প্রসঙ্গ: হজ্বের সফরে ছবি তোলা

মুফতী পিয়ার মাহমুদ: মানব জীবনে হজ্বের গুরুত্ব ও উপকারিতা অপরিসীম। এটি ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম একটি স্তম্ভ। সাহাবী ইবনে উমর রা. এর বর্ণনায়রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। ১.এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল। ২.নামায কায়েম করা। ৩.যাকাত আদায় করা। ৪.হজ্ব করা। ৫. রমাযানের রোযা রাখা। (বুখারী:৪; মুসলিম:১৯)

নবীজীর যবান মুবারকে এই হজ্বের ফাযায়েল বর্ণিত হয়েছে প্রচুর পরিমাণে। যার সামান্য ধারণা নেয়া যেতে পারে নিম্নে বর্ণিত হাদীসগুলো থেকে। হজ্বের ফযীলত বর্ণনায় সাহাবী আবু হুরায়রা রা. বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছি- “যে ব্যক্তি অশ্লীলতা ও কটুক্তি থেকে বিরত থেকে হজ্ব কার্য সম্পন্ন করে, সে সদ্যপ্রসূত সন্তানের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে।” (বুখারী:১৫২১)
সাহাবী আবু হুরায়রা রা. এর অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো, কোন আমলটি সর্বোৎকৃষ্ট? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। আবার প্রশ্ন করা হলো, এরপর কোন আমলটি সর্বোৎকৃষ্ট? তিনি বললেন,আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। আবার প্রশ্ন করা হলো,এরপর কোন আমলটি? তিনি বললেন, হজ্বে মাবরুর। (যে হজ্ব আল্লাহর দরবারে কবূল হয়েছে)।” (বুখারী: ১৫১৯)
আম্মাজান আয়েশা রা. বলেন, “আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! জিহাদ অতি উৎকৃষ্ট মানের একটি আমল। অতএব আমরা কি জিহাদ করব না? তিনি বলেলন, না; তোমরা জিহাদ করবে না। তবে তোমাদের সর্বোৎকৃষ্ট জিহাদ হলো, হজ্বে মাবরুর।” (বুখারী: ১৫২০)
অন্য এক বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তিন ব্যক্তির দায়িত্ব ভার আল্লাহ তাআলা গ্রহণ করেছে। ১. যে ব্যক্তি কোন মসজিদের দিকে বের হয়। ২. যে ব্যক্তি আল্লাহ পথে জিহাদে বের হয়। ৩. যে ব্যক্তি হজ্বের উদ্দেশে বের হয়। (হিলয়াতুল আওলিয়া: ৯/২৬২) সাহাবী উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম ইরশাদ করেন, “তোমরা অব্যাহতভাবে হজ্ব ও ওমরা করতে থাক। কেননা অব্যাহতভাবে হজ্ব ও ওমরা করতে থাকা বয়স বৃদ্ধি করে, দারিদ্রতা দূর করে এবং গুনাহকে সেভাবে মোচন করে যেভাবে কামারের হাপর লোহার মরিচা বিদূরিত করে। (শুআবুল ঈমান, বায়হাকী: ৩৮০১)
আম্মাজান আয়েশা রা এর বর্ণনায় মহানবী সাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম আরও ইরশাদ করেন, “যে কেউ হজ্ব বা ওমরার সফরে থেকে মৃত্যু বরণ করবে, পরকালে তাঁর কোন হিসাব-নিকাশ হবে না। তাকে বলা হবে তুমি বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ কর। আর আল্লাহ তাআলা তওয়াফকারীদের নিয়ে অহংকার করেন।” (শুআবুল ঈমান, বায়হাকী: ৩৮০২; ৩৮০৩; ৩৮০৪)
সাহাবী আবু হুরায়রার রা. বাচনিক রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম ইরশাদ করেন, “একটি ওমরা আদায় করে আরেকটি ওমরা আদায় করলে দুই ওমরার মধ্যবর্তী সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায় এবং মাবরুর হজে¦র প্রতিদান কেবলই জান্নাত।” ( শুআবুল ঈমান,বায়হাকী: ৩৭৯৭) অর্থাৎ যার হজ্ব কবূল হয়েছে, সে কখনো জাহান্নামে যাবে না। পরকালে জান্নাত ব্যতিত তাঁর কোন ঠিকানা হবে না।
