তালেবান-রাশিয়া সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর

তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিল রাশিয়া, বিশ্বে প্রথম দেশ হিসেবে

রাশিয়া বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছে যে তারা আফগানিস্তানের নতুন রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছে—এতে তালেবান সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়া ইতিহাসে নাম লেখাল।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মস্কো কাবুলের সঙ্গে নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই ও মাদক-অপরাধ দমনে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে এবং সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারে ভালো সম্ভাবনা দেখছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শক্তি, পরিবহন, কৃষি ও অবকাঠামোসহ বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক খাতে উভয় দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে।
মন্ত্রণালয় বলেছে, “আমরা বিশ্বাস করি আফগানিস্তানের ইসলামী আমিরাত সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার নতুন গতি সঞ্চার করবে।”
আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি এক বিবৃতিতে বলেন, “রাশিয়ার এই সাহসী পদক্ষেপকে আমরা অত্যন্ত মূল্যায়ন করি। ইনশাআল্লাহ, এটি অন্যান্য দেশগুলোর জন্যও দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে।”
২০২১ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিশৃঙ্খল প্রত্যাহারের পর তালেবান ক্ষমতা দখল করলেও এখন পর্যন্ত কোনো দেশ সরকারটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি।
তবে চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান এবং পাকিস্তান ইতোমধ্যে কাবুলে নিজেদের রাষ্ট্রদূত পাঠিয়েছে—যা আংশিক স্বীকৃতির ইঙ্গিত বহন করে।
রাশিয়ার এই সিদ্ধান্ত তালেবান প্রশাসনের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক বিজয়, যা আন্তর্জাতিক একঘরে অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুলে দিতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ওয়াশিংটন এই পদক্ষেপ গভীর নজরে রাখবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েক বিলিয়ন ডলার সম্পদ জব্দ করে রেখেছে এবং তালেবানের শীর্ষ নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যার ফলে দেশটির ব্যাংকিং খাত আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার বাইরে চলে গেছে।
রাশিয়া ধীরে ধীরে তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে চলেছে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২৩ সালে এক বক্তব্যে তালেবানকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার মিত্র হিসেবে আখ্যা দেন।
২০২২ সাল থেকে আফগানিস্তান রাশিয়া থেকে গ্যাস, তেল ও গম আমদানি করে আসছে।
২০০৩ সালে রাশিয়া তালেবানকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করেছিল, তবে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।
রাশিয়ার আফগানিস্তানে সম্পর্ক জটিল ও রক্তাক্ত ইতিহাসে পরিপূর্ণ। ১৯৭৯ সালে কমিউনিস্ট সরকারকে টিকিয়ে রাখতে সোভিয়েত বাহিনী আফগানিস্তান আক্রমণ করে। যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত মুজাহিদিনদের দীর্ঘ প্রতিরোধে সোভিয়েতরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গরবাচেভ সেনা প্রত্যাহার করেন, তখন পর্যন্ত প্রায় ১৫,০০০ সোভিয়েত সেনা নিহত হয়েছিল।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button