যেভাবে জঙ্গল কেটে স্টেডিয়াম বানিয়েছে ব্রাজিল

Brazileএবারের ফুটবল বিশ্বকাপ ২০১৪ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আমাজানের দেশ ব্রাজিলে। দীর্ঘ ৬৩ বছর পর আবারও ব্রাজিলে এবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ। আর তাই বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতেও ব্রাজিলের ছিল জমকালো সব উপস্থাপনা। দেশটি বিভিন্ন শহরের প্রাণকেন্দ্রে একের পর এক বিশাল সব স্টেডিয়াম বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বিশ্ববাসীকে। সারাবিশ্বের ফুটবলপ্রেমী মানুষ এবার তাকিয়ে থাকবে ব্রাজিলের সাম্বা থেকে শুরু করে স্টিলট নাচসহ নানান আয়োজনের দিকে। কিন্তু ফুটবলপ্রেমী এই সাধারণ মানুষ কি জানে ব্রাজিল সরকারকে এই ফুটবল স্টেডিয়াম বানাতে গিয়ে উজাড় করতে হয়েছে আমাজানের বুক। লক্ষাধিক গাছ কাটতে হয়েছে স্টেডিয়াম বানানোর জন্য।
মানাউস ব্রাজিলের একটি ছোটো শহরের নাম। প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষের বসবাস এই শহরে। মজার বিষয় হলো এই শহরে যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য সড়ক তেমন নেই বললেই চলে। শহরের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম জলপথ। আর বহির্শহরের মানুষ যদি এই শহরে আসতে বা এখন থেকে যেতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই বিমানযোগে নতুবা জলপথে যেতে হয়। ঠিক এই শহরেই প্রায় ৪৩ হাজার আসনবিশিষ্ট একটি স্টেডিয়াম বানাতে ব্রাজিল সরকারকে অবকাঠামোগত অনেক পরিবর্তন করতে হয়েছে।
ফিফার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বলা আছে, ‘ব্রাজিলিয়ান ফুটবল প্রথাগত ধারণা থেকে বের হয়েছে, এবার নিশ্চিতভাবেই মানাউস হবে বিশ্বকাপের মূল আকর্ষণ। আমাজানের হৃদপিন্ডে এরকম অনন্য একটি স্থান নির্বাচন করার জন্য ব্রাজিলকে ধন্যবাদ।’
আমাজানের অন্য আরেকটি স্টেডিয়াম ‘ভিভালদাও’ প্রায় ধ্বংষপ্রাপ্ত হয়ে যাওয়ায় ২০১১ সালে অ্যারেনা অ্যামাজোনিয়া নামের এই স্টেডিয়ামের কাজ শুরু হয়। অবশ্য নতুন এই স্টেডিয়ামের কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের বিশ্বকাপকেজ সামনে রেখেই। স্টেডিয়াম বানানোর শুরু থেকেই বিভিন্ন পরিবেশবিদ এবং পরিবেশ বিষয়ক সংগঠনগুলো এই প্রকল্পের ব্যাপক সমালোচনা করে। সমালোকদের দাবি ছিল যে এই স্টেডিয়াম বানানোর ফলে আমাজান বনের বিপুল ক্ষতি হবে এবং যা প্রকৃতির উপর বিরুপ প্রতিক্রিয়া ফেলবে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের মতে, স্টেডিয়ামটি নির্মানকালে মোট তিনজন শ্রমিক মারা যায়। একইসঙ্গে স্টেডিয়াম বানানোর খরচ ও ডিজাইন পরিবর্তন নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। স্টেডিয়াম বানানোর অনেক উপকরণই জাহাজে করে পর্তুগাল থেকে আনা হয়েছিল। আটলান্টিক মহাসাগর এবং আমাজানের বেশকিছু নদী পার হয়ে মানাউসে পৌছাতে ওই উপকরনবাহী জাহাজের সময় লাগে ১৭ থেকে ২০ দিন।
ফুটবলপ্রেমীরা যদি ভেবে থাকেন যে সব দেশের ফুটবলাররাই ওই স্টেডিয়ামে খেলতে পারবে তাহলে ভুল ভাববেন। কারণ বিশ্বের নামি-দামি ফুটবলার এবং ধনী দেশগুলো ছাড়া অন্যান্য ফুটবল খেলুড়ে দেশগুলোর কাছে মানাউসের স্টেডিয়াম অধরাই রয়ে যাবে। ফিফার ধনী সদস্যদের মনোতুষ্টির জন্যই তৈরি করা হয়েছে ওই স্টেডিয়াম। আগামী ২২ জুন মানাউসের স্টেডিয়ামে যুক্তরাষ্ট্র বনাম পর্তুগালের খেলা অনুষ্ঠিত হবে।
তবে ইংলিশ ফুটবল কোচ রয় হডসন অবশ্য এই স্টেডিয়ামটিকে উপেক্ষা করার ঘোষণা দিয়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি স্টেডিয়ামের গরম ও চিটচিটে আবহাওয়াকে দোষারোপ করেছেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button