আম্মাজান আয়েশা রা এর বর্ণনায় মহানবীসাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম আরও ইরশাদ করেন, “আরোহী হাজ্বীগণের সাথে ফেরেস্তাগণ মুসাফাহা করেন আর পায়দল হাজীগণের সাথে করেন মুআনাকা।” ( শুআবুল ঈমান, বায়হাকী: ৩৮০৫)
সাহাবী আবু হুরায়রার রা. বাচনিক রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে কেউ হজ্ব, ওমরা বা জিহাদের সফরে পথে মৃত্যু বরণ করবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামত পর্যন্ত তার আমলনামায় হাজ্বী, গাজী ও ওমরাহকারীর সওয়াব লিখতে থাকবেন।”(শুআবুল ঈমান, বায়হাকী: ৩৮০৬)
অন্য বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম ইরশাদ করেন,“আল্লাহর প্রতিনিধি তিন শ্রেণীর লোক। ১. আল্লাহ রাস্তায় জিহাদকারী। ২. হজ্বকারী। ৩.ওমরাকারী। তাদের যে কেউ তাকবীর ও তাহলীল পাঠ করে তাকে বলা হয় জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করুন।” (শুআবুল ঈমান, বায়হাকী: ৩৮০৬) আরেক বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম ইরশাদ করেন,“হজ্ব ও ওমরাকারীগণ আল্লাহর প্রতিনিধি। তাঁরা যদি প্রার্থনা করেন, তবে তাদের প্রার্থনা পুরো করা হয়। আর যদি কোন দুআ করেন, তবে সেই দুআ কবূল করা হয়। আর আল্লাহর রাস্তায় খরচ করলে তার উত্তম প্রতিদান দেয়া হয়। সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ। তারা যখন তাকবীর-তাহলীল পাঠ করে তাদের সাথে তাদের সামনের সকল কিছুই তাকবীর-তাহলীল পাঠ করে। (শুআবুল ঈমান, বায়হাকী: ৩৮০৯, ৩৮১০, ৩৮১২)
সাহাবী আবু হুরায়রার রা. বাচনিক রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম ইরশাদ করেন, “হজ্ব ও ওমরাকারীগণ আল্লাহর প্রতিনিধি। তাঁরা যদি কোন দুআ করেন, তবে সেই দুআ কবূল করা হয়। আর তাঁরা ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেন।” (শুআবুল ঈমান, বায়হাকী: ৩৮১১)
সাহাবী আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম দুআ করে বলেছেন, “হে আল্লাহ! আপনি হাজীদেরকে ক্ষমা করুন এবং তাদেরকেও ক্ষমা করুন যারা হাজীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। (শুআবুল ঈমান, বায়হাকী: ৩৮১৭)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মসজিদে হারামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে কোন বাহনে আরহণ করে, বাহনের প্রতি কদমে কদমে তার জন্য একটি করে নেকী লিখা হয়। একটি করে গুনাহ মাফ হয়। একটি করে মর্তবা বলুন্দ হয়। এভাবে চলতে থাকে বাইতুল্লাহ পর্যন্ত। বাইতুল্লায় পৌছার পর সে যখন বাইতুল্লাহর তওয়াফ করে, সফা-মারওয়াতে সাঈ করে, এরপর চুল হলক করে বা খাট করে তখন সে সদ্যপ্রসূত সন্তানের ন্যয় নিষ্পাপ হয়ে বের হয়।’ (শুআবুল ঈমান, বায়হাকী: ৩৮২০)
বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, “মক্কাবাসীদের উপর হাজী সাহবেদের কি অধিকার রয়েছে তা যদি মক্কাবাসীরা জানত, তাহলে হাজী সাহেবদের আগমনের সাথে সাথেই মক্কাবাসীরা এসে তাদের বাহনগুলোকে চম্বন করত। কেননা হাজী সাহেবগণ হলেন সকল মানুষের মাঝে আল্লাহর প্রতিনিধি।” (শুআবুল ঈমান, বায়হাকী: ৩৮১৫)

