পবিত্র কাবা ঘরের সংস্কার কাজ শুরু

পবিত্র কাবা ঘরের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। সোমবার (১৭ জুন) পবিত্র দুই মসজিদের খাদেম (খাদেমুল হারামাইন) বাদশাহ সালমানের নির্দেশনায় এই সংস্কার কাজ পরিচালিত হচ্ছে। তবে সংস্কার কাজ করলেও উমরা পালনকারীদের তাওয়াফে কোনো সমস্যা হবে না। ঐতিহাসিকদের মতে, পবিত্র কাবা ঘর এখন পর্যন্ত ১২ বার সংস্কার করা হয়েছে। সর্বশেষ বড় ধরনের সংস্কার কার্যক্রম পরিচালিত হয় ১৯৯৬ সালে। তখন কাবার ছাদ ভেঙে পুনর্নির্মাণ করা হয়। এমনকি দেয়ালগুলোও নতুন করে মেরামত করা হয়।

এবার যেকোনো ধরনের বিপর্যয় মোকাবেলায় সক্ষম করে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্যদিয়ে এই সংস্কার কাজ সম্পন্ন হবে। বেশ কয়েক বছর ধরে কাবার চারপাশ অর্থাৎ মসজিদে হারামের বর্ধিতাংশের নির্মাণ কাজ চলছে। ২০১৮ সালের হজ মৌসুম শেষে ব্যাপকারে জমজম কূপের সংস্কার কাজ করা হয়। সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে কাবা ঘরকে ঘিরে একটি সাদা দেয়াল দেওয়া হয়েছে। আগামী একমাসের মধ্যে পুরো সংস্কার কার্যক্রম শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে আসন্ন হজ মৌসুমে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।

সৌদি গেজেটের দেওয়া তথ্যমতে, কাবা ঘরের উচ্চতা পূর্ব দিক থেকে ১৪ মিটার। (অন্য একটি সূত্র মতে ১২.৮৪ মিটার)। পশ্চিম দিক থেকে ১২.১১ মিটার। উত্তর দিক থেকে ১১.২৮ মিটার। দক্ষিণ দিক থেকেও ১২.১১ মিটার। ভূমি থেকে কাবার দরজার উচ্চতা ২.৫ মিটার। দরজার দৈর্ঘ্য ৩.০৬ ও প্রস্থ ১.৬৮ মিটার। বর্তমান দরজা বাদশা খালেদের উপহার, যা নির্মাণে প্রায় ২৮০ কিলোগ্রাম স্বর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে। কাবার ভেতরে তিনটি কাঠের পিলার রয়েছে। প্রতিটি পিলারের ব্যাস ৪৪ সে. মি.। কাবা শরিফের ভেতরের দেয়ালগুলো সবুজ ভেলভেটের পর্দা দিয়ে আবৃত। এই পর্দাগুলো প্রতি তিন বছর পর পর পরিবর্তন করা হয়। এর ছাদে ১২৭ সে.মি. লম্বা ও ১০৪ সে.মি. প্রস্থের একটি ভেন্টিলেটর রয়েছে। যা দিয়ে ভেতরে সূর্যের আলো প্রবেশ করে। এটি একটি কাচ দিয়ে ঢাকা। প্রতিবছর দু’বার কাবা শরিফের ভেতর ধৌত করার সময় এ কাচ খোলা হয়।

কাবা শরিফের ঠিক ওপরে ঊর্ধ্ব আকাশে ‘বায়তুল মামুরে’ ফেরেশতারা অনেক আগে থেকে তাওয়াফ করে আসছিলেন। আল্লাহতায়ালা জমিনের ফেরেশতাদের বললেন, ‘তোমরা বাইতুল মামুরের আদলে একটি ঘর নির্মাণ করো।’ তখন তারা কাবা শরিফ নির্মাণ করেন। অতঃপর আল্লাহতায়ালা তাদের কাবাঘর তাওয়াফ করার নির্দেশ দিলেন। সে হিসেবে ফেরেশতারা সর্বপ্রথম এ ঘর নির্মাণ করেন। এর পর হজরত আদম (আ.) প্রথম মানব কাবা পুনর্নির্মাণ করেন। এর অনেক পর হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.) যৌথভাবে মিলে কাবার পুনর্নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন।

মক্কার কোরাইশরা ৫০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬৩১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মক্কার শাসন ও কাবার রক্ষণাবেক্ষণ করেন। তখনও একবার কাবা পুনর্নির্মাণ করা হয়। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মক্কার শাসক হিসেবে আবদুল মুত্তালিব প্রথম কাবায় স্বর্ণখচিত লৌহদরজা স্থাপন করেন। এর পর সাহাবি আবদুল্লাহ বিন জুবাইর (রা.)-এর ৬৫ হিজরি ও ৭৪ হিজরিতে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কাবা পুনর্নির্মাণ করেন। এর পর থেকে প্রয়োজন মতে কাবা ঘর পুনর্নির্মাণের পরিবর্তে সংস্কার করা হয়। ৯১ হিজরিতে উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদ বিন আবদুল মালিক কাবাঘরের ব্যাপক সংস্কার করেন।

উসমানি খেলাফতকালে ১০১৯ হিজরিতে কাবার দেয়াল বিদীর্ণ হয়ে গেলে বাদশাহ আহমদ খান তা সংস্কার করেন। ১০৩৯ হিজরিতে ভয়াবহ বন্যায় কাবার পশ্চিম দিকের দরজাটি ভেঙে পড়ে। এ ছাড়া কাবার দেয়ালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তখন বাদশাহ মুরাদ খান পাশার অর্থায়নে কাবা সংস্কার করা হয়।

প্রায় ৪০০ বছরে কিছু ছোটখাট সংস্কার ছাড়া কাবাঘরের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ১৯৯৬ সালের মে মাসে তৎকালীন বাদশাহ কাবার পুনর্নির্মাণে হাত দেন। তখন কাবা শরীফের পুরোনো পাথর বাদে সবকিছুই পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে কাবাঘরের ভেতরে দু’টি পিলার (কারও মতে ৩টি), একটি টেবিল যেখানে সুগন্ধী রাখা হয়, দু’টি হারিকেন টাইপের বাতি আছে। আর দেয়াল ও ফ্লোর মার্বেল পাথরের তৈরি। তবে ভেতরে একটি জায়গা নির্ধারণ করা আছে, যেখানে নবী করিম (সা.) নামাজ আদায় করেছেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button