যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে না বাংলাদেশ

USAশেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স বা জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে না। জিএসপি সুবিধাপ্রাপ্ত দেশগুলোর মধ্যে সার্কভুক্ত দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও আফগানিস্তান থাকলেও বাংলাদেশকে বাদ দেয়া হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত ২৯ জুন এ সংক্রান্ত আদেশে স্বাক্ষর করার পর ২৯ জুলাই থেকে বিশ্বের ১২২টি দেশ ও অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের এই সুবিধা পাচ্ছে। ফলে ওই সব দেশ ও অঞ্চল থেকে ৫০০০ ধরণের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে বিনা শুল্কে রপ্তানি করা যাবে।
ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ায় ওই দেশটিকেও রাখা হয়নি জিএসপির তালিকায়।
বাংলাদেশের শ্রমমান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে জিএসপি বাতিলের জন্য দেশটির বাণিজ্য দপ্তর ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভের (ইউএসটিআর) কাছে ২০০৭ সালে রিট পিটিশন দায়ের করে দেশটির প্রভাবশালী শ্রমিক সংগঠন ‘দ্য আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার অ্যান্ড কংগ্রেস অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্গানাইজেশনস (এএফএল-সিআইও)।’
প্রতি দুই বছর পর ওই মামলার শুনানির পর পরবর্তী শুনানির আগে পর্যন্ত বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বর্ধিত করে আসছিল ইউএসটিআর। তবে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর ওই বছরের ২৭ জুন বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র, যা ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়।
জিএসপি পুনবর্হালের শর্ত হিসেবে ওই সময় ১৬ দফা কর্মপরিকল্পনা দিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে বলে যুক্তরাষ্ট্র।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মনে করে, ওই শর্তগুলোর ৯৮ ভাগই বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ। এরপর কয়েক দফা অগ্রগতির প্রতিবেদন ইউএসটিআরের কাছে পাঠিয়ে জিএসপি পুনর্বহালের অনুরোধ করে ঢাকা।
শর্ত বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস সন্তোষ প্রকাশ করলেও বারবারই জুড়ে দেওয়া হয়েছে- জিএসপি পুনর্বহালের জন্য বাংলাদেশকে আরো অগ্রগতি অর্জন করতে হবে।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) স্বাক্ষরের পরও জিএসপি পুনর্বহালে নরম হয়নি দেশটির অবস্থান।
ইউএসটিআরের ওয়েবসাইটে থাকা তথ্যানুযায়ী, দারিদ্র্য দূর করার ব্যাপারে সহায়তার অংশ হিসেবে বিশ্বের ১২২টি দেশ ও অঞ্চলের ৫০০০ রকমের পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৭৪ সাল থেকে চালু করা এই জিএসপি স্কিমের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই। ফলে বাংলাদেশসহ বাকি ১২১টি দেশও এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।
বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সব স্বল্পোন্নত দেশ উন্নত দেশগুলোর বাজারে শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানির সুবিধা বা জিএসপি পাওয়ার দাবিদার। এর আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৮টি দেশ বাংলাদেশের অস্ত্র বাদে সব পণ্যে জিএসপি সুবিধা দিচ্ছে।
পাশাপাশি কানাডা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে এ সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র কখনোই বাংলাদেশের সব পণ্যে জিএসপি সুবিধা দেয়নি।
স্থগিত হওয়ার আগ পর্যন্ত প্লাস্টিক, চামচ, সিরামিকস, গলফ খেলার উপকরণের মতো পণ্য এ সুবিধা পেত। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত দীর্ঘদিন ধরে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা দাবি করে এলেও তা আমলে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।
অথচ ব্রাজিল, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক, ভেনিজুয়েলা, ফিলিপাইন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো বিকাশমান ও উচ্চ মধ্যম আয়ের অনেক দেশকে এ সুবিধা দিয়েছে দেশটি।
ইউএসটিআর বলেছে, জিএসপি সুবিধা পেতে আটটি ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশকে সন্তোষজনক অবস্থায় থাকতে হবে, যার একটি বাদে আর কোনোটিতেই অযোগ্য নয় বাংলাদেশ।
৭ নম্বর শর্তে শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার নিশ্চিত করা, সিবিএ ব্যবস্থা থাকা, বাধ্যতামূলক শ্রম পরিহার করা, শিশুশ্রম না থাকা, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ এবং কর্মঘণ্টা ও কর্মস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার শর্ত রয়েছে। এ শর্তেও বাংলাদেশ দিন দিন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করছে। তারপরও শেষ পর্যন্ত এই সুবিধা থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করা হলো।
জিএসপি স্কিমে বাংলাদেশের নাম না থাকায় হতাশা প্রকাশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া ১৬ দফা কর্মপরিকল্পনার ৯৮ থেকে ৯৯ ভাগই বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ। তা সত্ত্বেও দেশটি ভারত, পাকিস্তানসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য জিএসপি সুবিধা চালু করলেও বাংলাদেশকে তা থেকে বঞ্চিত করেছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button