সুবহানাল্লাহ! হজ্বব্রত কি অপার মহিমা ও বরকতময় ইবাদত। এই অপার মহিমা আর অভাবনীয় বরকত ও ফযীলতের কারণেই মুমিন হৃদয় সর্বদা আকুলি-বিকুলি করে বাইতুল্লাহর মুসাফির হতে। শুভ্র-সফেদ কাপড়ে মুড়িয়ে বাইতুল আতীককে তওয়াফ করতে। ইবরাহীম আ. পত্মি মহীয়সী হাজেরার স্মৃতিধন্য সাফা-মারওয়ায় দৌড়াতে। আরাফা-মুযদালিফায় হাজির হতে। মিনার তাবুতে অবস্থান করতে। হৃদয় কন্দরে ঢেউ উঠে মদীনাতুর রাসূলে ঘুরে বেড়াতে। বদর, উহুদ, খন্দকের ধূলি গায়েজড়াতে। আরও মন চায় রওজায়ে আতহারের পাশে দাড়িয়ে মুমিনের প্রাণের স্পন্দন মুহাম্মাদ সাল্লাহু আলাইহি সাল্লামকে দুরুদ ও সালাম পৌছাতে।

এতসব স্বপ্ন-সাধ পূরণের আশা নিয়ে সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বড় কষ্টে অর্জিত অসীম মায়ার সম্পদটুকু নিয়ে মুমিন যখন উপস্থিত হয় পূণ্যভূমিতে, তখনই তৎপর হয়ে উঠে মুমিনের প্রাণের দুশমন বিতারিত শয়তান। নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যায় লালিত স্বপ্নের ইবাদতটিকে কিভাবে নষ্ট করা যায়? এজন্য সে হাতে নেয় জগড়া-বিবাদ, পর্দহীনতা, ছবি উঠানোসহ নানা ধরণের ভয়ংকর মিশন। ফলে আল্লাহর মেহমান জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন নাফরমানীতে। মনের অজান্তেই ফযীলত আর বরকতে ভরপুর মহান ইবাদত হজ্ব হয়ে উঠে পাপ পঙ্কিলময়। হালে মরদুদ শয়তানের মিশন প্রায় শতভাগ সফলতা লাভ করেছে ভয়ংকর অপরাধ ছবি উঠানোর ক্ষেত্রে। হজ্বের সফরে ছবি ও সেলফী তোলা এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। কাবার গিলাফ ধরে, মুলতাজামে, হাতীমে, তওয়াফের পর মাকামে ইবরাহীমে দাড়িয়ে, ছফা-মারওয়ায়, সাঈ অবস্থায়, আরাফা ও মুযদালিফায় কিংবা অন্য কোন বরকতময় স্থানে মুনাজাতরত অবস্থায় ছবি তোলে রাখা, ছবি তোলে পোস্ট করা বা সেলফি তোলা সাধারণ রেওয়াজ ও ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। নিষেধ করলে ফিরবে তো দূরের কথা, উল্টো আরও বকা শুনতে হয়। শুনতে হয় নানা ধরণের কটোক্তি। একটা সময় ছিল যখন সৌদি সরকার এ ব্যাপারে যথেষ্ঠ কড়াকড়ি করত। এখন সেটাও নেই।

২০১৫ সালে হজ্বের সফরে মুআল্লিম সাহেব হজ্বের আগে আমাদেরকে নিয়ে গেলেন মিনা, আরাফা, জামারাত ইত্যাদি দেখাতে। আরাফায় জাবালে রহমতে উঠার সময় দেখলাম কিছু মানুষ ক্যামেরা, টুপি,রুমাল ইত্যাদি নিয়ে দাড়ানো। অনেকে হজ্বের আগেই ‘হাজী সাহেব’ সেজে ছবি তুলছেন আবার অনেকের অজান্তেই উৎপেতে থাকা সুযোগ সন্ধানী ক্যামেরাম্যানরা ছবি তোলে ধরিয়ে দিয়ে কায়দায় ফেলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বাসায় ফেরার পর সত্তরোর্ধ আমার এক রোম ম্যাট তার একটি ছবি দেখিয়ে বললেন, আমার অগোচরে ছবিটি উঠিয়ে দুইশত টাকা নিয়েছে। আমি বললাম হাজী সাহেব, ছবি উঠানো কবিরা গুনাহ। পবিত্র স্থানে এসেছেন। তাই ছবিটি ছিড়ে ফেলে দিন। তিনি উত্তর দিলেন, না থাক। দেশে ফিরে সন্তানাদী, নাতীদেরকে দেখাবো। এ কথা বলে ছবিটি লাগেজে রেখে দিলেন। আমি আর কিছু বললাম না। এই হলো আমাদের অবস্থা।
অথচ ছবি উঠানো কবীরা গুনাহ ও হারাম। হাদীসে বড় কঠোর ভাষায় ছবি তোলতে নিষেধ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যারা ছবি বা প্রতিমূর্তি তৈরী করে, কিয়ামতের দিন তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে এবং বলা হবে তোমরা যা কিছু সৃষ্টি করেছিলে সেগুলোকে জীবন দান কর।” (বুখারী: ৫৯৫১; মুসলিম: ২১০৮; তারগীব: ৪৬০৭)
