বাশার আল-আসাদের নারী কমান্ডোরা

বিধ্বস্ত ভবনের ভাঙ্গাচোরা একটি কক্ষ। সেখানে বালুর বস্তা, কাঠের টুকরা দিয়ে জানালা বরাবর উঁচু করে একটা স্তূপ তৈরি করা হয়েছে। টেবিলের মতো সেই স্তূপের ওপর নিজের রাশিয়ান এসভি-৯৮ স্নাইপিং রাইফেলটি রেখে তাক করে আছেন এক তরুণী। চোখ তার ‘শিকারের’ সন্ধানে। খুঁজছে প্রতিপক্ষ বন্দুকধারীদের।
তরুণীটির নাম সার্জেন্ট রিম। সিরিয়ান আর্মির নারী ব্রিগেডের কমান্ডো। দেশটির ইতিহাসে এই প্রথম কোন একক নারী কমান্ডো ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
খুব বেশিদিন হয়নি। তবে এরই মধ্যেই বেশ নামডাক হয়েছে রিমের। ২০ বছর বয়সী এই তরুণী স্নাইপার একদিনে সর্বোচ্চ ১১ জন প্রতিপক্ষ যোদ্ধাকে মেরেছেন! প্রতিদিন ৩/৪জন তার রাইফেলে প্রাণ দেন।
বাশার আল-আসাদের রিপাবলিকান গার্ডের ‘উইমেন্স কমান্ডো ব্রিগেড’ সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠের নিরাপত্তায় নিয়োজিত।
এই ব্রিগেডে রয়েছেন ৮০০ নারী যোদ্ধা। তারা পুরুষদের মতোই সমানতালে লড়ে যাচ্ছেন।
ধারণা করা হয়, গত চার বছর ধরে চলা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে প্রায় অর্ধলক্ষ সৈন্যকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ এখন দেশটির সেনাবাহিনীতে বেশি করে নারী নিয়োগে মনোযোগী হয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে এই নারী ব্রিগেডের প্রতিষ্ঠা।
রিমকে নিয়ে তার কমান্ডার ক্যাপ্টেন জিয়াদ গর্ববোধ করেন। তিনি বলেন, একজন স্নাইপারের আসল যোগ্যতা হল ধৈর্য। আর রিমের তা যে খুব ভালই আছে সেটা সে প্রমাণ করেছে।
কমান্ডারের প্রশংসা শুনে মুচকি হেসে রিম বলেন, ‘আমার কমান্ডার আমাকে স্কুলের মতো সার্টিফিকেট দিয়ে দিলেন!’
রিমে সহযোদ্ধা সামারের বয়স ২১। তিনিও একজন স্নাইপার। তার একদিনে সর্বোচ্চ ৭ জনকে হত্যার রেকর্ড রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি সাধারণত প্রতিদিন তিন বা চারটি টার্গেটে আঘাত হানি। তবে এর একটিও মিস হয়ে গেলে আমার কান্না চলে আসে!’
তাদের মধ্যে আরেকজন জায়নাব, যিনি এক গুলিতে একজনের বদলে অনেককে হত্যা করতে ‘পছন্দ’ করেন! তিনি বি-১০ রাইফেল ব্যবহার করেন যেটি একা নাড়ানো যায় না। অনেকটা মেশিনগানের মতো কোনো কিছুর ওপরে রেখে গুলি ছুঁড়তে হয়।
জায়নাব বলেন, ওরা এক গুলিতে একজনকে মারতে পারে। আর আমি এক গোলা ছুঁড়লে পুরো কক্ষে থাকা সবাই মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আমি এটা পছন্দ করি।
তিনি জানান, অনার্স ডিগ্রি শেষ করে তিনি এই পেশা বেছে নিয়েছেন।
সিরিয়ান অবজার্ভেটরি অব হিউম্যান রাইটসের তথ্য মতে, গত চার বছরে দেশটিতে দুই  লক্ষাধিক সাধারণ মানুষসহ আসাদের অনুগত অন্তত ৪৬ হাজার সৈন্য নিহত হয়েছেন।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর আলি বলেন, নারীরাও পুরুষদের মতো করে সব ক্ষেত্রে অবদান রাখতে সক্ষম- এটি ‘প্রমাণ’ করতেই প্রেসিডেন্ট আসাদ নারীদেরকে আরো বেশি করে সেনাবাহিনীতে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button