যুদ্ধফেরত ব্রিটিশ সৈন্যরা প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছে না

UK soldierযুক্তরাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এমপিদের একটি গ্রুপ তাদের এক রিপোর্টে হঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, ব্রিটেনের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ট্রমা-উত্তর ধকল, অভ্যন্তরীন সহিংসতা ও বিপজ্জনক মাত্রায় মদ্যপান সমস্যা মোকাবিলার প্রয়োজনীয় সাহায্য পাচ্ছে না।
তারা বলেন, যুদ্ধফেরতরা তাদের যুদ্ধ পেনশন ও ক্ষতিপূরণের অর্থ পেতে দুঃখজনক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। তারা ইরাক ও আফগানিস্তানে মোতায়েন সৈন্যদের মধ্যে যারা শারীরিকভাবে আহত বা মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত , তাদের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সামরিক অভিযানের ব্যাপারগুলো জনগণের চোখের আড়ালে রাখা হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য বিভাগের আশ্বাস সত্ত্বেও আহতদের প্রতি দীর্ঘমেয়াদি সমর্থন হ্রাস পাবে বলে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। শীর্ষস্থানীয় চ্যারিটিগুলো বলেছে যে, আরা এমপিদের উদ্বেগের সাথে একমত। মনস্তত্ত্ব ও অর্থোপেডিকসের শীর্ষস্থানীয় অধ্যাপকরা মঙ্গলবার বলেন, যুদ্ধফেরত সৈনিকদের তাদেরকে দেয়া প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সেবা প্রদান করা হচ্ছে না এবং সরকার সামরিক চুক্তি মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে। এর একদিন পর বৃহস্পতিবার কমন্স সভার প্রতিনিধিদের এ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।
রিপোর্র্টে বলা হয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আহত সৈন্যদের জন্য প্রথম শ্রেণীর চিকিৎসা-সুবিধা ও স্বল্পমেয়াদি  পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে। কিন্তু যারা গুরুতর শারীরিক, মানসিক ও পরবর্তীতে স্নায়ুগত সমস্যার শিকার হয় তাদের প্রতি পর্যাপ্ত দৃষ্টি দেয়া হয় না।
সাধারণ লোকদের তুলনায় যুদ্ধফেরত সৈন্যদের মধ্যে ট্রমা-উত্তর ধকলের হার দ্বিগুণ। অন্যদিকে নিয়মিত সৈন্যদের তুলনায় রিজার্ভ সৈন্যদের মধ্যে এ হার দ্বিগুণ। রিজার্ভ সৈন্যদের প্রতি সমর্থনের অভাব বিশেষভাবে দুঃখজনক কারণ সেনাবাহিনী তাদের ওপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে।
রিপোর্টে বলা হয়, সশস্ত্রবাহিনীতে মদ্যপানের প্রথা রয়েছে। সৈন্যদের মানসিক স্বাস্থ্যনির্ভর করে বিপজ্জনক মাত্রায় মদ্যপানের ওপর।
এমপিরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও তাদের পরিবারদের অ্যালকোহলের অপব্যবহারজনিত ক্ষতি হ্রাস করতে জরুরি ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। সশস্ত্র বাহিনীর বহু সদস্যেরই বিশ্বাস যে একসাথে জড়ো হলে অ্যালকোহল অপরিহার্য অথবা তাদের বিশ্বাস যে কোনো সামরিক মোতায়েন থেকে প্রত্যাবর্তন মোকাবিলার জন্য অ্যালকোহলই হলো যথাযথ পন্থা।
সামরিক বাহিনীর পুরুষ সৈন্যদের মধ্যে অ্যালকোহলের নির্ভরতা তাদের সমবয়সী বেসামরিক লোকদের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি।
বৃহস্পতিবারের রিপোর্টে বলা হয়, সাধরণ মানুষের চেয়ে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে অপরাধ করার প্রবণতা কম, কিন্তু সহিংস ঘটনার হার বেশি বিশেষ করে তাদের মধ্যে যারা আগে যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েন ছিল ও অতিমাত্রায় অ্যালকোহল পানকারী।
রিপোর্টে আরো বলা হয়, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের অভ্যন্তরীণ সহিংসতা বিষয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে সৈন্য মোতায়েন, অ্যালকোহলের অপব্যবহার ও সহিংস ব্যবহার বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ সহিংসতার মধ্যে সম্পর্ক ভালোভাবে উপলব্ধি করতে হবে।
