গুগল : সব প্রশ্নের উত্তর মেলে যেখানে

Googleজাফর ইকবাল : পৃথিবীতে এমন কোন বিষয় বা প্রশ্ন নেই যার উত্তর গুগলে মেলে না। এক কথায় পুরো পৃথিবীকে সে নিজের ভেতরে ধারণ করে রেখেছে। সেখানে নেই বা অসম্ভব বলে কোন কথা নেই। গুগল সময়কে ধারণ করে, পছন্দ করে সময়ের সঙ্গে থাকতে। সময়কে নিরন্তর তাড়া করে ফেরে সে। বিভিন্ন উৎসবে নিজেকে রাঙিয়ে উৎসবকে বর্ণিল করে তুলতে তার চেষ্টার কোন কমতি নেই। তাই প্রায়ই সে তার নিজের নাম লোগো পরিবর্তন করে। কত বড় গুগল? পৃথিবীর চেয়েও বড়! গোটা পৃথিবীই কি গুগলে এঁটে যায়! এটা নিছকই কথার কথা নয়। এটি আসলেই সত্যি! গুগল অভিধান অনলাইনে বাংলাভাষাসহ বিভিন্ন ভাষার অভিধান রয়েছে। বর্তমানে গুগলের এই অভিধান ইংরেজীসহ ২৮টি ভাষাতে ব্যবহার করা যাবে। এসব ভাষা থেকে ইংরেজী এবং ইংরেজী ভাষা থেকে অন্যান্য ভাষাতে শব্দের অনুবাদ জানা যাবে। সার্চের সঙ্গে সঙ্গে Search Dictionary বাটনে ক্লিক করলে শব্দের অর্থ তো আসবেই সঙ্গে অডিও উচ্চরণ, সমজাতীয় শব্দ সমষ্টি Related phrases–এর অর্থ এবং লিঙ্ক, অন্য কোন ভাষাতে শব্দের আছে কি না যদি থাকে, প্রতিশব্দ, পদ Part of Speech, ছবি যদি থাকে এবং ওয়েব সংজ্ঞা Web definitions ইত্যাদি দেখা যাবে। আর গুগল এ্যাকাউন্টে লগইন অবস্থায় অভিধানে সার্চ করলে হিস্টোরিতে সার্চ করা শব্দগুলো সংরক্ষিত থাকবে এবং পছন্দের শব্দগুলোকে তারকা চিহ্নিত করে রাখা যাবে। এসব ফলাফল দেখাবে ইউনিকোডে। যাদের কম্পিউটারে ইউনিকোড বাংলাভাষা কনফিগার করা নেই তারা বাংলা ফলাফল দেখতে পারবেন না। তারা কম্পিউটারে ইউনিকোড বাংলাভাষা কনফিগার করার পদ্ধতি http://unicodehelpcenter থেকে জেনে নিতে পারেন। সাইটটির ঠিকানা হচ্ছে Google dictionary Original postসম্প্রতি গুগল কর্তৃপক্ষ একটি ভিডিও পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগল। ১৯৯৭ সালে ল্যারি পেজ এবং সার্গেই ব্রিনের উদ্ভাবিত সার্চ ইঞ্জিনটি বিশ্বজুড়ে তথ্য খোঁজার সর্ববৃহৎ মাধ্যম। বর্তমানে জনপ্রিয়তার কারণে গুগল বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সার্চ ইঞ্জিনে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে গুগলের সার্চ ইঞ্জিনের পাশাপাশি ওয়েবব্রাউজার, মোবাইল ফোন অপারেটিং সিস্টেম এবং মোবাইল হ্যান্ডসেট বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
সার্চ ইঞ্জিন গুগলের ওয়েবভিত্তিক মানচিত্র সেবার নাম গুগল ম্যাপস। ২০০৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এ সেবা চালু হয়। গুগল ম্যাপস ব্যবহার করে পৃথিবীর যে কোন স্থানের এরিয়াল ভিউ বিনামূল্যে দেখা যায়। গুগল ম্যাপসে ব্যবহৃত প্রতিটি ছবিই স্যাটেলাইট ব্যবহার করে ভূমি থেকে ৮০০-১৫০০ ফিট ওপর থেকে তোলা। ব্রাউজারে http://maps.google.com লিখলে গুগল ম্যাপস সেবা পাওয়া যাবে।
