লন্ডনে অভিনব কায়দায় প্রতারণা

Londonসৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ: এই অভিনব প্রতারণার সংবাদের শুরুতেই একজন চাক্ষুষ ভিক্টিমের কাছ থেকে প্রতারিত হওয়ার গল্পটি আগে বলে নেই, একজন বাংলাদেশী ভদ্রলোক, ব্রিটেনে বসবাস করেন দীর্ঘ দিন থেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে। আছে নিজের গ্রোসারী ব্যবসা, বেশ ভালোই। যে শহরে উনি থাকেন, সেখানে তখনকার সময়ে এই গ্রোসারী শপ ছিলো একক ও অনন্য।দারুণ জমানো ব্যবসা।পড়ন্ত বয়সে মসজিদে যান, পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়েন আর নিজে ব্যবসা করেন।হঠাত দিনের বেলা, চতুর্দিকে লোক সমাগম, দোকানে তিনি শুধু একা ক্যাশ কাউন্টারে। স্যুটেড স্মার্ট ড্রেসের দুজন লোক এসে বললো, তাদের কাছে প্রচুর ডলার ও পাউন্ড আছে, ভিনদেশী হওয়াতে আইডি না থাকার কারণে ব্যাংকে যেতে পারছেনা, নিজ দেশে ফেরত চলে যাওয়ার জন্য ডিসকাউন্টে ব্যাগ ভর্তি সব টাকা কারো সাথে অদল বদল করতে চায়। উনি যদি রাজী থাকেন, ক্যাশে যদি হাজার পাঁচেক তাকে, তাতেই পুরো ব্যাগ ভর্তি টাকা ওরা এক্সচেঞ্জ করে চলে যাবে। ওদের খুব তাড়া আছে।বাংলাদেশী ভদ্রলোক লোভে পড়ে ওদের কথা মতো ক্যাশ কাউন্টার থেকে থাকা পাঁচ হাজার পাউন্ড ওদের হাতে তুলে দিলে ওরাও ওদের কথা মতো গাড়ীর বুট থেকে ব্যাগ নিয়ে এসে উনাকে খুলে দেখিয়ে বলে সব ডলার পাউন্ড আপনার। উনি হাত দিয়ে দেখেন সত্যি এতো টাকা ক্যাশ, তাই হতবাক হয়ে ওদের কাছ থেকে ব্যাগ রেখে দেন।ঐ স্মার্ট স্যুটেড দুই লোক তারপর চম্পট। রাতে বাসায় এসে বাংলাদেশী ভদ্র লোক ব্যাগ খুলে দেখেন উপরের আসল পাউন্ডের সাথে নীচে ভাজ করা সব নকল টাকা। উনারতো মাথায় হাত।সেদিন উনার প্রতারণার কাহিনী কিছুটা বিশ্বাস, কিছুটা অবিশ্বাসের সুরে শুনেছিলাম।
London2বেশ কিছুদিন পর আজকে লন্ডনের একেবারে হার্টের মধ্যে অবস্থিত আধুনিক সুসজ্জিত অফিস খুলে, পুলিশের অফিসের একেবারে ২০ গজের মধ্যে উল্টো দিকে ২৫ জনের স্মার্ট স্যুটেড কর্মকর্তা রাত দিন অফিস করে, ব্রিটেনের লোকদের সাথে সাউথ আমেরিকায় স্বর্ণ ডিসকাউন্ট রেইটে বিক্রির অভিনব এক প্রতারণার ব্যবসায়িক অফিস খুলে বসে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলো গত ফেব্রুয়ারি থেকে। তাদের কার্যক্রম নিয়ে কারো কোন সন্দেহ হওয়ার মতো কোন কিছুই ওরা রাখেনি। ব্যস্ততম শহরের ব্যস্ততম এলাকায় অফিস খুলে এমন রমরমা ব্যবসা- কারো সন্দেহ হওয়ার কথা নয়।
