কুরবানী : ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর

Qurbaniমাওলানা শাহ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম:  ভূমিকা : প্রতিবারের মত বছর ঘুরে মুসলিম উম্মহর সামনে আবারো কুরবানীর ঈদ এসেছে। আনন্দঘন এ দিনকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি চলছে সর্বত্র। কিন্তু এই সময়ে মুসলিম উম্মাহ বেদনাহত, ভারাক্রন্ত। কারণ ঈদের আনন্দে শরীক হতে পারছে না সর্বনাশা যুদ্ধে বাড়ি-ঘর হারা মুসলিম শরণার্তীরা, গণহত্যার স্বীকার আরাকানের মুসলিমরা, যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশসমূহের বিড়ম্বিত আদম সন্তানেরা। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে মালিকের দরবারে আলীশানে আমরা ফরিয়াদ জানাই, মালিক হে! আপনি দুনিয়াকে নিরাময় করুন। মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ করুন সকল পক্ষকে। মা’বূদ! সকলকে হিদায়াত দান করুন। আনন্দ-বেদনার এই ঈদেও সকলকে অগ্রীম ঈদ মুবারক।
ঈদুল আজহা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দু’টো ধর্মীয় উৎসবের একটি। বাংলাদেশে এই উৎসবটি কুরবানীর ঈদ নামে পরিচিত। এর অর্থ হলো ত্যাগের উৎসব। মহান আল্লাহর জন্য সর্বস্ব ত্যাগের শিক্ষা ও স্মারক হচ্ছে কুরবানী। আর এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালা নিয়েই ঈদুল আজহা। আজকের নিবন্ধে কুরবানীর উদ্দেশ্য লক্ষ, পরিচয়, ফযীলত, ইতিহাস, তাৎপর্য, প্রকৃয়া, মাসআলা-মাসাঈল সম্পর্কে আলোচনা করবো। আশা করি এ থেকে পাঠকগণ উপকৃত হবেন।
কুরবানীর উদ্দেশ্য : মুসলমানের সকল কাজের উদ্দেশ্য মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অজর্ন করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বল! আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ সব কিছু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য।’ (কুরআন মাজীদ, সূরা : ৬, আনআম-১৬২)
কুরবানীকে আরবীতে উযহিয়্যা বলা হয়। আর উযহিয়্যা বলা হয় ঐ প্রাণীকে যা কুরবানীর দিনসমূহে যবেহ করা হয়। শরীয়তের পরিভাষায় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট প্রাণী যবেহ করাকে কুরবানী বলে। (শামী-৫/২১৯) আর এ উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবকে ঈদুল আজহা বলে।
এমনিভবে কুরবানী শব্দটি ‘কুরবুন’ আরবী শব্দ থেকে নির্গত অর্থ- নিকটবর্তী হওয়া, সান্নিধ্য লাভ করা, উৎসর্গ করা, নৈকট্যলাভ করার মাধ্যম ইত্যাদি। কুরবানীর মাধ্যমে বান্দা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে থাকে বিধায় এটাকে কুরবানী বলে। সুতরাং কুরবানীর উদ্দেশ্য হচ্ছে মহান মালিকের সন্তুষ্টি হাসিল করা।
কুরবানীর তাৎপর্য : করবানীর তাৎপর্য হচ্ছে ত্যাগ, তিতিক্ষা ও প্রিয় বস্তু মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিমিত্তে কোন পার্থিব বস্তু উৎসর্গ করাকেই ‘নুসুক’ বা কুরবানী বলে। এ কুরবানী যখন একমাত্র আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করার নিমিত্তে হবে তখন তা নাজাতের কারণ হবে। আর যদি উদ্দেশ্য ভিন্ন হয় যেমন- লোক দেখানো বা গোশ্ত খাওয়া তখন তা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চিন্তা করাটা হবে সম্পূর্ণ অবাস্তব। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘ওসব (কুরবানীর) পশুর রক্ত-মাংস আল্লাহর কাছে কিছুই পৌঁছেনা-বরং তোমাদের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া বা পরহেযগারী।’ (কুরআন মাজীদ : সূরা : হজ্জ-২২/৩৭)
