিনী-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জামিনে থাকাকালীন তারেক রহমানকে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। সেসময় আর রাজনীতি করবেন না বলে মুচলেকা দিয়ে দেশ ত্যাগ করেন তারেক। তখন থেকে অদ্যাবধি সপরিবারে লন্ডনেই আছেন তিনি। সেখান থেকেই স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরকারবিরোধী ও বিতর্কিত মন্তব্য করে চলেছেন তিনি।
দেশে চলমান সহিংসতা উস্কে দেওয়ার জন্য তারেক রহমান বিভিন্নভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছেন বলেও সরকার মনে করে। এছাড়া সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তার বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্যে ভীষণ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে সরকারি মহল।
গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে লন্ডনে বিএনপির এক জনসভায় তারেক রহমান বঙ্গবন্ধুকে ’রাজাকার, খুনি ও পাকবন্ধু’ বলে অভিহিত করেন। তার এ মন্তব্যে সরকারসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন মহলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ওই বক্তব্যে তিনি তার বাবা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক এবং প্রথম রাষ্ট্রপতি বলেও দাবি করেন।
ওই বক্তৃতায় ‘স্বাধীনতার ঘোষণা আসার আগে ইয়াহিয়া খানকে প্রেসিডেন্ট মেনে নিয়ে সমঝোতা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু’ এমন মন্তব্যও করেন বিএনপির এই সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান।
‘সরকার এবং এদেশের জনগণ চায় অবিবেচক মন্তব্য ও কার্যক্রমের জন্য তারেক রহমান জবাবদিহি করুন এবং অপরাধী কার্যক্রমের জন্য তার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে দেশে এসে সেগুলোর বিচারের সম্মুখীন হোক,’ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পাঠানো চিঠিতে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
মাহমুদ আলী ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে লিখেছেন তারেক লন্ডনে যাওয়ার পর আর দেশে ফেরত আসেননি এবং তিনি আইনের চোখে একজন পলাতক আসামি।
লন্ডনে তিনি (তারেক রহমান) তার অবস্থানের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছেন যার ফলে বাংলাদেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৪ সালে যখন বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন তখন তাকে হত্যা করার চেষ্টা মামলায় তারেক রহমান একজন অভিযুক্ত এবং বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন।
গত বছর ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামাত জোট দেশে যে সহিংস তাণ্ডব চালিয়েছে তার একজন প্রধান হোতা হিসেবে তিনি কাজ করেছেন এবং বর্তমান সরকারকে বিশৃঙ্খলা ও অবরোধ সৃষ্টির মাধ্যমে উৎখাত করার জন্য তারেক বিভিন্ন ধরনের ভিডিও বার্তা ও অন্যান্য উপায়ে ইন্ধন যুগিয়ে যাচ্ছেন।
চিঠিতে ১৬ জানুয়ারিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেওয়া সিদ্ধান্ত প্রস্তাবের প্রসঙ্গে আলোকপাত করে বলা হয়, বিএনপিকে জামায়াত ও হেফাজতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য বলেছে এ পার্লামেন্ট।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিখেছেন, লন্ডনে তারেক রহমান বঙ্গবন্ধুকে ’রাজাকার, খুনি ও পাকবন্ধু’ ও ’বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের বেআইনি প্রেসিডেন্ট ও তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা হওয়া উচিৎ’ বলে মন্তব্য করে ইতিহাস নতুনভাবে রচনা করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন।
তারেকের মন্তব্য বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক ও রাজনীতিমনা জনগণকে ভীষণভাবে আহত করেছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এতে আরও বলা হয়, তারেক রহমানের উস্কানিমূলক মন্তব্য বাংলাদেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও রাজনৈতিক সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য একটি বড় হুমকি।
এছাড়াও হাইকোর্ট সাম্প্রতিক সময়ে এক আদেশে বলেছে তারেক রহমানের কোনও বক্তব্য ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যেন সম্প্রচার করা না হয়।
হাইকোর্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এ আদেশ পাওয়ার এক মাসের মধ্যে বিদেশে তারেক রহমানের অবস্থান সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্যেও নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে বিভিন্ন সময়ে ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের প্রশ্ন করেও লন্ডনে তারেক রহমান কী মর্যাদায় অবস্থান করছেন তার কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button