অনুবাদ করার জনপ্রিয় একটি প্রোগ্রামের নাম গুগল ট্রান্সলেটর। ব্যবহারকারীর মতামতের ওপর ভিত্তি করেই গুগল এ অনুবাদ প্রোগ্রামটি উন্নয়ন করে। এ কাজে গুগল ট্রান্সলেটর টুলকিটনামে গুগলের আলাদা একটি প্রোগ্রাম রয়েছে। http://translate.google.com/ toolkit থেকে এটি ব্যবহার করা যায়। এখানে Upload বাটনের মাধ্যমে কম্পিউটার হার্ডড্রাইভ বা ইন্টারনেট থেকে যে কোন ফাইল আপলোড করা যায়। গুগল ট্রান্সলেট করার জন্য অনলাইনে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রাম হচ্ছে গুগলের ট্রান্সলেশন সার্ভিস গুগল ট্রান্সলেট। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় এত দিন এই ট্রান্সলেশন সুবিধা ব্যবহার করা গেলেও এবার এতে যুক্ত হয়েছে বাংলাসহ নতুন পাঁচটি ভাষা।
সারা বিশ্বের ভৌগোলিক চিত্র স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি ইমেজ আকারে ইন্টারনেটে প্রকাশ করে থাকে গুগল আর্থ। গুগল আর্থের মাধ্যমে সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশের শহর, নগর, বন্দরের হুবহু চিত্র পাওয়া যায়। গুগল আর্থ মূলত ভিট্যুয়াল গে¬াব, যা বিভিন্ন দেশের ম্যাপ এবং ভৌগোলিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। কিহোল, ইনক  Keyhole, Inc নামের একটি প্রতিষ্ঠান আর্থভিউয়ার থ্রিডি নামে এ সেবা চালু করলেও ২০০৪ সালে সার্চ ইঞ্জিন গুগল প্রতিষ্ঠানটি কিনে নেয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৫ সালে গুগল আর্থ নামে এটি বাজারে ছাড়ে গুগল।
ফলাফল জানা যাচ্ছে গুগল ল্যাবস সার্চ  দিলেই। এছাড়াও ওয়েবভিত্তিক আরও অনেক সেবা-ই দিয়ে থাকে গুগল। এসব সেবা সম্পর্কিত পরিকল্পনা এবং গবেষণা করার জন্য গুগলের আলাদা যে বিভাগটি রয়েছে তার নাম গুগল ল্যাবস। এ ল্যাবস বিভিন্ন ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা উন্নয়ন করার পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের সেসব সেবা পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে থাকে। ২০০৬ সালে আলাদা বিভাগ হিসেবে গুগল ল্যাবস চালু করে গুগল কর্তৃপক্ষ। গুগলের পরীক্ষামূলক সব প্রজেক্ট পাওয়া যাবে ww w.googlelabs.com ঠিকানার ওয়েবসাইটে। গুগল ক্যালেন্ডার গুগল ক্যালেন্ডার মূলত একটি অনলাইন সময় ব্যবস্থাপনা এ্যাপলিকেশন। ২০০৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এ্যাপলিকেশনটি বাজারে ছাড়ে গুগল। বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে অগ্রিম ইভেন্ট শিডিউল তৈরি করে রাখাযায় গুগল ক্যালেন্ডারে। পরবর্তী সময়ে শিডিউল অনুযায়ী ব্যবহারকারীকে অনুষ্ঠানের রিমাইন্ডার সেবা দিয়ে থাকে গুগল। গুগল ক্যালেন্ডারের ঠিকানা ww w.google.com/calendar
গুগল ভয়েস গুগল ভয়েস একটি অনলাইন টেলিফোনি সেবা। এই সেবার মাধ্যমে জি-মেইল ব্যবহারকারীরা কম্পিউটার থেকেই অন্য জি-মেইল ব্যবহারকারীদের কম্পিউটার অথবা টেলিফোনে কল করতে পারেন। পাশাপাশি রয়েছে যে কোন ব্যবহারকারীর টেলিফোন নম্বর সংযুক্ত করে সে নম্বরে আসা সব ফোন গ্রহণের সুবিধা। যাঁরা একাধিক সংযোগ ব্যবহার করে থাকেন তাদের জন্য রয়েছে একটি কম্পিউটারেই সব ফোন ব্যবহার করার সুযোগ। ২০০৯ সালের মার্চে প্রথম গুগল ভয়েস চালু করা হয়েছিল।