মানব ইতিহাসে কুরবানীর সূচনা : বস্তুত মানব ইতিহাসের সর্ব প্রথম কুরবানী হযরত আদমের আ. এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের কুরবানী। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আদমের দুই পুত্রের বৃত্তান্ত আপনি তাদেরকে যথাযথভাবে শোনান, যখন তারা উভয়ে কুরবানী করেছিল, তখন একজনের কুরবানী কবুল হলো, অপর জনের কুরবানী কবুল হলো না।’ কুরআন মাজীদ : সুরা: মাইদা-৫/২৭।
কুরবানীর বিধান সকলের জন্যেই ছিল : মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সকল নবীর উম্মতের প্রতি কুরবানীর হুকুম ছিলো। প্রত্যেক উম্মতের ইবাদাতের এটা ছিল একটা অপরিহার্য অংশ। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি, যাতে আমি তাদেরকে জীবনোপকরণ হিসেবে যেসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছি সে গুলোর উপর তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’ (কুরআন মাজীদ : সুরা হজ্জ : ২২/৩৪)
হযরত ইবরাহীম আ.Ñএর কুরবানী : প্রচলিত কুরবানী মূলত হযরত ইবরাহীম আ. এর অপূর্ব আত্মত্যাগের ঘটনারই স্মৃতিবহ। এ ঐতিহাসিক ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে : ‘তারপর সে (ইসমাইল) যখন তার পিতার সাথে কাজ করার মত বয়সে উপনীত হলো তখন ইবরাহীম বললো, ‘হে বৎস ! আমি স্বপ্নে দেখি তোমাকে আমি যবেহ করছি, এখন তোমার অভিমত কি বল?’ সে বললো, হে আমার পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তা করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন।’ যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করলো এবং ইবরাহীম তার পুত্রকে কাত করে শায়িত করল। তখন আমি তাকে আহ্বান করে বললাম, ‘হে ইবরাহীম ! তুমি স্বপ্নাদেশ সত্যই পালন করলে। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চিতভাবেই এটি ছিল একটি প্রকাশ্য পরীক্ষা”। আমি তাকে মুক্ত করলাম এক মহান কুরবানীর বিনিময়ে। আমি ইহা পরবর্তীদের স্মরণে রেখেছি। ইবরাহীমের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি।’ (কুরআন মাজীদ : সুরা সাফফাত :৩৭/১০২-১১০)
হযরত ইবরাহীম আ. এর পুত্র কুরবানী দেওয়ার এ অবিস্মরণীয় ঘটনাকে প্রণবন্ত করে রাখার জন্য উম্মতে মুহাম্মদীর উপরও তা ওয়াজিব করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং আপনি আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালত আদায় করুন এবং কুরবানী করুন।’ (কুরআন মাজীদ : সুরা কাউসার : ১০৮/২)
এ কুরবানীকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুন্নাতে ইবরাহীম বলে অবহিত করেছেন। সুনানে ইবনে মাজাহর কুরবানী অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে, কুরবানীর বিষয়ে সাহাবীগণের পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো- ‘কুরবানী কী? উত্তরে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেলন, এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের আ. এর সুন্নাত।’
