আমদানি রফতানির আড়ালে বাংলাদেশ থেকে যেভাবে অর্থ পাচার হয়

takaবাংলাদেশে এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর প্রচুর অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে।
ব্যাংকিং খাতের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ ব্যাঙ্ক ম্যানেজমেন্ট বা বিআইবিএম এর এক গবেষণায বলা হচ্ছে, আমদানি রপ্তানির মাধ্যমে এসব মানি লন্ডারিং-এর ঘটনা ঘটছে।
গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে মানি লন্ডারিং এর ঘটনা অত্যন্ত ব্যাপক কিন্তু ঠিক কতো টাকা পাচার হচ্ছে সেটা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।
এই গবেষণার সাথে জড়িত ছিলেন বিআইবিএমের অধ্যাপক ড. আহসান হাবীব। বিবিসি বাংলার শাকিল আনোয়ারকে তিনি বলেন, সারা বিশ্বে এসংক্রান্ত যেসব পরিসংখ্যান দেওয়া হয় সেগুলোর কোন ভিত্তি নেই।
ধরুন কোন একটা জিনিস এখান থেকে চীনে রপ্তানি করা হলো আর ওখান থেকে যে পরিমাণ আমদানি করার কথা বলা হলো- এই দুটো হিসেবের মধ্যে যে তফাৎ সেসব ধরে একটা সংখ্যা কল্পনা করে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।
এই গবেষণাটি করতে গিয়ে কিছু কেস স্টাডি সংগ্রহ করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, শুল্ক বেশি দিতে হয় এরকম কোন একটি পণ্য হয়তো বিদেশ থেকে আনা হয়েছে কিন্তু ডিক্লেয়ার করার সময় বলা হয়েছে হাঁস মুরগির খাবার বা পোল্ট্রি ফিড কিম্বা শিল্প কারখানার যন্ত্রপাতির মতো কিছু পণ্য আনা হয়েছে, যেগুলোর শুল্ক কম।
মি হাবীব বলেন, এক্ষেত্রে হয়তো মোট পেমেন্ট হওয়ার কথা ছিল এক হাজার কোটি টাকা। কিন্তু যে পরিমাণ অর্থের শুল্ক দেওয়া হচ্ছে সেটা হয়তো মাত্র তিন থেকে চার কোটি টাকার।
প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে বাকি টাকাটা কোথায় পরিশোধ করা হলো? অবৈধভাবে সেই অর্থটা কোথাও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার উত্তর।
মানি লন্ডারিং হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে অর্থ এক দেশ থেকে আরেক দেশে নিয়ে যাওয়া।
দুটো কারণে এটা করা হয়- এক অর্থ পাচার দুই কর ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে।
গবেষকরা বলছেন, আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের সাথে যারা জড়িত তারাসহ ব্যাংকিং এবং শুল্ক দপ্তরের কিছু লোকজনও এর সাথে জড়িত।
তিনি বলেন, ব্যাঙ্কের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া এটা করা সম্ভব নয়। শুল্ক বিভাগের কিছু অংশও এর সাথে জড়িত থাকতে পারে কারণ যেসব জিনিস আনা হচ্ছে সেগুলো তারা খুলেও দেখছে না। তাদের সহযোগিতা ছাড়া ব্যবসায়ীদের পক্ষে এধরনের লেনদেন করা সম্ভব নয় বলে তিনি জানান।
এরকম একটি ঘটনার উল্লেখ করেন আহসান হাবীব। তিনি বলেন, সম্প্রতি একটি ঘটনায় শুল্ক কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখলো যার নামে এলসি খোলা হয়েছে, সেই লোকটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দেখা গেল বাংলাদেশে এক হাজার কোটি টাকার একটি চালান এসেছে কিন্তু যার নামে এলসি খোলা হয়েছিল তাকে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। তখন দুর্নীতি দমন কমিশন গ্রামের একজন কৃষককে ধরে নিয়ে এসেছিল।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা সবসময় ওপেন অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেনের সুযোগের জন্যে চাপ দিয়ে আসছে। এই পদ্ধতিতে শুধু ক্রেতা ও বিক্রেতারা লেনদেন করেন। এখানে ব্যাঙ্ক ও শুল্কের লোকেরা জড়িত থাকেন না। এরকম কিছু হলে মানি লন্ডারিং সম্পর্কে কোন কিছু ট্রেসই করা সম্ভব হবে না।
অবৈধভাবে এরকম অর্থ পাচারের ঘটনা কতোটা ধরা সম্ভব হচ্ছে – এই প্রশ্নের জবাবে আহসান হাবীব বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় যতো বাড়ছে ততোই এগুলো ধরা পড়ছে।
যেমন ধরুন ব্যাঙ্কে আগে এক ধরনের ডিক্লারেশন দেওয়া হতো আবার কাস্টমসে দেওয়া হতো আরেক ধরনের ডিক্লারেশন। এসব তথ্য পরীক্ষা করে দেখার জন্যে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক ও কাস্টমসের মধ্যে কোন যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু এখন সবকিছু অনলাইনে যুক্ত। সেকারণে আস্তে আস্তে এগুলো ধরা পড়ছে।
তিনি বলেন, তবে এটাও ঠিক এভাবে যখন ধরা পড়ে যাচ্ছে তখন তারা নতুন কৌশলও গ্রহণ করছে। -বিবিসি বাংলা

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button