ব্রিস্টলে অসহনীয় মুসলিম বিদ্বেষ

Anti Muslimকেলি জিয়ান নামের একজন বৃটিশ শ্বেতাঙ্গ মহিলা ১৮ বছর বয়সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় ভাবতে পারেননি শুধুমাত্র মুসলমান হওয়ার কারণে তাকে এত বেশি লাঞ্ছনা ও অবমাননার সম্মুখীন হতে হবে। তার বর্তমান বয়স ৩৮ এবং তিনি তিন সন্তানের জননী। জিয়ান গত বুধবার বৃস্টল পোস্টকে বলেন, এখন থেকে ১৯ বছর আগে আমি ইসলাম গ্রহণ করি। আমি বেডমিনস্টারে বড় হয়েছি। গত ১০ বছরে পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়ে গেছে। আমার হাতে এত বেশি সংখ্যক আঙ্গুল নেই যে, যত হামলা ও হয়রানির ঘটনা ঘটেছে তার হিসাব করা সম্ভব। তিনি বলেন, আপনার সঙ্গে যে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে তার প্রত্যেকটি রিপোর্ট করার মত বিষয় নয় বলে আপনি মনে করতে পারেন। তবে আমি জানি, যত ছোটই হোক প্রতিটি বিদ্বেষমূলক অপরাধের রিপোর্ট করা উচিত এবং সবাইকে তা করতে বলবো।  বৃটেনের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বৃস্টল কাউন্টিতে বসবাসকারী জিয়ান ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার পর থেকেই হয়রানি ও অপমানের শিকার হন। তবে হিজাব পরা শুরু করলে এর মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। ১৯ বছর আগে একটি ধর্মীয় সেসনে অংশ নেয়ার পরই জিয়ানের ভাবান্তর ঘটে এবং খৃষ্ট ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি একজন খৃস্টান ছিলাম এবং আমার জন্য সঠিক ধর্ম কোনটি তার সন্ধান করছিলাম। আমি ঐ অধিবেশন থেকে বের হয়ে আসি এবং ইসলাম কি জিনিস তা বুঝতে পারি। এরপর থেকেই আমার জীবনের একটা বড় অংশ হয়ে দাঁড়ায় ইসলাম।
অতীতের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে জিয়ান বলেন, যখন আমি ধর্মান্তরিত হই তখন একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। আমি দেখেছি যারা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তাদের আসলে ইসলাম সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই। তবে আমি ভালো সমর্থনও পেয়েছি। শৈশব থেকে যারা আমার বান্ধবী ছিল তাদের সঙ্গে এখনো বন্ধুত্বের সম্পর্ক আছে।
বৃস্টলে কোন বর্ণবাদী হামলা ও বিদ্বেষমূলক ঘটনা ঘটছে না বলে পুলিশ দাবি করার পর এই শ্বেতাঙ্গ মুসলিম মহিলা তার অভিজ্ঞতার ব্যাপারে মুখ খোলার সিদ্ধান্ত নেন।
জিয়ান বলেন, আমি খবরে দেখলাম ইস্ট স্ট্রীটের পাউন্ডস্টেচারে মুসলিম মহিলার উপর হামলা হয়েছে। এ ঘটনা সম্পর্কে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, নগরীতে বর্ণবাদী অপরাধের ঘটনা খুবই বিরল। তিনি বলেন, আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, এটাকে তারা কোন ঘটনাই বলে মনে করে না।
শুধুমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে কতবার যে জিয়ান হয়রানি ও বর্ণবিদ্বেষী হামলার মুখোমুখি হয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। বছরের পর বছর ধরে তাকে বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে দেখা গেল একলোক তার হিজাব টেনে ছিঁড়ে ফেলার চেষ্টা করছে। আবার কোথাও তাকে ‘পাকি’ বলে ডাকা হচ্ছে। অন্য এক ঘটনায় জিয়ান তার বাচ্চাদের নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় এক ড্রাইভার তাদের দিকে গাড়ি চালিয়ে দেয়। এতে বাচ্চারা ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। এতে ট্রাফিক আইন লংঘনের জন্য ড্রাইভার দোষী সাব্যস্ত হয় ও তাকে সাজা দেয়া হয় কিন্তু একটি মুসলিম পরিবারকে হয়রানি করার জন্য কোন শাস্তি পায়নি। অপর এক ঘটনায় জিয়ান ক্যাম্পাস পয়েন্ট স্কুল থেকে তার ছেলেমেয়েদের অপর একটি প্রাইমারী স্কুলে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করান। ঐ স্কুলে বাচ্চাদের অভিভাবকরা তাকে হয়রানি ও অপমান করলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন প্রতিক্রিয়া না পাওয়ায় তিনি ছেলেমেয়েদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। জিয়ান বলেন, অধিকাংশ সময় আমি আমার গায়ের রঙ নিয়ে চিন্তা করি না। আমার মনে হয় শুধুমাত্র মাথায় হিযাব থাকার কারণেই এমন পরিস্থিতিতে আমাকে পড়তে হয়। মাঝে মধ্যেই আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়। আমি সিরীয় কিনা। আমার উজ্বল গায়ের রঙ ও একজন মুসলিম হওয়ায় এ ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। আবার আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়, আমি সোমালীয় কিনা। অথচ আমি কখনো শে^তাঙ্গ কোন সোমালীয় দেখিনি।
জিয়ান যুক্তরাজ্যে মুসলিম বিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে পড়ার কয়েকটি কারণের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি, লন্ডনে বৃটিশ সৈনিক হত্যা ও যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার ঘটনা সম্পর্কে মিডিয়ায় যে মুসলিম বিরোধী নেতিবাচক কল্পকাহিনী প্রচার করা হয় তাই মূলত এসব ঘটনার জন্য দারা জিয়ান যেমন প্রতিদিনই কোন না কোন ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন তার আলজেরীয় বংশোদ্ভূত স্বামী আব্দুল কাদির কিন্তু সেরকমটা হচ্ছেন না। তিনি মাত্র দুইটি হয়রানির ঘটনার কথা স্মরণ করতে পারলেন। অন্যদিকে বেডমিনস্টারের কর্মকর্তারা বলছেন, এখানে বর্ণ বিদ্বেষমূলক অপরাধের হার খুবই কম। বেডমিনিস্টারের ওয়ার্ড কাউন্সিলর কলিন স্মীথ বলেন, এখানে অপরাধের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে বর্ণবিদ্বেষী ঘটনা সম্পর্কে আমাকে কেউ জানায়নি। আমার ওয়ার্ডটি একটি আদর্শ স্থান এবং বলতে গেলে এখানে সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর প্রতি উল্লেখ করার মতো নৈতিকবাচক দৃষ্টি ভঙ্গি কারোর নেই। এছাড়া প্রকাশ্যে এ ধরনের কোন ঘটনা খুবই বিরল।
বর্ণবিদ্বেষী অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের থানায় অভিযোগ জানানোর জন্য উৎসাহ দিয়ে পুলিশের মুখপাত্র হলি মেরি বোন বলেন, এ ধরনের কোন অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নেয়া হয় এবং সব সময় এ ব্যাপারে বিস্তারিত তদন্ত করা হয়। টেল মামা হেলপলাইনের প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয় ২০১২ সারে তাদের কাছে বর্ণবিদ্বেষী হামলার যেসব অভিযোগ আসে তাতে দেখা যায় মুসলিম মহিলারাই সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয়। রিপোর্টে বলা হয়, শারীরিকভাবে লান্থিত হওয়ার ঘটনার মধ্যে প্রধানত রাস্তায় চলাচলকারী হিজাব পরিহিত মহিলাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button