হযরত ইবরাহীম আ. এর দুই পুত্র ছিলেন। ইসমাঈল বড় ও ইসহাক ছোট। কার ঘটনা এটি? কেউ কেউ এমন প্রশ্ন করে বসেন । যদিও বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। কুরআন মাজীদের ৩৭ নং সূরা সাফফাতের ১০০নং আয়াতে উদ্ধৃত হয়েছে যে, স্বদেশ থেকে হিজরাত করার সময় হযরত ইবরাহীম আ. একটি সৎকর্মশীল পুত্রের জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করেছিলেন। এর জবাবে মহান আল্লাহ তাঁকে একটি ধৈর্যশীল সন্তানের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। বক্তব্যের অন্তর্নিহিত অর্থ পরিষ‹ার একথা জানিয়ে দিচ্ছে যে, এদু’আ ঠিক তখন করা হয়েছিল যখন তিনি ছিলেন সন্তানহীন। আর যে সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল তিনি ছিলেন তাঁর প্রথম সন্তান । তারপর কুরআন মাজীদের বক্তব্যের ধারাবাহিক বর্ণনা থেকে একথাও প্রকাশ হয় যে, সে শিশুই যখন পিতার সাথে দৌঁড় ঝাপ করার যোগ্য হয়ে গেলো তখন তাঁকে যবেহ করার ইশারা করা হলো। এখন একথা চুড়ান্তভাবে প্রমাণিত যে, হযরত ইবরাহীমের প্রথম সন্তান ছিলেন হযরত ইসমাঈল আ.। হযরত ইসহাক আ. প্রথম সন্তান ছিলেন না। সূরা ইবরাহীমের ৩৯নং আয়াতেও হযরত ইবরাহীম আ. এর সন্তানদের ধারাবাহিক বর্ণনায় রয়েছে আগে ইসমাঈলের নাম পরে ইসহাক আ. এর নাম।
কুরআনুল কারীমে যেখানে হযরত ইসহাকের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে, সেখানে তাঁর জন্য ‘গোলামুন ’আলীম/জ্ঞানবান বালক’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। (দেখুন সূরা আয-যারিয়াত ৫১/২৮ এবং সূরা হিজর :৩৫) কিন্তু এখানে যে সন্তানটির সুসংবাদ দেয়া হয়েছে তার জন্য ‘গোলামুন হালীম/ধৈর্যশীল বালক’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ থেকে প্রমাণিত হয়, দুই পুত্রের দু’টি পৃথক বৈশিষ্ট্য ছিল এবং যবেহ করার হুকুমটি জ্ঞানবান সন্তানের জন্য ছিল না, ছিল ধৈর্যশীল সন্তানের জন্য।
নির্ভরযোগ্য বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত ইসমাঈলের আ. এর বিনিময়ে যে ভেড়াটি যবেহ করা হয়েছিল তার শিং কা’বা ঘরে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের যমানা পর্যন্ত সংরক্ষিত ছিল। পরবর্তীতে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ যখন হারাম শরীফে ইবনে যুবাইরকে অবরোধ করে এবং কা’বা ঘর ভেঙে ফেলে এবং ঐ শিংটিও নষ্ট হয়ে যায় । আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও আমের শা’বী উভয়ই এমর্মে সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তাঁরা নিজেরা কা’বা ঘরে ঐ শিং দেখেছিলেন (তাফসীরে ইবনে কাসীর)। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কুরবানীর এ ঘটনা সিরিয়ায় নয়, মক্কা মু’আযযামায়ই সংঘটিত হয়েছিল এবং হযরত ইসমাঈলের সাথেই ঘটেছিল। তাইতো হযরত ইবরাহীম আ. ও ইসমাঈলের নির্মিত কা’বা ঘরে তাঁর স্মৃতি চিহ্ন সংরক্ষিত রাখা হয়েছিল।
কুরবানীর ফাযাইল
কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কুরবানীর অসংখ্য ফযীলতের কথা হাদীস শরীফে বণির্ত হয়েছে। আদম আ. এর যুগ থেকে এর প্রচলন হয়েছে। প্রায় সকল নবীর শরীয়তেই ছিল এ বিধান; যদিও পদ্ধতিগত কিছু তারতম্য বিদ্যমান ছিল। তবে এর মূল শিক্ষা হলো মালিকের বিধানের সামনে নিজের মস্তক অবনত করা। যদিও এর রহস্য অনুধাবন করতে আমাদের বিবেক-বুদ্ধি অক্ষম হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আত্মনিবেদনের শিক্ষা জাগ্রত করার লক্ষে ইবরাহীমী সুন্নত অনুসারে উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্যেও এ গুরুত্বপূর্ণ বিধান বহাল রেখেছেন। তাই মহানবী সা. এর অনেক ফযীলত ও কল্যাণ কথা তুলে ধরেছেন। ইরশাদ করেছেন : ‘কুরবানীর প্রাণীর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে রয়েছে সাওয়াব।’ অন্যত্র ইরশাদ করেছেন : ‘কুরবানীর দিন মহান আল্লাহর নিকট বনী আদমের সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো, কুরবানীর পশু যবাই করা। এই পশু কিয়ামতের দিন স্বীয় শিং, ক্ষুর ও পশম নিয়ে আসবে। আর নিশ্চয় পশুর রক্ত যমিনে পড়ার আগেই আল্লাহর নিকট তা গ্রহণযোগ্য হয়ে যায়। অতএব কুরবানীর মাধ্যমে তোমরা ধন্য হও’। (সুনানু ইবনে মাজাহ : ৩/১০৬, বায়হাকী : ৯/৪৮৫, তিরমিযী : ৩/৪৯৬)
যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব
১০ যিলহজ সুবহে সাদিক থেকে ১২ যিলহজ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কোন প্রাপ্তবয়স্ক, বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন, ‘মুকিম’ শরয়ী মুসাফির নয়-এমন ব্যক্তি যদি ঋণমুক্ত এবং মৌলিক প্রয়োজনাতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, (অর্থাৎ সে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা বা তৎসমমূল্যের নগদ অর্থ অথবা কিছু স্বর্ণ কিছু রূপা এবং কিছু প্রয়োজনাতিরিক্ত জিনিসের মালিক হয়-যেগুলোর সমষ্টিগত মূল্য হিসাব করা হলে, সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার সমমূল্য হয় কিংবা তার মালিকানায় শুধু স্বর্ণ থাকে-প্রয়োজনাতিরিক্ত অন্য কোন জিনিস এমনকি এক/দুই টাকাও না থাকে-আর ঐ স্বর্ণ কমপক্ষে সাড়ে সাত ভরি পরিমাণ হয়,) তবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। পরিবারের একাধিক সদস্য নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে, প্রত্যেকের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। যে কোন একজন কুরবানী করলে, বাকি সদস্যদের কুরবানী আদায় হবে না। অবশ্য যার উপর কুরবানী ওয়াজিব তার নির্দেশে কিংবা অনুমতিক্রমে অন্য কেউ তার পক্ষ থেকে কুরবানী করলে, সেক্ষেত্রে কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। (সুনানু ইবনে মাজাহ : ৩/১০৫, মাবসূত : ১২/১২, হিন্দিয়া : ৫/৩৩৬,৩৩৭, হিদায়া : ৪/৪৪৩, আদদুর মুখতার ও শামী : ৯/৫২২)
কুরবানী কেবল নিজের পক্ষ থেকে ওয়াজিব; সন্তানাদি এবং স্ত্রীর পক্ষ থেকে ওয়াজিব নয়। (মাবসুত : ১২/১৮, আদদুর মুখতার : ৯/৫২৪, হিন্দিয়া : ৫/৩৩৮)
যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়, তারা সাওয়াব অর্জনের নিয়তে কুরবানী করলে, তাদের কুরবানী বৈধ হবে। (বাদায়িউস সানায়ি : ৬/২৬৮, কাযিখান : ৩/২৪৪)
