ফের আল্লাহকে নিয়ে গাফ্ফার চৌধুরীর বিতর্কিত বক্তব্য

AGaffarলেখক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্যে থেমে নেই। ইসলাম, ধর্ম এবং পর্দা নিয়ে সম্প্রতি তার দেয়া বক্তব্যকে ঘিরে দেশ-বিদেশে যখন নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, ঠিক তখনই আবারো নতুন করে আগুনে তুষ ঢেলেছেন তিনি। এবার ইসলাম, ধর্ম, পর্দা, এমনকি রসুলুল্লাহ সা:-কে ছাড়িয়ে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে জড়িয়ে মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, আল্লাহ শব্দটি এসেছে কাবা শরীফের প্রধান মূর্তির নাম থেকে।

গাফফার চৌধুরী বলেন, ‘আল্লাহর যে ৯৯ নাম, এগুলো কাবা শরীফের দেবদেবীর নাম ছিল। একটি বড় প্রমাণ হলো যে, আমাদের রসুল্লাহর (স.) বাবার নাম ছিল আবদুল্লাহ। আল্লাহ শব্দটি এসেছে কাবা শরীফের প্রধান যে মূর্তিটি ছিল তার নাম ইলাত, কেউ বলে ইলাহ, কেউ বলে ইলাত। এর থেকে এসেছে।’

শুক্রবার নিউইয়র্ক ভিত্তিক টাইম টেলিভিশনের এক সাক্ষাৎকারে তার পূর্ববর্তী আলোচিত-সমালোচিত বক্তব্যের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ফের নতুন বিতর্কের ঝড় তুলেছেন।

গত ৩ জুলাই শুক্রবার ম্যানহাটনের বাংলাদেশ মিশনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একক বক্তব্যে রাসুল সা: ও পর্দা নিয়ে তার মন্তব্যের বিষয় সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি ওই দিন যে বক্তব্য দিয়েছি তা যথার্থ ছিল। এটাকে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে চিহ্নিত জামায়াত ও হেফাজতীরা। জাতিসঙ্ঘ মিশনের দেয়া বক্তব্য নিয়ে তারা রাজনৈতিক প্রপাগান্ডায় নেমেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

তার ওই দিনের বক্তব্য ঘিরে ফুঁসে ওঠে প্রবাসী ধর্মপ্রাণ মানুষ। এর হাওয়া লেগেছে বাংলাদেশেও। পরবর্তী ৭ জুলাই রোববারের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচিও পণ্ড হয়ে যায়। জ্যামাইকা থেকে ব্রুকলিনে গিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে। সেখানেও প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয় আয়োজকদের। তার ওই বক্তব্যকে ঘিরে শুক্রবারও সিটির বিভিন্ন মসজিদে মসজিদের খুতবায় নিন্দা জানানো হয়। এছাড়া ৮ জুলাই সোমবার নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে আলেম-ওলামারা গাফ্ফার চৌধুরীকে প্রকাশ্যে তওবা পূর্ব ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে মসজিদে বিশেষ খুতবা পাঠের হুঁশিয়ারিও দেন আলেম সমাজ।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রে সফর প্রসঙ্গে বলেন, আমি নিউইয়র্কে এসেছি ব্যক্তিগত ব্যাপারে এবং কিছুটা আমন্ত্রিত হয়ে। এখানে আমাদের বাংলাদেশ মিশনে আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতিই বলবো, মোমেন সাহেবের (জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি) আমন্ত্রণে একটি সিরিজ লেকচারে অংশ গ্রহণ করার জন্য। এ লেকচারটি হয়ে গেছে। আর ব্যক্তিগতভাবে আমি এখানে এসছি এই জন্য যে, আমি প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ওপর একটি ডক্যুমেন্টারি করছি। তার সম্পর্কে এখানে কিছু বিখ্যাত লোকের মন্তব্য রেকর্ড করার জন্য। দুই কারণেই এসেছি।

তিনি বলেন, আমি মিশনে বক্তব্য দিয়েছি। যেখানে বাংলাদেশের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে। আমাদের বাংলাকে বলা হতো হিন্দুর ভাষা, এটা ঠিক নয়। বাংলাতে ইসলাম প্রচার হয়েছে বাংলা ভাষাতেই। আরবে ইসলাম প্রচার হয়েছে আরবি ভাষাতেই। যদিও সে ভাষা এককালে কাফেরদের ভাষা ছিল। তাতে কিছু আসে যায়না। পরবর্তীকালে ইসলামের ভাষা হয়েছে। আমাদের নাম, আমাদের সংস্কৃতির কার্যকলাপ মিশ্রিত। কোনোটাই ধর্মভিত্তিক নয়। আমাদের বিয়ে, আমাদের নামকরণ। আরবরাও তাই করেছে।

যারা তার বক্তব্যের বিরোধিতা করছেন তাদের সম্পর্কে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, তারা প্রমাণ দেখাক। আমি অন্তত এক ডজন আরবি কেতাব দেখাতে পারবো। যেখানে এই নাম, দ্বিতীয় প্রধান দেবতার নাম ছিল রহমান। আমাদের রসুলুল্লাহ (স.) যখন ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন তখন তার একজন প্রতিদ্বন্দ্বী দেখা দিয়েছিল। সে নিজেকে আল্লাহর রসুল দাবি করে বলেছিল, প্রধান দেবতা হচ্ছেন রহমান। এদেশে বহুদিন আমাদের রসুলুল্লাহ ও মুসলমানকে লড়াই করতে হয়েছে। এভাবে রহমানও এডাপ্টডেট হয়ে যায় ইসলামের নামে। আমাদের রসুলুল্লাহ মূর্তিগুলো ভেঙেছেন। এক-ঈশ্বরবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি কোনো ঐতিহ্য ধ্বংস করেননি।

তাহলে আজকে যারা প্রতিবাদ করছেন, ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা তাদের প্রতিবাদকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে চিহ্নিত জামায়াত-হেফাজতিরা। জাতিসঙ্ঘ মিশনের দেয়া আমার বক্তব্য নিয়ে তারা রাজনৈতিক প্রপাগাণ্ডায় নেমেছে। যোগ দিয়েছে কিছু সুবিধাবাদি। অসত্য বেশি দিন টিকবে না। কারো হুমকি-ধামকি ও অপপ্রচারে ভয় পান না বলেও সাফ জানিয়ে দেন তিনি। তিনি জানান, আগামি ১৪ জুলাই লন্ডনের উদ্দেশে নিউইয়র্ক ছেড়ে যাবেন।

এদিকে, নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবারের ব্যানারে ৭ জুলাইয়ের পূর্ব-নির্ধারিত কর্মসূচি প্রবাসী ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মুখে পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর ওই দিন বাংলাদেশী অধ্যুষিত ব্রুকলিনে গিয়েও ব্যর্থ হন আয়োজকরা। এসময় মুসল্লিরা জুতা প্রদর্শন করেন। এবার ১২ জুলাই রোববার জ্যাকসন হাইটস জুইস সেন্টারে গাফ্ফার চৌধুরীর জন্য এক নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করেছে ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সম্মিলিত শক্তি’। গাফ্ফার চৌধুরীর এ নাগরিক সংবর্ধনাকে ঘিরে নানা শঙ্কা-আশঙ্কার মধ্যে আছেন প্রবাসীরা। আয়োজকরা চাইছেন, দু’দুবার ভণ্ডুল হওয়ার পর এবার যেকোনো মুল্যে সংবর্ধনাটিকে সফল করার জন্য।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button