বিশ্ব অর্থনীতিতে আবারো ধস নামার আশঙ্কা

Economyবিশ্ব অর্থনীতি আবারো বড় ধরনের শঙ্কার মধ্যে পড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছে বহুজাতিক অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। জ্বালানি তেল ও ইউরো-পাউন্ডের দরপতনে ঝুঁকির মুখে পড়েছে রফতানিকারক দেশগুলো। আইএমএফের মতে, জ্বালানি তেলের দাম কমে যাবার কারণে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের মুদ্রার দাম পড়ে যাওয়ায় ওইসব দেশও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এক্ষেত্রে ধনী দেশগুলোও শঙ্কামুক্ত নয়। বিশেষ করে ইউরোপের একক মুদ্রা ইউরো এবং ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ডের দাম মার্কিন ডলারের বিপরীতে পড়ে যাওয়ায় ইউরোপের দেশগুলোর জন্য শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আইএমএফের অর্থনৈতিক কাউন্সিলর জোস ভিনাল বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে শঙ্কা যে হঠাৎ তৈরি হয়েছে তা নয়। গত বছরের অক্টোবর মাস থেকেই অর্থনীতিতে ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। অনেক দেশ এটা বুঝতে পারেনি। আর যখন বুঝতে পেরেছে তখন ব্যবস্থা নেয়ারও সময় পায়নি। সংস্থাটি মনে করছে, জ্বালানি তেল এবং অন্যান্য সামগ্রীর দাম পড়ে যাবার ফলে কয়েকটি দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিন্তু যেসব দেশ ওইসব পণ্য রফতানি করে তাদের অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হতে থাকবে। বিশেষ করে নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার অর্থনীতি এসময়ে সমস্যায় পড়তে থাকবে। মূলত জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক পড়ে যাওয়া এবং দেশগুলোর মুদ্রা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ায় এমন শঙ্কা ব্যক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ব অর্থনীতির এমন ঝড় এশিয়ায়ও এসে পড়বে বলে সংস্থাটি মনে করছে। আইএমএফ সম্প্রতি যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে এমন শঙ্কার কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে যেসব দেশ জ্বালানি তেল ও অন্যান্য পণ্য রফতানি করে সেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া যেসব দেশ ধার করে চলছে সেসব দেশের সমস্যাও এসময় বাড়বে। কারণ দেশগুলো ধার করেছে মার্কিন ডলারে। নিজ দেশের মুদ্রার মান পড়ে যাওয়ায় তাদের ধার পরিশোধ করতে বেশি দামে ডলার কিনতে হবে। এতে করে তাদের অর্থনীতিতে চাপ পড়বে। এ সমস্যা শুধু দেশের নয়, ব্যক্তি খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান যারা বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে তাদের সমস্যাও বাড়বে। এতে বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ নিজ দেশের বাইরে যাবে বেশি। অন্যদিকে, বর্তমানে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে প্রতিব্যারেল ৫০ মার্কিন ডলারের নিচে নেমে গেছে। যা ২০১৩ সালের জুলাইতে ছিল প্রতিব্যারেল ১০৬ মার্কিন ডলার। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি আশঙ্কা করছে, তেলের দাম চলতি বছরেই প্রতিব্যারেল ৩০ ডলারে নেমে যেতে পারে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের তেল উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়া এবং রাশিয়া ও ইরানের ওপর অবরোধ দেয়ার ফলেই তেলের এই দরপতন। এদিকে মূল তেল উৎপাদনকারী দেশ যেমন রাশিয়া, ইরান, সউদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, আফ্রিকার কিছু কিছু দেশ এবং ভেনিজুয়েলা তেলের দাম কমে যাবার কারণে অনেকটাই আতঙ্কিত। এই দেশগুলোর বাজেটের একটি বড় অংশ আসে তেল রফতানি খাত থেকে। এক রিপোর্টে দেখা যায়, এসব দেশের অর্থনীতি তেলের ওপর কতটা নির্ভরশীল। লিবিয়ার অর্থনীতি ঠিকঠাক রাখতে হলে প্রতিব্যারেল তেল তাদের ১৮৪ ডলারে বিক্রি করতে হবে। এছাড়া ইরানের অর্থনীতির জন্য ১৩১, আলজেরিয়ার জন্য ১৩১, নাইজেরিয়ার জন্য ১৩১, ভেনিজুয়েলার জন্য ১১৮, রাশিয়ার জন্য ১০৫, সউদি আরবের জন্য ১০৪, ইরাকের জন্য ১০১, ইউএইর জন্য ৮১, কুয়েতের জন্য ৭৮ এবং কাতারের অর্থনীতির জন্য প্রতিব্যারেল তেল ৭৭ ডলারে বিক্রি করতে হবে। এর কম দামে বিক্রি করলে ওইসব দেশের অর্থনীতিতে ঘাটতি দেখা দেবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button