কুরবানীর সময়
১০, ১১ ও ১২ যিলহজ্জ-এই তিন দিন কুরবানীর সময়। তাই ১০ যিলহজ ঈদের নামাযের পর থেকে ১২ যিলহজ্জ সুর্যাস্তের আগ পর্যন্ত যে কোন সময় কুরবানী করা যাবে। তবে সর্বোত্তম হলো, ১০ তারিখ এরপর যথাক্রমে ১১ ও ১২ তারিখ। সুতরাং বিনা কারণে বিলম্ব করা অনুত্তম। রাতে অন্ধাকারাছন্নতার কারণে যবাই করার ক্ষেত্রে কোনরূপ ত্রুটি-বিচ্যুতির আশংকা হলে তখন কুরবানী করা মাকরূহ। (মাবসূত: ১২/২৪, বাদায়িউস সানায়ি: ৬/২৭৩, শামী: ৯/৫৮৭)
কেউ ঈদের নামাযের আগে কুরবানীর প্রাণী যবাই করলে, কুরবানী আদায় হবে না। তবে শহরের যে কোন এক জায়গায় ঈদের নামায আদায় হয়ে গেলে, আশপাশের অন্যান্য জায়গার লোকজনও কুরবানী করতে পারবে। তথাপি নামায আদায়ের পর যবাই করা উত্তম। (বুখারী শরীফ : ২/৮৩৩, মুসলিম : ১২/৯১, মাবসূত : ১২/১৩ শামী : ৯/৫২৮, বাদায়িউস সানায়ি : ৬/২৯৫, হিন্দিয়া : ৫/৩৪৪)
কুরবানীর জন্তু
কুরবানী কেবল উট, গরু, মহিষ, ভেড়া, দুম্বা ও ছাগল দ্বারা দেয়া যাবে। এছাড়া অন্য কোন পশু দ্বারা কুরবানী দেয়া যাবে না। এক্ষেত্রে উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর; গরু ও মহিষের বয়স কমপক্ষে দুই বছর; ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স কমপক্ষে এক বছর হতে হবে। অবশ্য ছয় মাসের অধিক বয়সী ভেড়া বা দুম্বা যদি এমন মোটা-তাজা হয় যে, এক বছর বয়সী ভেড়া বা দুম্বার মাঝে ছেড়ে দেয়া হলে সেগুলোর বয়স কম হওয়ার বিষয়টি সনাক্ত করা যায় না, তবে সেগুলো দ্বারাও কুরবানী করা যাবে। উল্লেখ্য, এ বিধান ছাগলের ক্ষেত্রে কোনক্রমেই প্রযোজ্য নয়। (হিন্দিয়া : ৫/৩৪৩, বাদায়িউস সানায়ি : ৬/২৮৪, ২৮৫)
কুরবানীর প্রাণী যথাসম্ভব সুন্দর, সুস্থ, সবল ও মোটা তাজা এবং সব ধরণের দোষত্রুটি মুক্ত দেখে ক্রয় করা উত্তম। (বাদায়িউস সানায়ি : ৬/৩১৩, হিন্দিয়া : ৫/৩৪৬)
কোন কান নেই অথবা কানের এক তৃতীয়াংশ বা ততোধিক পরিমাণ নেই-এমন প্রাণী দ্বারা কুরবানী করা যাবে না। তদ্রুপ অন্ধ কিংবা কোন এক চোখের এক তৃতীয়াংশ বা তদোর্ধ্ব পরিমাণ দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে-এমন প্রাণী দ্বারাও কুরবানী করা যাবে না। অবশ্য জন্ম থেকে কোন প্রাণীর কান ছোট হলে, তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে। (আলমগীরী : ৫/ ৩৪৪, শামী : ৯/৫৩৭, তাতার খানীয়া : ১৭/৪২৬, বাদায়িউস সানায়ি: ৫/২৯৯)
যে পশুর পায়ে সমস্যার কারণে এক পা যমিন থেকে পরিপূর্ণ উঠিয়ে চলে অথবা যমিনে পা রাখে কিন্তু সেই পায়ের উপর ভর দেয় না-এমন পশু দ্বারাও কুরবানী করা যাবে না। অনুরূপভাবে অত্যাধিক ক্ষীণকায় ও দুর্বল পশু-যা যবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেটে যেতে অক্ষম, তা দ্বারাও কুরবানী করা যাবে না। (শামী : ৯/৫৩৬,৫৩৭, হিদায়া ৪/৪৪৭, বাদায়িউস সানায়ি : ৫/২৯৯)
জেনে-শুনে গর্ভবতী পশু দ্বারা কুরবানী করা অনুচিত। বিশেষত প্রসবের সময় নিকটবর্তী-এমন প্রাণী দ্বারা কুরবানী করা মাকরূহ। তবে ঘটনাক্রমে যবেহ করার পর পেটে বাচ্চা পাওয়া গেলে সে বাচ্চাও যবেহ করা যাবে। (শামী : ৯/৫০৭,৫৩৪,৫৩৫, হিন্দিয়া : ৫/৩৩১,৩৪৫)