আম্মাজান আয়েশা রা. বলেন,“একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম কোন এক সফর থেকে ফিরে এলেন। আমি ঘরের আঙ্গিনায় একটি পর্দার কাপড় ঝুলিয়ে রেখেছিলাম। এতে কিছু ছবি ছিল। যখন এর উপর মহানবী সাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম এর দৃষ্টি পড়ল তাঁর চেহারার রং বিবর্ণ হয়ে গেল। এ অবস্থায় তিনি বললেন , হে আয়েশা শোন! কিয়ামত দিবসে সবচে কঠিন শাস্তি হবে সেসব লোকের যারা মহান আল্লাহর সৃষ্টির অনুকরণ করে সৃষ্টি করে।” (বুখারী: ৫৯৫৪, ৫৯৫৭, ৫৯৬১; মুসলিম: ২১০৫, তারগীব: ৪৬০৭)
হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, সকল (প্রাণীর) চিত্রকর বা ছবি অংকনকারী জাহান্নামে যাবে। সে যতগুলো ছবি অংকন করেছে প্রতিটি দ্বারা একটি করে প্রাণী তৈরী করা হবে, যে প্রাণীগুলোর মাধ্যমে তাকে জাহান্নামে শাস্তি দেয়া হবে। (বুখারী: ২২২৫; ৫৯৬৯; মুসলিম: ২১১০; তারগীব: ৪৬০৯)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, সাঈদ ইবনুল হাসান রা. বলেন, “আমি ইবনে আব্বাস রা. এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এ সময় এক ব্যাক্তি এসে বলল, হে ইবনে আব্বাস! হস্তশিল্পই আমার জীবিকা উপার্জনের একমাত্র উপায়, আমি এ ধরণের ছবি তৈরী করি। এ কথা শুনে ইবনে আব্বাস রা.বললেন, এ ব্যাপারে আমি তোমাকে তাই শোনাব যা আমি নবীজীর সাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম যবান মুবারক থেকে শুনেছি। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, যে ব্যাক্তি ছবি আঁকবে কিংবা প্রতিকৃতি বানাবে আল্লাহ তাকে ততক্ষণ শাস্তি দিতেই থাকবেন, যতক্ষণ না সে তাতে রুহ বা আত্মা দান করে অথচ সে তাতে কখনই রুহ দান করতে পারবে না। এ কথা শুনে লোকটির চেহারা ফ্যাকাসে ও বির্বণ হয়ে গেল। তখন ইবনে আব্বাস রা. বললেন, তুমি যদি ছবি বা প্রতিকৃতি বানাতেই চাও, তাহলে গাছ ইত্যাদি প্রাণহীণ জিনিসের ছবি বানাও”। (বুখারী, হাদীস: ২২২৫)
অন্য এক বর্ণনায় আছে,“আম্মাজান আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম এর জন্য একটি বালিশ বানালাম। তাতে ছিল প্রাণির কিছু ছবি বা চিত্রাংকন। তিনি এসে দরজায় দাড়িয়ে যখন তা দেখলেন, তখন তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কি হয়েছে আপনার? তিনি বললেন, এই বালিশ কেন? আয়েশা রা. বললেন, আমি আপনার জন্য বানিয়েছি। আপনি এতে ঘুমাবেন। তখন তিনি বললেন, হে আয়েশা! তুমি কি জন না? ফেরেসতা ঐ ঘরে কখনো প্রবেশ করেনা, যে ঘরে কোন প্রণির ছবি থাকে। আর যে ব্যক্তি ছবি তৈরী করে বা ছবি উঠায় তাকে কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি দেয়া হবে আর বলা হবে তোরা যা কিছু সৃষ্টি করেছিলে সে গুলোকে জীবন দান কর। (বুখারী: ৩২২৪, মুসলিম: ২১০৬, আবু দাউদ: ৪১৫৫)

পাঠক! এ হলো সাধারণ অবস্থায় ছবি উঠানোর ভয়বহতা। আর যদি তা হয় কোন পূণ্য ভূমিতে, তবে তো তার ভয়বহাতা বৃদ্ধি পাবে শতগুণ। কেননা যে সময় ও স্থানে ইবাদতের সওয়াব যত বেশী সে সময় ও স্থানে পাপ করলে পাপের ভয়াবহতা ও খারাবীও তত বেশী। নবীর দেশে, নবীর শহরে, নবীর রওজার পাশে, নবীর জন্ম স্থানে, ইসলামের মাতিৃ ভূমিতে, আল্লাহর ঘর বাইল্লাহর ভিতরে, এমন ভয়াবহ অপরাধে লিপ্ত হয় আল্লাহর মেহমান, বাইতুল্লাহর মুসাফির! কি ভয়ানক ব্যাপার? ভাবতেই গা শিউরে উঠে। হে আল্লাহ! আপনি এই ভয়ানক অপরাধ থেকে এ উম্মাহকে রক্ষা করুন। এই মহান ইবাদতটিকে সকল পাপ পঙ্কিলতার উর্ধ্বে উঠে আদায় করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button