ব্রিটেনে কিশোরী মাতার হার সবচেয়ে বেশি

UK Women‘তাদের সূর্য কখনো অস্ত যায় না’ এক সময় এমনই উধাধি ছিল দেশটির। তারা এক সময় শাসন করেছে পুরো পৃথিবী। ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করেছে প্রায় ২০০ বছর। প্রথম শিল্পবিপ্লবের সূচনাও হয় এই দেশ থেকে। উন্নত জাতি গঠনে গড়ে তুলেছে বিশ্বখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তারপরও উন্নত এই দেশটিতে অল্প বয়সে মাতৃত্বের হার সবচেয়ে বেশি। ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি হার হওয়ায় দেশটি ‘টিন মাদারহুড ক্যাপিটাল’ বা অল্প বয়সে মাতৃত্বের রাজধানী হিসেবে পরিচিত। আর দেশটির নাম ব্রিটেন।
এক জরিপে উঠে এসেছে, দেশটিতে প্রতি হাজারে ২১ জন বালিকা গর্ভবতী হয়। যাদের বয়স ১৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। যদিও গত দশকের তুলনায় অনেকখানি কমে এসেছে মাতৃত্বের এই হার। তবুও তা ইউরোপের অন্যান্য দেশের চেয়ে ঢের বেশি। কারণ ওই দেশগুলোতে গর্ভপাতের মাধ্যমে এই মাতৃত্বের সমাপ্তি ঘটালেও যুক্তরাজ্যের দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের মধ্যে সন্তান জন্মদানের প্রবণতা বেশি। তাই বিশেষজ্ঞরা পদক্ষেপ হিসেবে সেক্স এডুকেশন, জন্মনিরোধক ও গর্ভপাতের সম্ভাবনা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
যুক্তরাজ্য এখনো অপ্রত্যাশিত ‘খ্যাতি’ হিসেবে অল্প বয়সে মাত্বত্বের প্রধান শীর্ষ দেশের রেকর্ড ধারণ করে আছে। ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে ১৬ হাজার ৬২২ বালিকা সন্তান জন্ম দিয়েছে। যাদের বয়স ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সের মধ্যে। এর আগের বছর যা ছিল ১৭ হাজার ৫০০ এবং ২০১৩ সালে ১৯ হাজার ৬৭৯। যদিও গত দশকজুড়ে সেখানে তরুণীদের মাঝে গর্ভধারণের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমেছে। ২০০৮ সাল থেকে দেশটির দুটি রাজ্য ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে এই সংখ্যা কমছে। বছরজুড়ে সামাজিত গণমাধ্যম, দীর্ঘমেয়াদি জন্মনিরোধক ব্যবহার ও সতর্কতামূলক পিল গ্রহণের মাধ্যমে জন্মদানের সংখ্যা কমেছে। এ ছাড়া মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ থাকায় সন্তান জন্মদানের হার কমেছে ব্যাপক হারে। তবুও অন্যান্য দেশের তুলনায় তা এখনো অনেক বেশি। কেন না ইউরোপের অন্যান্য দেশে যেখানে শ্রমজীবীদের মধ্যে গর্ভপাত একটি সাধারণ বিষয়, সেখানে যুক্তরাজ্যের বালিকারা তাদের সন্তান জন্মদানে আগ্রহী। বিশেষ করে যারা দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছে। লুক্সেমবার্গভিত্তিক ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘ইউরোস্ট্যাট এজেন্সি’ পরিচালিত এক জরিপে ২০১৫ সালে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সে সন্তান জন্মদানে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রোমানিয়া। সে দেশে ১২ হাজার ৮০২ জন বালিকা সন্তানের জন্ম দেয়। ফ্রান্সে সেই সংখ্যা ১২ হাজার ৫৯, জার্মানিতে ১০ হাজার ৮১৩, পোল্যান্ড ৮ হাজার ২৪০, স্পেন পাঁচ হাজার ৭৫১, বুলগেরিয়া তিন হাজার ৮৪৯, হাঙ্গেরি তিন হাজার ৭৬১, ইতালি দুই হাজার ৭৯৮ ও সেস্নাভাকিয়ায় ২১৮ জন। অর্থাৎ ২০ বছরের নিচে প্রথম সন্তান জন্মদানে শীর্ষ দেশগুলোর ভেতরে ৫.৪ শতাংশ ইংল্যান্ডে। আগে একই মাত্রা ছিল লিথুনিয়ায়। তার নিচে হাঙ্গেরি, লাটভিয়া, লিথুনিয়া ও বুলগেরিয়া। চার শতাংশের নিচে ছিল ফ্রান্স এবং তিন শতাংশে ছিল জার্মানি। এ কারণে ইউরোস্ট্যাট এজেন্সি সাবেক প্রধানমন্ত্রী টলি বেস্নয়ারের ‘টিন প্রেগন্যান্সি স্ট্র্যাটেজি’র মতো সরকারি উদ্যোগের সাফল্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে খুব সম্প্রতি টিন প্রেগন্যান্সি চিত্রে দেখা যায়, ২০১৫ সলে ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রতি এক হাজার জনে ২১ জন বালিকা গর্ভবতী হয়। যা ২০০৭ সালে ছিল ৪১ জন। তবুও সে দেশের টিন প্রেগন্যান্সি রোধে নেয়া পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
‘দ্য স্টেট অ্যান্ড দি ফ্যামিলি’র লেখক বলেন, ‘আমরা গত এক দশক ধরে শুনে আসছি সেক্স এডুকেশন বেশি বেশি দিতে পারলে অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণের সমাপ্তি ঘটবে। তবে এই পরিসংখ্যান বলছে, মানুষ যতটা ভেবেছিল সেক্স এডুকেশন ততটা সফল নয়।’

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button