যে পশুর এক তৃতীয়াংশ বা ততোধিক পরিমাণ দাঁত না থাকার ফলে ঠিক মত ঘাস-পাতা ইত্যাদি খেতে পারে না, তা দ্বারাও কুরবানী করা যাবেনা।  (বাদায়িউস সানায়ি : ৫/২৯৯, শামী : ৯/৫৩৬)
যে পশুর এক তৃতীয়াংশ বা ততোধিক পরিমাণ লেজ পড়ে গেছে, তা দ্বারাও কুরবানী করা যাবে না। (আদদুরুল মুখতার : ৯/৫৩৬,
যবাই করার সময় উপরোক্ত দোষ-ত্রুটি যুক্ত হলে ঐ পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে। (আদদুরুল মুখতার : ৯/৫৩৯)
শরীকি কুরবানী
একটি ছাগল বা ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা কেবল একজনই কুরবানী করতে পারে, একাধিক ব্যক্তি এগুলোতে শরীক হলে, কারো কুরবানী আদায় হবে না। অবশ্য উট, গরু, মহিষ দ্বারা যৌথভাবে কুরবানী করতে চাইলে, সর্বোচ্চ সাত ব্যক্তি কুরবানী করতে পারবে। (হিদায়া : ৪/৪৪৯ আদদুররুল মুখতার : ৯/৫৩৩,৫২৪, বাদায়িউস সানায়ি : ৬/২৮৭)
যৌথভাবে কুরবানী করার ক্ষেত্রে শরীকদের প্রত্যেকের অবস্থা যাচাই-বাচাই করা উচিত। কারণ শরীকদের মধ্য হতে কারো আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কোন নিয়ত থাকলে কিংবা কারো প্রদেয় অর্থ হারাম হলে সকলের কুরবানী নষ্ট হয়ে যাবে। এ বিবেচনায় একাকী কুরবানী করা ভালো। যাতে করে একজনের কারণে অপর জনের কুরবানী নষ্ট না হয়। (বাদায়িউস্ সানায়ি : ৬/২৯০ আলমগীরী : ৫/৩৫১, শামী : ৯/৫৪০)
নফল ও সাধারণ-ওয়াজিব কুরবানীর প্রাণীতে আকীকা, সুন্নত-ওলীমা এবং বৈধ মানত ও অসিওতের কুরবানীর জন্য অংশ রাখা যাবে। কারণ একই প্রাণীতে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করা যায়। (মাবসূত : ১২/১৫, শামী : ৯/৫৪০)
ঈছালে ছাওয়াবের নিয়তে মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকেও কুরবানী করা যাবে। এমনকি রাসুলুল্লাহ সা. এবং সাহাবায়ে কিরাম ও তাবিয়ীনদের পক্ষ থেকেও কুরবানী করা যাবে। (তিরমিযী : ৩/৪৯৬, ইলাউসসুনান : ১৭/২৬৮, তাতারখানিয়া : ১৭/৪৪৪, বাদায়িউস সানায়ি : ৬/২৭৭)
যবাই : প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের কুরবানীর পশু নিজেই যবাই করা উত্তম। নিজে যবাই করতে না পারলে অন্যের মাধ্যমে করানো যাবে। তবে সেক্ষেত্রে নিজে সামনে থাকা উত্তম। (আসসুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী : ৫/৫২১, আদদুররুল মুখতার ও শামী : ৯/৫৪২, বাদায়িউস সানায়ি : ৬/৩১০)
যে কোন পশু যবাই করার পদ্ধতি হলো, পশুর মুখ কেবলামুখী করে ধারালো ছুরি হাতে নিয়ে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে তার গলায় এমন ভাবে ছুরি চালাবে, যাতে করে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং উভয় শাহ-রগ তথা রক্ত নালী কাটা যায়। তবে এ চারটি রগের যে কোন তিনটি রগ কাটা গেলেও যবাই হয়ে যাবে এবং ঐ পশুর গোশত হালাল হবে। পক্ষান্তরে তিনটির কম কাটা গেলে ঐ প্রাণী মৃত বলে গণ্য হবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা : ১০/৪২৫-৪২৬, ইলাউস সুনান : ১৭/৭৯,৮০, বাদায়িউস সানায়ি : ৬/২০৪, হিন্দিয়া : ৫/৩৩০ )