গুগল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গুগলের প্রযুক্তি চশমা এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে এ পণ্যটির প্রচারণা চালানো হচ্ছে। গুগল গ¬াস ব্যবহার করে ছবি তোলা, কণ্ঠস্বর রেকর্ড করা, সামাজিক যোগাযোগের মতো বিভিন্ন কাজ করা যাবে। ২০১২ সালে এ গুগল গ¬াস বাজারে আনার ঘোষণা দিয়েছিল অনুসন্ধান সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটি। গুগল ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা চালুর ঘোষণা দিয়েছে। কম্পিউট ইঞ্জিন নামের সেবাটি ব্যবহার করে বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে গুগলের ডাটা সেন্টার ব্যবহার করা যাবে। গুগল জানিয়েছে, লিনাক্স ভার্চুয়াল মেশিনের মাধ্যমে চলবে কম্পিউট ইঞ্জিন। চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো এর মাধ্যমে গুগলের সার্ভারে থাকা যে কোন প্রোগ্রাম ব্যবহার করতে পারবে। অন্যান্য ক্লাউড সেবার তুলনায় প্রায় ৫০ ভাগ বেশি সুবিধা পাবেন কম্পিউট ইঞ্জিন ব্যবহারকারী। ২০০৮ সালে শক্তিশালী সার্ভারের সমন্বয়ে ডাটা সেন্টার চালু করে গুগল। সেবাটি চালু হলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সহজেই গুগলের কারিগরি সেবা গ্রহণ করতে পারবে।
গুগল ডিকশনারি শব্দের অর্থ জানার জন্য অনেকেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গুগল ডিকশনারি ব্যবহার করেন। তবে গুগলের ইন্টারনেট ব্রাউজার ক্রোম ব্যবহারকারীরা এক্সটেনশন ব্যবহার করে ব্রাউজার থেকেই শব্দের অর্থ জানতে পারেন। এ জন্য প্রথমে http://bit.ly/a04Q27 থেকে গুগল ক্রোমের এক্সটেনশনটি ব্রাউজারে যুক্ত করে নিন। এবার সাইট ভিজিট করার সময় কোন শব্দ না বুঝলে শব্দটির ওপর ডাবল ক্লিক করার সঙ্গে সঙ্গে ছোট উইন্ডোতে এর শব্দের অর্থ প্রদর্শন করবে।
গুগলের অজানা ১১টি সেবাপণ্য। গুগল মার্স গুগল আর্থের মতোই একটি প্রোগ্রাম, যা লাল গ্রহ মঙ্গল সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে। গুগল স্কলার জ্ঞানমূলক তথ্য সংগ্রহের একটি সার্চ ইঞ্জিন। বিশ্ববিদ্যালয়, বই, আদালত এবং এ রকম অন্য সাইটগুলোর কাজে ব্যবহারের জন্য গুগল স্কলার তুলনামূলক দামী সার্চ ইঞ্জিন। ৩. গুগল স্ট্রিটভিওয়ের মতো গ্রাহকদের ভার্চুয়ালভাবে জাদুঘর, আর্ট গ্যালারি পরিদর্শনের একটি সাইট হচ্ছে গুগল আর্ট প্রজেক্ট। বিভিন্ন ভাষায় টাইপ করার জন্য গুগলের সেবাদানকারী প্রোগ্রামটি হচ্ছে গুগল ট্রান্সলিটারেশন। গুগল অস্ট্রেলিয়া ওলেগোর মধ্যকার একটি প্রকল্প হচ্ছে বিল্ড উইথ ক্রোম। এটি গুগল ক্রোম ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে ত্রিমাত্রিক ছবি প্রদর্শনের একটি  প্রকল্প। বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য বাজার-সম্পর্কিত ধারণাদানের সাইট হচ্ছে গুগল থিংক। গ্রাহকদের অনুসন্ধান দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় টিপস দানকারী সাইট হচ্ছে পাওয়ার সার্চিং উইথ গুগল। বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাপারে পরিকল্পনা করার জন্য গুগলের নেটওয়ার্কের নাম হচ্ছে স্কিমার। চলমান গানের শিরোনাম ও গানটি সম্পর্কে যে কোন ধরনের তথ্য নিতে গুগল সাউন্ড সার্চ ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন বিষয়বস্তু, প্রশ্ন বা ধারণা নিয়ে খোলামেলা আলোচনার জন্য রয়েছে গুগল মডারেটর। নিরাপদ অনুসন্ধানের জন্য রয়েছে এনক্রিপটেড ডট গুগল ডটকম। এতে অনলাইন ব্যাংকের মতো সিকিউর সকেট লেয়ার এসএসএল নামক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button