লিবডেম নেতা চার্লস কেনেডির আকস্মিক মৃত্যু

Kennedyইরাক যুদ্ধ এবং কোয়ালিশন বিরোধী লিবরেল ডেমোক্রেট নেতা ও সাবেক বৃটিশ এমপি চার্লস কেনেডি আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। মঙ্গলবার স্কটল্যান্ডের হাইল্যান্ডে নিজ কটেজে মাত্র ৫৫ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। চার্লস কেনেডির রাজনীতি শুরু হয় সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির মাধ্যমে। মাত্র ২৩ বছর বয়সে স্কটল্যান্ডের দ্যা রোস, ক্রোমেট্টি এবং স্কী থেকে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। ৮৩ সাল থেকে ২০১৫ সালের নির্বাচনে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির কাছে পরাজিত হবার আগ পর্যন্ত তিনি এ আসনের এমপি ছিলেন। তার আকস্মিক মৃত্যৃতে বৃটিশ রাজনৈতিক অঙ্গনের শোকের ছায়া পড়েছে। গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড কেমরন, লিবডমে লিডার নিক ক্ল্যাগ, লিবডেমের সাবেক লিডার প্যাডি আশডাউন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা। দিনভর টেলিভিশনগুলোতে চার্লস কেনেডি স্মরণে তার রাজনৈতিক জীবনের মূল্যায়ন করেছেন রাজনীতিক, সাংবাদিকসহ চার্লস কেনেডির সমকালিনরা। ২০০২ সালে তিনি বিয়ে করেন। ২০০৫ সালে তাদের প্রথম ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।
এক নজরে চার্লস কেনেডির রাজনৈতিক জীবন:
চার্লস কেনেডি জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৫৯ সালে। ১৯৮৩ সালে তিনি প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। তখর তার বয়স ছিলো মাত্র ২৩ বছর। ১৯৮৮ সালে সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি লিবডেমের সঙ্গে একাত্ম হয়। ১৯৯৯ সালের ৯ আগষ্ট তিনি তৎকালিন লিবডেম লিডার পেডি অ্যাশডাউনের কাছ থেকে দলের নেতৃত্ব গ্রহন করেন। রাজনৈতিক জীবনে ৮টি পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন চার্লস। এর মধ্যে ২টি নির্বাচনে তিনি লিবডেম পার্টির নেতৃত্ব দেন। ২০০১ এবং ২০০৫ সালের নির্বাচনে তিনি পার্টির লিডার ছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তার নেতৃত্বে লিবডেম ৫২ সিট নিয়ে তৃতীয় আসনে ছিলো। এর আগে ছিলো ৪৬ সিট। একই নির্বাচনে টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে লেবার পেয়েছিলো ৪শ ১৩ সিট। আর উইলিয়াম হেইগের নেতৃত্বে টোরি ১শ ৬৬ সিট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলো। ২০০৫ সালের নির্বাচনে চার্লস কেনেডি দলকে ৬২ সিট উপহার দেন। যা ১৯২৩ সালের পর দলের সবচাইতে ভালো অবস্থান বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। একই নির্বাচনে ৩শ ২৪ আসন নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন ইরাক যুদ্ধের নায়ক টনি ব্লেয়ার। মাইকেল হাওয়ার্ডের নেতৃত্বে টোরি ১শ ৯৮ আসন পায়। ২০০৬ সালে অতিমাত্রায় মদ্যপানজনিত সমস্যার কারণে দলের লিডারপদ থেকে সরে দাঁড়ান চার্লস কেনেডি। এরপর থেকে দলের ফ্রন্ট লাইনে না থাকলেও স্কটল্যান্ডে তার নির্বাচনি আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন তিনি। ২০১৫ সালের নির্বাচনে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির কাছে পরাজিত হন চার্লস কেনেডি।
ইরাক যুদ্ধ এবং কোয়ালিশন বিরোধী চার্লস কেনেডি:
চার্লস কেনেডি অত্যন্ত বিচক্ষণ ছিলেন রাজনীতিতে। তিনি ইরাক যুদ্ধের বিরোধী ছিলেন। যে অভিযোগে তৎকালিন ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে বোমা নিক্ষেপে গিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার সেই অভিযোগের পুরো বিপক্ষে ছিলেন র্চালস কেনেডি। পরবর্তীতে চার্লস কেনেডির ধারণাই প্রমাণিত হয়েছে। অন্যায় ইরাক যুদ্ধে জড়ানোর খেসারত দিয়েছে লেবার। অন্যদিকে ২০১০ সালের নির্বাচনের পর টোরির সঙ্গে কোয়ালিশনে যাওয়ার বিপক্ষেও অবস্থান ছিলো চার্লস কেনেডির। তিনি এর বিপক্ষে ভোট দিয়ে বলেছিলেন, কোয়ালিশনে যাওয়ার কারণে ধ্বংস হবে লিবডেম। বাস্তবে তাই হয়েছে। ২০১০ সালের নির্বাচনে ৫৭ সিট ছিলো লিবডেমের। আর ২০১৫ সালের নির্বাচনে পায় মাত্র ৮টি সিট। নির্বাচনে চার্লস কেনেডি নিজেসহ কোয়ালিশনের বিসনেস সেক্রেটারী এবং লিবডেমের শীর্ষ নেতা ভিন্স ক্যাবল, দলের ডেপুটি লিডার সাইমন হিউজ এবং ডেনি আলেজান্দ্রার পরাজিত হন। মাত্র ৮টি সিট নিয়ে কমন্সের এক কোনায় বসতে হচ্ছে কোয়ালিশনের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী নিক ক্ল্যাগকে। ডেপুটি প্রধানমন্ত্রীত্বের খেসারত হিসাবেই মূলত লিবডেমের অনেক বাঘা বাঘা এবং জনপ্রিয় নেতাদের পরজায় বরণ করতে হয়েছে ২০১৫ সালের নির্বাচনে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button