যবাই করার সময় অবশ্যই আল্লাহ তা’আলার নাম নিতে হবে। ইচ্ছাকৃত আল্লাহ তা’আলার নাম উল্লেখ না করলে, ঐ প্রাণী মৃত বলে গণ্য হবে। ঠিক তদ্রুপ যবাইয়ের ক্ষেত্রে যবাইকারীকে কেউ সাহায্য করতে চাইলে তাকেও বিসমিল্লাহ বলতে হবে। কারণ মৌলিক তিন রগের কোন রগ যদি সাহায্যকারীর ছুরি দ্বারা কাটা যায়-আর সে ‘বিসমিল্লাহ’ না বলে থাকে, তবে ঐ প্রাণীও মৃত বলে গণ্য হবে। সুতরাং বড় ছুরি চালানোর পর অন্য কেউ ছোট ছুরি বা দা চালাতে চাইলে, ‘বিসমিল্লাহ’ বলার ব্যাপারে তাকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। (সূরা : হজ : ৩-৪, সূরা : আন‘আম : ১২১, আহকামুল কুরআন লিল জাস্সাস : ২/৪৩৪, মুসনাদে আহমদ : ২৫/১১১, হিদায়া : ৪/৪৩৪, আদদুরল মুখতার : ৯/৫৫১)
যবাইয়ের সময় প্রাণীকে অপ্রয়োজনীয় ও অযথা কোন রূপ কষ্ট দেয়া যাবে না। তাই যবাই করার পূর্বেই ছুরি ধার দিতে হবে এবং প্রাণীকে শুয়ানোর পরপরই যত দ্রুত সম্ভব জবাই করতে হবে। আর যবাই করার পর পশুর শরীর সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত চামড়া ছাড়ানো যাবে না। (মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক : ৪/৪৯২, হিন্দিয়া : ৫/৩৩১-৩৩২, বাদায়েউস সানায়ে : ৬/২৫২-২৫৫, জাওয়াহেরুল ফিক্হ : ৬/৩২৭)
যে ব্যক্তি প্রাণী যবাই করবে বা গোশত বানাবে, তাকে কুরবানীর পশুর গোশত বা চামড়া ইত্যাদি দ্বারা পারিশ্রমিক দেয়া যাবে না। তাকে পৃথকভাবে পারিশ্রমিক দিতে হবে। (সহীহ বুখারী : ৩/৬৩১, বাদায়িউস সানায়ি : ৬/৩১৬, আল-ফিকহুল হানাফী : ৫/২১৭)
শরীকদের কেউ প্রাণী যবাই করলে তার জন্য পারিশ্রমিক নেয়া বৈধ হবে না। (শামী : ৯/১০১-১০২, আল ফিক্হুল হানাফী : ৪/৪১০)
প্রাণী যবাইয়ের সময় কুরবানীদাতাদের নাম বলা জরুরী নয়। বরং প্রাণী শোয়ানোর পর নাম বলার জন্য যবাই বিলম্ব করা মাকরূহ। (হিদায়া : ৪/৪৫১, আল ফিকহুল হানাফী : ৫/২১৮-২১৯, বাদায়িউস সানায়ি : ৬/২৫২-২৫৫)
গোশত ভক্ষণ ও বণ্টন
নফল ও সাধারণ ওয়াজিব-কুরবানীর গোশত কুরবানীদাতা নিজে খেতে পারবেন; ধনী, গরীব- সকলকে খাওয়াতে পারবেন; আত্মীয়-স্বজনসহ অন্য যে কাউকে দিতে পারবেন এবং প্রক্রিয়াজাতকরে কুরবানী পরবর্তী সময়েও খেতে পারবেন। আকীকার গোশতের বিধানও ঠিক অনুরূপ। উল্লেখ্য যে, ‘সন্তানের মাতা পিতা আকীকার গোশত খেতে পারবে না’-এ কথাটি সঠিক নয়। (ইলাউস সুনান : ১৭/২৬২, তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম : ৩/৩২৫, হিন্দিয়া : ৫/৩৪৬, শামী : ৯/৫৪১,৫৪২, )
মান্নতের কুরবানীর গোশত নিজে এবং নিজের অধঃস্তন যেমন ছেলে-মেয়ে নাতী-নাতনী ইত্যাদি) ও উর্ধ্বতন যেমন পিতা-মাতা, দাদা-দাদী এরা কেউ খেতে পারবে না। স্বামী-স্ত্রীও-একজন অন্য জনের মানতের গোশত খেতে পারবে না এবং ধনীরাও তা থেকে খেতে পারবে না। তদ্রুপ মৃত ব্যক্তির ওসিয়তের পরিপ্রেক্ষিতে কুরবানীকৃত পশুর গোশতেরও একই বিধান। মূলকথা হলো, মানত এবং ওসিয়তের কুরবানীর গোশত কেবল যাকাতের উপযুক্ত ব্যক্তিরাই খেতে পারবে; অন্যরা তা খেতে পারবে না। (শামী : ৯/৫৪০,৫৪২, ৫৫৪, ইলাউস সুনান : ১৭/২৮৮, হিন্দিয়া : ৫/৩০০)
কুরবানীর গোশত তিনভাগে বিভক্ত করে এক ভাগ নিজের জন্য; একভাগ আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের জন্য; আর এক ভাগ গরীবদের দান করার জন্য রাখা মুস্তাহাব। তবে এক্ষেত্রে কম-বেশি করা বা সবগুলো নিজের জন্য রেখে দেয়াও জায়েয। শরীকি কুরবানীর ক্ষেত্রে সকলের সম্মতিক্রমে যৌথ অংশ থেকেও দান-সদ্কা করা যাবে। (ইলাউস সুনান :১৭/২৬২, তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম : ৩/৩২৫, শামী:  ৯/৫৪২, ইমদাদুল ফতওয়া : ৩/৫৪৯)
