পাটের আন্তর্জাতিক বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ

Pat* এক বছরে রফতানি কমেছে ১০ লাখ ৭৫ হাজার বেল * বাজেটে বিভিন্ন করারোপে সংকট সৃষ্টি * পর্যাপ্ত ঋণ পাচ্ছে না ব্যবসায়ীরা
কামাল উদ্দিন সুমন: বাংলাদেশ থেকে অব্যাহতভাবে কাঁচা পাট রফতানি কমছে। কাঁচা পাট রফতানির শীর্ষ দুই বাজার পাকিস্তান ও ভারতে ইতোমধ্যে রফতানি আশংকাজনক হারে কমে গেছে। এছাড়া রফতানিকারক অন্যান্য দেশেও পাট বিক্রি কমে গেছে। শুধুমাত্র গত অর্থবছর পাট রফতানি কমেছে ১০ লাখ ৭৫ হাজার বেল। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাঁচা পাট রফতানি হয়েছে ৯ লাখ ৮৪ হাজার বেল। অথচ এর আগের বছর ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে পাট রফতানি হয়েছিল ২০ লাখ ৫৫ হাজার বেল।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে ভারত ও পাকিস্তানের বাজারে দেশের কাঁচা পাট সবচেয়ে বেশি রফতানির হয়। বড় বাজার হিসেবে মোট রফতানির ৭০ শতাংশের বেশি যায় দেশ দু’টিতে। কিন্তু গত তিন বছর ধরে এ দুই দেশে কাঁচা পাট রফতানি কমছে। দুই বছরের ব্যবধানে ভারতে রফতানি কমেছে ৯৫ ও পাকিস্তানে ৭৫ শতাংশ।
কাঁচা পাট রফতানিকারী ব্যাবসায়িদের অভিযোগ, অব্যাহতভাবে কাঁচা পাট রফতানি কমার পেছনে ভারত ও পাকিস্তান থেকে চাহিদা কমার পাশাপাশি ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত ঋণ না দেয়া, বাজেটে বিভিন্ন ধরনের করারোপ, বহির্বিশ্বের রাজনৈতিক পরিবেশ, ডলারের মানের তারতম্য ও ক্রেতাদের চাহিদামতো সরবরাহ না করাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এই দু’টি দেশের ওপর নির্ভর না করে বহুমুখী দেশের বাণিজ্য বাড়ানোর দাবি পাট ব্যবসায়িদের।
জানা গেছে, ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৬৮টি পাট কোম্পানি (রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান) ২৩টি দেশ ২২ লাখ ৮৪ হাজার বেল কাঁচা পাট রফতানি করেছে। আর ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে ১৪৩টি কোম্পানি ২০টি দেশে ২০ লাখ ৫৫ হাজার বেল কাচা পাট রফতানি করে। অথচ ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে ৯২টি কোম্পানি ২০টি দেশে মাত্র ৯ লাখ ৮৪ হাজার বেল কাচ পাট রফতানি করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে দেশ থেকে কাঁচা পাট রফতানি হয়েছে মাত্র ৫ লাখ ৫৫ হাজার বেল। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে পাট রফতানি শুধু কমছেই না পাট রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাট রফতানির পরিমাণ কমে যাওয়ার পাশাপাশি কমছে রফতানি আয়ও। ২০১০-১১ অর্থবছরে কাঁচা পাট রফতানিতে আয় হয়েছিল ৩৫ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। কিন্তু ২০১১-১২ অর্থবছরে তা প্রায় ২৫ শতাংশ কমে তা দাঁড়ায় ২৬ কোটি ৬২ লাখ ডলার। ২০১২-১৩ অর্থবছরে আয় আরো কমে দাঁড়ায় ২২ কোটি ৯৯ লাখ ডলারে।
সূত্র জানায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে বৃহৎ পাটের বাজার ভারতে কাঁচা পাট রফতানির পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৯৩ হাজার বেল। পরের অর্থবছরে তা নেমে আসে ২ লাখ ৩৪ হাজার বেলে। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে রফতানি হয়েছে মাত্র ৪৪ হাজার বেল। পাটের আরেক বৃহৎ বাজার পাকিস্তানে ২০১২-১৩ অর্থবছরে রফতানি হয় প্রায় ৫ লাখ ৪৬ হাজার বেল কাঁচা পাট। পরের অর্থবছর তা ছিল ৩ লাখ ৩৭ হাজার বেল এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে রফতানি হয় মাত্র ১ লাখ ৩৬ হাজার বেল। দেশ দু’টিতে রফতানি কমে আসার প্রভাব পড়েছে দেশের মোট রফতানিতে।
বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএ) সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৯০ শতাংশের বেশি কাঁচা পাট রফতানি হয় ভারত, পাকিস্তান ও চীনে। এছাড়া ভিয়েতনাম, কিউবা, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, নেপাল, গুয়াতেমালা, জিবুতি, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ব্রাজিল, থাইল্যান্ড, তিউনিসিয়া, আইভরি কোস্ট, ইরান, যুক্তরাজ্য, স্পেন, এল সালভাদর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও আরব আমিরাতেও রফতানি হয় পণ্যটি। তিন বছর আগেও যেখানে প্রতি অর্থবছরে গড়ে ২২-২৩ লাখ বেল কাঁচা পাট রফতানি হতো, এখন তা সাত লাখ বেলের নিচে নেমে এসেছে। আর রফতানিকারকের তালিকা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান।
কাঁচা পাট রফতানিকারক ও বিজেএর সাবেক সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আরজু রহমান ভূঁইয়া বলেন, দেশের কাঁচা পাটের বড় একটি অংশ রফতানি হতো ভারত ও পাকিস্তানে। সম্প্রতি দেশ দু’টিতে দুভাবে চাহিদা কমেছে। ভারতে উৎপাদন যেমন বেড়েছে, তেমনি পাট অনুৎপাদনকারী রাজ্যগুলোয় পাটের বিকল্প পণ্যের ব্যবহার বেড়ে গেছে। এ কারণে দেশটি পাট আমদানি কমিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ডলারের মানের সঙ্গে ভারতীয় রুপির তারতম্যের কারণে তারা পাট আমদানিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে পাকিস্তানে গত কয়েক বছরে কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে দেশটিতে কাঁচা পাটের চাহিদা কমছে। আর দু’টি দেশের চাহিদা কমার কারণে বাংলাদেশ বড় দু’টি পাটের বাজার হারাতে হচ্ছে। কাঁচা পাটের জন্য বহির্বিশ্বে নতুন বাজার সৃষ্টি ও ফিনিশড গুডস তৈরি ও ব্যবহার বাড়ানোর সুপারিশ করেন তিনি। কাঁচা পাট রফতানি বাড়াতে দু’টি দেশের ওপর নির্ভর না করে বহুমুখী দেশের বাণিজ্য সুপারিশ করেছেন তারা।
বিজেএর সচিব আবদুল কাইয়ুম দাবি করেন, দুটি দেশে পাট রফতানি কমে আসায় বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন বাজারে প্রবেশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি দেশে সফলতাও এসেছে। কিন্তু বাহ্যিকভাবে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
Pat

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button