কমিটির চেয়ারম্যান রোরি স্টুয়ার্ট এমপি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী সম্ভবত আজকের দিনে ব্রিটেনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান এবং দেশের বাকি অংশের অনুপ্রেরণা। যুদ্ধ অভিযান ও মানসিক সমস্যার মধ্যে সুস্পষ্ট সম্পর্ক রয়েছে এবং এর মাধ্যমে লোকদের সমর্থনে আমাদের সবকিছু করতে হবে।
রাজকীয় ব্রিটিশ লিজিয়নের মহাপরিচালক ক্রিস সিম্পকিনস বলেন, যুদ্ধ ফেরত মানসিক রোগাক্রান্ত সৈনিকদের চিকিৎসার জন্য ইংল্যান্ডের ১০টি এনএইচএস ভেটারান মেন্টাল হেলথ নেটওয়ার্কের জন্য বার্ষিক দেড় লাখ পাউন্ড ব্যয় পর্যাপ্ত নয়। কোনো কোনো এলাকায় যুদ্ধ ফেরতদের নির্দিষ্ট মনস্তাত্ত্বিক সেবার জন্য ৪২ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
তিনি বলেন, আমরা অ্যালকোহল অপব্যবহারের বিষয়ে একপি ব্যাপক ভিত্তিক কৌশল প্রকাশের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বানকে স্বাগত জানাব। সাধারণ  মানুষের চাইতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে অ্যালকোহল নির্ভরতার হার দ্বিগুণ এবং সামরিক বাহিনীর মহিলা সদস্যদের মধ্যে সে হার ৫ গুণ বেশি।
মানসিক স্বাস্থ্য চ্যারিটি কমব্যাট স্ট্রেস-এ মেডিকেল সার্ভিসেসের পরিচালক ওয়াল্টার বুসুট্টিল এ রিপোর্টকে সময়োচিত অণুস্মারক হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, যুদ্ধ ফেরতদের মনে যুদ্ধকালীন কঠিন ও জটিল স্মৃতি থাকতে পারে এবং কেউ কেউ মানসিক ক্ষত নিয়ে ফিরে আসতে পারেন।
তিনি বলেন, এসব তাদের পরিবার ও সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। আমরা কমিটির উদ্বেগের প্রতিধ্বনি করছি যে ইরাক ও আফগানিস্তানে আমাদের অভিযানোত্তর সময়ে সাবেক সৈন্যদের প্রতি আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সমর্থন অবশ্যই হ্রাস করা যাবে না।
সাবেক সোলজারস, সেইলরস অ্যান্ড এয়ারম্যানস ফ্যামিলিজ অ্যাসোসিয়েশন  বা এসএসএ এফএ’ ও যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে পুরনো ন্যাশনাল মিলিটারি চ্যারিটির প্রধান নির্বাহী এয়ার ভাইস মার্শাল ডেভিড মারে বলেন, চিকিৎসা সুবিধার পাশাপাশি ব্যাপক ভিত্তিক কল্যাণ সমর্থনের ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন যাতে পরিবারগুলো জানতে পারে যে প্রয়োজন হলে তাদের জন্য সাহায্য ও পরামর্শ দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিশ্চিত করতে হবে যে শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত সমর্থন দেয়ার প্রয়োজনীয় সম্পদ ও সমঝোতা তাদের আছে।
আফগানিস্তানে ২০০১ সাল থেকে যুক্তরাজ্য সশস্ত্র বাহিনীর ৪৫৩ জন সদস্য ও বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৬১৪ জন।
ইরাকে ২০০৩ সাল থেকে ১৩৬ জননিহত ও ২২২ জন গুরুতর আহত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।
যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েনের পর অজানা সংখ্যক সৈন্য অতিরিক্ত মদ পানসহ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে।
২০০৭ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ডিফেন্স কম্যুনিটি মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসা কর্মসূচির সেবা গ্রহণকারীর সংখ্য এক-তৃতীয়াংশ বেড়ে ৬ হাজার ৭ শ’তে দাঁড়ায়। একই সময়ে মানসিক বৈকল্য চিহ্নিত রোগীর সংখ্যা ৪৫ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজারেরও বেশি দাঁড়ায়।
ইরাক ও আফগানিস্তানে মোতায়েন সরাসরি যুদ্ধে নিয়োজিত পুরুষ সৈন্যদের  ৫৩ শতাংশ যুদ্ধে জড়িত না হওয়া লোকদের তুলনায় বেশি সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে।
দি হেল্প ফর হিরোজ চ্যারিটির হিসেব যে আফগানিস্তানে যুদ্ধের ফল হিসেবে ৭৫ হাজার সৈন্য মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার শিকার হতে পারে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button