এ কি বললেন মতিয়া চৌধুরী

স্টালিন সরকার : একি কথা বললেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। এক সময়ের বামপন্থী এই নেত্রী নারী সমাজের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে তিনি রংপুর জেলার নারীদের তিনি এতো নীচে নামালেন কেন? হেফাজতের আমীর আল্লামা শফীর সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি রংপুরের মেয়েদের সম্ভ্রমহানি করলেন। রংপুরের মেয়েরা পতিতাবৃত্তিতে নাম লেখাতে তিনি যে ‘সরকারি রেজিষ্ট্রেশনের’ কথা উল্লেখ করেছেন সে রেজিষ্ট্রেশন কি দেখাতে পারবেন? সংসদে দেয়া কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর এই বক্তব্য নিয়ে ঢাকায় অবস্থানরত বৃহত্তর রংপুরের মানুষ এবং রংপুরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
জাতীয় সংসদে গতকাল হেফাজতের আমীর আল্লামা আহমদ শফীর ভিডিও ফুটেজের বক্তব্য নিয়ে বিষোদগার করে নারীর সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে রংপুরে মেয়েরা ক্ষুধার জ্বালায় ভাতের দাবিতে সরকারি দফতরে রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে পতিতাবৃত্তিতে নেমেছিল। তখন শফি আহমদ কোথায় ছিলেন? তিনি তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেননি কেন?’ আহমদ শফী সেদিন কোথায় ছিলেন তা নিয়ে মাথা না ঘামালেও রংপুরের মানুষের প্রশ্ন মতিয়া চৌধুরী সেদিন কোথায় ছিলেন? এ তথ্য তিনি কোথায় পেলেন? সংসদে মতিয়া চৌধুরীর এ বক্তব্য শোনার পর রংপুরের বিক্ষুব্ধ এক সাংবাদিক বললেন, রংপুরের মেয়েরা যখন ভাতের দাবিতে রেজিষ্ট্রেশন করে পতিতাবৃত্তিতে নেমেছিল তখন মতিয়া চৌধুরী কোথায় ছিলেন? তিনি কি দেখেছেন রংপুরের মেয়েরা পতিতার খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন ভাতের দাবিতে? যদি ভাতের জন্য মেয়েদের পতিতাবৃত্তিতে নামেন হয় তাহলে রংপুরের ‘বউ’রা কি ঘরে বসেছিলেন? মতিয়া চৌধুরীর কাছে এ প্রশ্ন করছেন রংপুরের মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাতো রংপুরের ‘বউ’।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় ’৭৯ সালে বেগম মতিয়া চৌধুরী সিপিবি করতেন। তিনি তখন আওয়ামী লীগের ওপর এতোই ক্ষুব্ধ ছিলেন যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গায়ের চামড়া দিয়ে ‘ডুগডুগি’ বাজাতে চেয়েছিলেন। ’৭৯ সালের শেষের দিকে আওয়ামী লীগে যোগদানের পর  তিনি ‘হঠাৎ বঙ্গবন্ধুর সৈনিক’ হয়ে যান। তথাকথিত এই অগ্নিকন্যার  মানুষকে ‘বোকা বানানোর’ রাজনৈতিক কা- কারখানা মানুষ গত কয়েক বছরে দেখেছে। আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে থাকে তখন আন্দোলনের সময় হঠাৎ রাস্তায় শুয়ে সিনক্রিয়েট (দৃশ্যের অবতারণা) করে তিনি আলোচনায় থাকার চেষ্টা করেছেন। বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের শাসনামলেও মতিয়া চৌধুরী ‘সৎ জীবনযাপনে অভ্যস্ত’ প্রমাণের জন্য মতিঝিলে চাউলের ট্রাকের (বিডিআর পরিচালিত ন্যায্য মূল্যের দোকান) সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে ৫ কেজি চাল কিনেছেন। টাকা খরচ করে সংবাদিকদের এনে সে চিত্র ধারণের পর টিভিতে প্রচার করেছেন। ড. ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের শাসনামলে কারওয়ান বাজারে ফুটপাতে ‘ভাগা দেয়া পঁচা বেগুন, দু’টাকার মরিচ আর ভাঙ্গা করলা’ কিনে তা ক্যামেরায় ধারণ করে মিডিয়ায় প্রচার করেছেন। এ প্রসঙ্গে রংপুরের এক সাংবাদিক বলেন, মতিয়া চৌধুরী এ কথা বলে শুধু রংপুরের মেয়েদের নয়, রংপুরের নারীসমাজকে অপমান করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা রংপুরের মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সম্ভ্রমহানি ঘটিয়েছেন। রংপুরের ‘বধু’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও অপমান করেছেন। রংপুরের সন্তান জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সংসদে মতিয়া চৌধুরী রংপুরের মেয়েদের সম্পর্কে মিথ্যাচার করেছেন। রংপুরের নারী সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সংসদেই এ জন্য মতিয়া চৌধুরীকে রংপুরের নারীসমাজসহ দেশের নারী সমাজের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
এদিকে সংসদে মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্যের খবর রংপুরে পৌঁছলে সেখানের ক্ষুব্ধ নারী-পুরুষ বিক্ষোভ করে। তারা মতিয়া চৌধুরীর কুশ পুত্তলিকা দাহ করে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button