শেখ হাসিনাকে প্রধান রেখে নির্বাচন প্রস্তুতি শুরু আ.লীগের

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা ছাড়াই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে শুরু হয়ে গেছে দলটির ইশতেহার লেখার কাজ। খোঁজা হচ্ছে নির্বাচনের নতুন স্লোগান। প্রচারের বিষয়টি দেখভাল করছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র ও দলটির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২৪ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা সফরকালে বিভিন্ন উন্নয়নকাজের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ মঞ্জুর স্টেডিয়ামে বক্তব্য রাখবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত একটি শোকসভায় বক্তব্য দেবেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী সফর করবেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও কক্সবাজারের রামুতে। ৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজশাহীর বাগমারা সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। এসব এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উদ্বোধনের পাশাপাশি রাজনৈতিক সভায় বক্তব্য দেবেন তিনি। এখানে ধর্ম নিয়ে বিরোধী দলের অপপ্রচার সম্পর্কে মানুষকে বোঝাবেন তিনি।
দলটির কয়েকটি ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের অধীনে বিএনপিকে নির্বাচনে রাজি করাতে জাতিসংঘের দূত, বিশ্বব্যাংক এবং প্রভাবশালী কয়েটি দেশের রাষ্ট্রদূত-কূটনীতিকদের সহায়তা নেবে আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করা হবে’ এই মর্মে জাতিসংঘের দূত, বিশ্বব্যাংক এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের কাছে ‘নিশ্চয়তা পত্র’ দিতে পারে আওয়ামী লীগ। তবে এটা নির্ভর করবে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া এই ‘নিশ্চয়তা পত্র’ মানেন কি না, তার ওপর।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে যেভাবে ‘দিন বদলের অঙ্গীকার’ করা হয়েছিল, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়া হবে বলে তরুণ প্রজন্মকে আকর্ষণ করা হয়েছিল, ঠিক সেই ধরনের সাড়া জাগানিয়া আরেকটি আকর্ষণীয় স্লোগান খুঁজছে দলটি। আওয়ামী লীগ নেতাদের আশা, নতুন কোনো স্লোগান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় নির্বাচনের আগে দেশে হাজির হবেন। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘নির্বাচনী স্লোগানই একটি দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেয়। আর সেটার দিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান শেখ হাসিনাই
আওয়ামী লীগের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে হবে। সে অনুযায়ী তাঁরা কাজ করছেন। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাঁদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, বিরোধী দল আন্দোলন করে নির্বাচন বিলম্বিত করলে সে ক্ষেত্রে শেখ হাসিনাই হবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান। তাঁদের ধারণা, তৃতীয় বা কোনো অরাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায় আসবে না। একমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পালাবদল হবে। আর অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সে ক্ষেত্রে ক্ষমতায় আসবে আওয়ামী লীগই।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এক আলোচনা সভায় বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হবেন। নির্বাচন না হলে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকবেন।’
এ ছাড়া গতকাল (১৮ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনকালীন সরকার-পদ্ধতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি সংবিধানে বিশ্বাস করি। যা হবে সংবিধান মোতাবেক হবে। তার থেকে এক চুলও নড়া হবে না।’
বিরোধী দলকেও নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান
‘তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচন হবে না, বাংলাদেশে কোনো জাতীয় নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না’—বিরোধী দলকে এ অনড় অবস্থান থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা-তদবির করবে আওয়ামী লীগ। তারা বিরোধী দলকে বোঝানোর চেষ্টা করবে, আন্দোলন করে শক্তি ক্ষয় করে কোনো লাভ নেই। বরং নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলে বিরোধী দল সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে। দেশে যেভাবে গণমাধ্যমের বিকাশ ঘটেছে এবং মানুষ রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়েছে, তাতে এখন আর ভোট কারচুপি সহজ নয়। এ ছাড়া বিদেশি পরিদর্শকেরা যদি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলে সনদ দেন, তাহলে সরকার টিকে থাকতে পারবে না।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘নির্বাচন হবে এবং সে নির্বাচনে বিএনপি আসবেই। পাঁচ সিটি করপোরেশনে জেতার পর তাদের জেতার সম্ভাবনা এখন উজ্জ্বল। এ ক্ষেত্রে তাদের নির্বাচনে অংশ নিতে ভয় কেন, বুঝলাম না।’
দলটির একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘২০০৭ সালের মতো সংঘাতময় অবস্থা আর আসবে না। কারণ মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। আমাদের বিশ্বাস, কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতি ঘটানোর মতো সাংগঠনিক শক্তি বিএনপির নেই। জামায়াত-বিএনপি মিলে যদি কোনো অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে তাহলে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকভাবে তাদের মোকাবিলা করা হবে।’ তবে কীভাবে সেটা করা হবে সেটা তিনি স্পষ্ট করেননি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সোমবার (১৯ আগস্ট) বেলা সোয়া ১১টায় তাঁর ফেসবুক পেইজে পোস্ট করা লেখায় বলেন, বিরোধী দল একের পর এক আলটিমেটাম ও হুমকি দিলেও শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে আসবে। সূত্র : প্রথম আলো।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button