মিডিয়ায় বিয়ে ভাঙ্গার প্রবণতা বাড়ছে

বাংলাদেশি তারকাদের বিয়ে ভাঙ্গার প্রবণতা বাড়ছেই। বছরে কয়েকটি করে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছেই। এর কারণ একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম। তবে বিষয়গুলো ঘুরেফিরে বটেরতল এরকম শোনায়। পরকীয়া, মদ, ইয়াবা, উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়া, জীবনটাকে নেতিবাচক এডভেঞ্চারে পরিণত করা ও অতি স্বাধীনচেতা মনোভাবই এর বড় কারণ।
সবার আগে মানুষ, তারপর তারা তারকা। তাদের মান-অভিমান, শখ-আহলাদ তো থাকবেই। আর এসব মানবিক অভ্যাসের রেশ ধরে অনেক ঘটনাই ঘটবে তাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো স্বাভাবিক ঘটনা বিনোদন জগতের পরিচিত মানুষদের ক্ষেত্রে ঘটলেই তা যেন আর স্বাভাবিক থাকে না। কারণ সাধারণ মানুষের কাছে এ মানুষগুলো সব সময়ই অসাধারণ।
তারকাদের যেকোনো ভালো ঘটনা যেমন সাধারণকে ছুঁয়ে যায় তেমনি চুন থেকে পান খসলেই নানান অনুযোগ-অভিযোগের সমাহার ঘটে।
বিজরী- ইমন : অভিনেত্রী বিজরী বরকতউল্লাহর সাথে সংসাররত অবস্থাতেই পরকীয়ায় জড়ান সঙ্গীত পরিচালক শওকত আলী ইমন। জিনাত কবীর নামের এই মেয়েকে বিয়ে করার নাম করে তারা একসাথে বসবাস করতে থাকেন। এরপর আর দেরি নয়। অনেক জল ঘোলা করে বিজরী বিয়ে করেন অভিনেতা ইন্তেখাব দিনারকে।
হিল্লোল-তিন্নি : তিন্নি ও হিল্লোলের প্রেম থেকে বিয়ে ছিল বাংলাদেশের মিডিয়ার খুব আলোচিত বিষয়। তারা ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু তিন্নির নেশাগ্রস্ততা ও পরপুরুষের প্রতি আসক্তিই নাকি এই ভাঙার মূল কারণ। এখন তিনি বেশ অসুস্থ।
অপি-মাসুদ হাসান উজ্জ্বল : জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী অপি করিম কয়েক বছর আগে কম্পিটার ইঞ্জিনিয়ার তাশির আহমেদকে বিয়ে করেন। ভালোই ছিলেন তারা। হঠাৎই তাদের বিয়ে বিচ্ছেদের গুঞ্জনের রব উঠে। অপির মিডিয়াতে কাজ ও অনেক মানুষের সাথে মেলামেশাকে কোনোভাবেই ভালো চোখে দেখতে পারেননি তার স্বামী। এরপর অপি বিয়ে করেন পরিচালক মাসুদ হাসান উজ্জ্বলকে। গত মাসেই তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
মিমো-রানা : বছরদুয়েক আগে সুপার হিরো সুপার হিরোইন খ্যাত মিমো সাংবাদিক এমএস রানাকে বিয়ে করেন। কিন্তু নানান অভিযোগ ও সন্দেহের বেড়াজালে তাদের আন্তরিকতায় ছেদ পড়ে। অবশেষে তারা বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটান এ বছরই।
অপূর্ব-প্রভা : প্রভা তার সাবেক প্রেমিক রাজিবের সাথে আচমকাই সম্পর্কের ইতি টেনে অপূর্বকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু প্রভার সাথে রাজিবের ব্যক্তিগত ভিডিও প্রকাশের পর প্রভাকে ডিভোর্স করেন অপূর্ব। এরপরের কথা সবারই জানা।
তাজিন-এজাজ মুন্না : অভিনেত্রী তাজিন আহমেদ ও ছোট পর্দার পরিচালক এজাজ মুন্না ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু তাদের সংসারও টেকেনি বেশি দিন। এজাজ মুন্নার মাদক ও বিয়ের পরও অন্য নারীদের প্রতি আসক্তি তাদের সম্পর্কের ফাটল ধরিয়েছিল। অবশেষে বিবাহ বিচ্ছেদ করে মুন্না অভিনেত্রী মমকে বিয়ে করেন ও তাজিন এক মিউজিশায়নকে বিয়ে করেন।
শ্রাবন্তী-পার্থ বড়ুয়া : প্রেম করেই বিয়ে করেছিলেন অভিনেত্রী শ্রাবন্তী ও পার্থ বড়ুয়া। তাদের সংসারেও এমন বিপত্তি। পার্থর অভিযোগ ছিল শ্রাবন্তী মাদকাসক্ত। আর শ্রাবন্তীর অভিযোগ ছিল পার্থ নারী আসক্ত। তাহলে কী করে সংসার টেকে। পার্থ এখনো গান ও অভিনয় নিয়েই আছেন। কিন্তু হারিয়ে গেছেন শ্রাবন্তী। তিনি মিডিয়া ছেড়ে বিয়ে করেছেন এক প্রবাসীকে। সেখানে সম্প্রতি তিনি এক সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।
প্রাচী-আসিফ : প্রথম স্বামী সার্জেন্ট আহাদ পারভেজের মৃত্যুর কয়েক বছর পর বিয়ে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে। এই দম্পতির দুই সন্তানও রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্যের কারণেই নাকি ঘর ভেঙেছে এই দম্পতির। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই বিচ্ছেদ হয়েছে তাদের।
এই নামগুলো ছাড়াও তারিন-সোহেল আরমান, রুমানা-আনজাম মাসুদ, ফরিদী-সুবর্ণাসহ আরো অনেক নাম আছে। আবার অনেকে মিডিয়ায় পা রেখেই বিয়ে করেছেন। কয়েক মাস পরেই তাদের সংসার ভেঙেছে এবং সেই সাথে আর মিডিয়ায় পা বাড়াননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মিডিয়া কর্মী জানান, এ কারণগুলোর মূল হলো মিডিয়ার নামে অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করার প্রবণতা ও নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয়। এছাড়া অনেক অসাধু নির্মাতা নতুন অভিনেত্রীদের অভিনয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করেন। আর মাদকের ভয়াল ছোবলতো আছেই। মাদক ছাড়া নাকি শিল্পীর মুড ঠিক হয় না এসব ভ্রান্ত ধারণাকে প্রচার  করেই তারা তাদের অসাধু কর্ম চালায়। এসব নানান নেতিবাচক কর্মের জন্যই বাড়ছে বিয়ে ভাঙ্গার প্রবণতা।