কুরবানীর প্রাণীর কোন কিছু বিক্রি করা কিংবা শ্রমিককে পারিশ্রমিক হিসেবে দেয়া জায়েয নেই। অবশ্য যথাযথ পারিশ্রমিক পৃথকভাবে দেয়া হলে, তাদেরকে সদ্কা বা হাদিয়া হিসেবে যে কোন কিছু দেয়া যাবে। তথাপি কেউ কুরবানীর পশুর কোন কিছু বিক্রি করলে বা পারিশ্রমিক হিসেবে কাউকে প্রদান করলে, তার মূল্য সদকা করে দেয়া ওয়াজিব। (ইলাউস সুনান : ১৭/২৫৯,শামী : ৯/৫৪৩,  হিন্দিয়া : ৫/৩৪৮)
শরীকি কুরবানীর ক্ষেত্রে গোশত সঠিকভাবে ওজন করে বণ্টন করতে হবে। অনুমানের ভিত্তিতে বণ্টন করা বৈধ নয়। (শামী : ৯/৫২৭, হিন্দিয়া : ৫/৩৫২, আল ফিক্হুল হানাফী ফি সাওবিহিল : ৫/২১৫)
প্রাণীর প্রবাহিত রক্ত, যোনী, যৌনাঙ্গ, মলদ্বার, মুত্রথলী, পিত্তথলী, চামড়া ও গোশতের মাঝে অবস্থিত মাংশপি- এবং ঘাড়ের রগ ব্যতীত বাকী সকল কিছইু খাওয়া যাবে। (সূরা : আরাফ : ৫৭, মুসান্নাফে আব্দুররাযযাক: ৪/৫৩৫, বাদায়েউস সানায়ে : ৬/২৫৫, ইমদাদুল মুফতীন : ৮০৫)
পশুর চামড়া : নফল ও সাধারণ ওয়াজিব-কুরবানীর পশুর চামড়া, ব্যক্তি যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে-নিজে খেতে পারবে; প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার করতে পারবে; আবার হাদিয়া বা দান-সদকাও করতে পারবে। তবে বিক্রি করলে সে টাকা যাকাতের উপযুক্ত ব্যক্তিদের মাঝে দান করে দিতে হবে। পক্ষান্তরে মানত ও ওসিয়তের কুরবানীর চামড়া কেবল যাকাতের উপযুক্ত ব্যক্তিরাই গ্রহণ করতে পারবে। এক্ষেত্রে তাদেরকে সরাসরি চামড়া দেয়া যেতে পারে বা বিক্রি করে টাকাও দেয়া যেতে পারে। (সূরা : তওবা: ৬০, মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক : ৪/৩১৩, হিন্দিয়া : ৫/৩৪৭, হিদায়া : ৪/৩৬০, শামী : ৯/৫৪৩)
ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশের বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয় এর পরিবেশ অধিদপ্তর এক প্রজ্ঞাপনে বলেছে-
ঈদুল আজহা উপলক্ষে কুরবানীকৃত পশুর উচ্ছিষ্টাংশ পরিবেশ সম্মতভাবে অপসারণে করণীয় : পশু যবাইয়ের পূর্বে গর্ত করে নিন। গর্তের মধ্যে রক্ত, গোবর ও পরিত্যাক্ত অংশ রেখে মাটি চাপা দিন। যবাইকৃত পশুর রক্ত ও অপ্রয়োজনীয় অংশ নর্দমা কিংবা যেখানে সেখানে ফেলবেন না। যবাইকৃত পশুর উচ্ছিষ্টাংশ ডাস্টবিনে ফেলুন। কুরবানীকৃত পশুর বর্জ দ্রুত অপসারণের জন্য প্রয়োজনবোধে নিকটস্থ সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদকে সংবাদ দিন। কুরবানীর পরে আপনার পরিবেশ যেন দুষিত না হয় সেজন্য পশুর রক্ত, মল-মূত্র পরিষ্কার করুন।  কুরবানীর বর্জ অপসারণে বা কুরবানীর গোশত বিতরণে পরিবেশ সম্মত ব্যগ/পাত্র ব্যবহার করুন। কুরবানী একটি ধর্মীয় অনুশাসন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করে ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করুন।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে নেক কাজে করার ও নেক কাজে সহযোগিতা করার তাওফীক দেন। আমীন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button