মানব পাচারে টানা ৩ বছর দ্বিতীয় বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্টের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ট্রাফিকিং ইন পার্সন (টিআইপি) রিপোর্ট ২০১৯ অনুযায়ী, অবৈধ অভিবাসী হয়ে বাংলাদেশিরা বিদেশে পাচারকারীদের শোষণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। মানবপাচারে বাংলাদেশ একটানা তিন বছর দ্বিতীয় পর্যায়ে অবস্থান করলেও সরকার পাচার নির্মূলে যথাযত উদ্যোগ নিচ্ছে না।

রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘কম্প্রিহেন্সিভ রেস্পন্সেস টু ট্রাফিকিং ইন পারসন্স’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আলোচনায় এই তথ্য উঠে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টপেন্টের ব্যুরো অব ইন্টারন্যাশনাল নারকোটিক্স অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট আফেয়ার্স (আইএনএল) এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

আলোচনায় বলা হয়, সব স্তরে সরকার, উন্নয়ন অংশীদার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সুশীল সমাজ, বেসরকারি খাত এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক অংশীদারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মানব পাচারের মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পলিটিক্যাল/ইকোনোমিক কাউন্সেলর ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, ‘মানবপাচারকে আমরা মারাত্মক অপরাধ হিসেবে দেখছি। টিআইপির প্রতিবেদনে বাংলাদেশ দ্বিতীয় পর্যায়ের লিস্টে থাকা উদ্বেগের বিষয়। পাচারের শিকার অনেক মানুষ এখন ভুক্তভোগী।’ পাচারকারীদের আইনের আওতায় এনে বিচার বাড়াতে ওপর জোর দেন তিনি।

পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক বলেন, ‘মানব পাচারের ধরন প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। বাস্তবতা হলো মানব পাচার প্রতিরোধে উদ্যোগ ও এই ব্যবসার মধ্যে বিস্তর তফাৎ আছে। বাংলাদেশ সরকার মানব পাচার প্রতিরোধে পালেরমো প্রটোকল রেটিফাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) মো আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘মানব পাচার বিশ্বব্যাপী তৃতীয় বৃহত্তর ব্যবসা। মানব পাচার প্রতিরোধে এরই মধ্যে সরকার অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। বিশেষ করে মানব পাচার বিষয়টি যেভাবে বড় হচ্ছে সেই হারে আমদের মানব সম্পদ নেই।’

অনুষ্ঠানের ধারণাপত্রে বলা হয়, পাচারের শিকার মানুষ যৌন শোষণ, জোরপূর্বক শ্রম, বহু ও জোরপূর্বক বিবাহ, শিশু শ্রমিকদের শোষণ, পথশিশুদের পাচার এবং অঙ্গবাণিজ্যের শিকার হচ্ছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভিবাসী শ্রমিকেরা অনৈতিক নিয়োগের শিকার হচ্ছেন। পাচারকারীরা ভারত, পাকিস্তান ও এশিয়ার মধ্যপূর্বঞ্চলীয় দেশগুলোর ব্যবহার করে মানুষ নিয়ে যাচ্ছে। এতে মানুষ ভয়বহ অভিজ্ঞতার শিকার হচ্ছেন। যেটি চরম মানবাধিকারের লঙ্ঘন।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো বলেন, ‘সমাজে যারা প্রান্তিক, সুবিধাবঞ্চিত এবং ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন তারাই বেশি পাচারের শিকার হচ্ছেন। এই সমস্যা সমাধানে সমন্বয়, সক্ষমতা বৃদ্ধি, সম্পদ ও পরিসংখ্যান অনেক জরুরি।’

আইওএম বাংলাদেশের মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, ‘কর্মসংস্থানের অভাব, নিরাপদ অভিবাসন নিয়ে সচেতনতার অভাব এবং অভিবাসনের জন্য অনেক বেশি খরচের কারণে মানুষ অনিরাপদভাবে দেশের বাইরে যাচ্ছেন।’

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button