সুসজ্জিত অফিস, প্রতিটি অফিসার ও কর্মকর্তা স্মার্ট এবং সুসজ্জিত। অফিসে রয়েছে আধুনিক যোগাযোগের সকল ব্যবস্থা, অফিস রেন্টও বিশাল। কারণ তারা স্বর্ণ ব্যবসায়ী-তাদের সাউথ আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতে ৩৬ বিলিয়ন ডলারের স্বর্ণের সন্ধান মিলেছে, যা এখন তাদের কোম্পানিতে রিজার্ভ। তারা সেই স্বর্ণ ডিসকাউন্ট রেইটে বিক্রি করার জন্য গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে ব্রিটেনে ফোন, ইমেইল, মোবাইল, ফ্যাক্সের মাধ্যমে বিভিন্ন জনের সাথে কন্টাক্ট করে ব্যবসায়িক ডিল কার্যক্রম করে যাচ্ছে। পুলিশের ধারণা ইতিমধ্যেই তারা বিপুল পরিমাণ পাউন্ড ব্রিটেনের জনগণের কাছ থেকে আদায় করে সাউথ আমেরিকায় ট্রান্সফার করেছে। অথচ আদৌ ক্যালিফোর্নিয়াতে তাদের কোন স্বর্ণ প্রাপ্তির রেকর্ড নেই, যদিও থাকে তবে নেহায়েতই যে কম, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা এবং ব্যবসা করার মতো নয়। ৩৬ বিলিয়ন ডলারের স্বর্ণ প্রাপ্তি- আমেরিকার ইতিহাসে বৃহৎ স্বর্ণ প্রাপ্তির রেকর্ড- যা ট্রেজারির অবগত হওয়ার কথা। অথচ ট্রেজারির রেকর্ডে সেরকম কোন রেকর্ড নেই।
London3লন্ডনের স্পেশাল ফ্রড স্কোয়াড, মেট্রোপলিটন পুলিশ আর ২০ জন অফিসারের একদল ডিটেকটিভ টিম আজ সকালের লিভারপুল ষ্ট্রীটের বিশপগেইটের এই অফিস খোলার সঙ্গে সঙ্গে রেইড দেয় চতুর্দিক ঘেরাও করে। পুলিশের এই ডিটেকটিভ দল অফিসে ঢুকে ধাঁধায় পড়ে যায়, এতো দামী অফিসে এরকম প্রতারণা!
পুলিশ দেখতে পায় অফিসের ভিতরে সুসজ্জিত সেক্রেটারিয়েট টেবিলে টেলিফোন, কম্পিউটার সহ ২৫ জন সুসজ্জিত অফিস স্টাফ। সকলকেই এরেস্ট করে পুলিশ। জব্দ করে সকল কম্পিউটার, ফ্রিজ করে কোম্পানির ব্যাংক একাউন্ট, টেলিফোন স্যাটেলাইট সব নিয়ে যায় পুলিশ পরীক্ষা করার জন্যে।
পুলিশের কাছে তারা স্বীকার করে তাদের প্রত্যেকের টার্গেট ২০,০০০ পাউন্ড করে দেয়া। পুলিশের তাই ধারণা ইতিমধ্যে বহু মিলিয়ন পাউন্ড ওরা হাতিয়ে নিয়েছে।
পুলিশ ইতিমধ্যে এপিল করেছে, এই অফিসের মাধ্যমে যারা প্রতারিত হয়েছেন, পুলিশের সাথে যোগাযোগ করার জন্যে, পুলিশ জব্ধকৃত টাকা থেকে প্রতারিতদের কাছে বণ্টন করে দিবে।
জানা যায়, এই অফিসের ব্যাংক একাউন্টের সূত্র ধরেই পুলিশের তল্লাশি অভিযান, যেখানে ব্যাংকের সহায়তায় এই প্রতারকদের এরেস্ট করতে পুলিশ সক্ষম হয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button