লন্ডনে সরগরম বাংলাদেশী রাজনীতি, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ

ইব্রাহিম খলিল : মহাজোট সরকারের শেষ প্রান্তে এসে লন্ডনে আবারো সরগরম হচ্ছে বাংলাদেশী রাজনীতি। দুই দলের দুই প্রভাবশালী ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে নেতাকর্মীদের পদচারণা। কেউ আপার আশির্বাদ আর কেউ ভাইয়ার আশির্বাদ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। মনোনয়ন আর পদ পদবী নিয়ে চলছে নানা হিসেব নিকেশ। প্রবাসী নেতাদের পাশাপাশি সুদুর বাংলাদেশ থেকেও ডজন ডজন নেতারা এসে ভিড় জমাচ্ছেন লন্ডনে। অনুসন্ধ্যানে দেখা গেছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিজ নিজ এলাকায় প্রার্থী হওয়ার দৌড়। সভা সমাবেশ আর মিডিয়া কাভারেজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন নেতারা। বিশেষ করে রমজান আসতেই পাল্টে গেছে রাজনীতির দৃশ্যপট। ইফতার মাহফিলকে কেন্দ্র করেই এখন জমজমাট বাংলাদেশী রাজনীতি। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী এগিয়ে আছেন বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ আসনের বর্তমান প্রবাসী এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এই দুজনের মধ্যে এখন চলছে পাল্টাপাল্টি ইফতার মাহফিলের মহড়া। চলতি মাসের শুরুর দিকে লন্ডনে সফরে আসেন এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী। তাকে হিথ্রো বিমানবন্দরে স্বাগত জানান, প্রবাসী বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথের প্রবাসীরা। এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে তিনি চষে বেড়িয়েছেন ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে। মনে করা হচ্ছে নির্বাচনের আগে এটি হতে পারে তার শেষ ব্রিটেন সফর । তার নির্বাচনী এলাকার প্রবাসীদের ব্যানারে পূর্ব লন্ডনের ওয়াটারলিলি হলে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে দেওয়া বক্তব্যে শফিক চৌধুরী এমনটিই ইঙ্গিত দেন। শফিক চৌধুরীর এই ইফতার মাহফিলে যোগ দেন সাংবাদিক কলামিষ্ট আব্দুল গাফফার চৌধু্রী, এমপি রোশনারা আলী, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ ও সেক্রেটারী সৈয়দ ফারুকসহ বিশ্বনাথ বালাগঞ্জের বিভিন্ন স্থরের প্রবাসীরা। এক সময়ের কমিউনিটি নেতা ও যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত শফিকুর রহমান চৌধুরীর লন্ডনে রয়েছে বেশ জনপ্রিয়তা। বিশেষ করে পূর্ব লন্ডনে তার সমর্থকদের রয়েছে শক্ত ঘাটি। এসব কারনেই লন্ডনে আসলে শফিক চৌধুরী ব্যস্থতা অনেকটা বেড়ে যায়। কিন্তু এবার এই ব্যস্থতা অনেকটা বেড়ে গেছে নির্বাচনী মাঠের দৌড়ে থাকা তারই নিজ দলের আরেক নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তৎপরতায়। শফিকুর রহমান চৌধুরীর ইফতার মাহফিলের পর এবার আগামী ২৯ জুলাই সোমবার ইফতার মাহফিলের ঘোষনা দিয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তার সমর্থক , শুভানুধ্যায়ী, কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক এলাকাবাসীদের নিয়ে এটি হবে এযাবৎকালের সবচেয়ে বৃহৎ ইফতার মাহফিল। তার সমর্থকরা নানাভাবে দাওয়াত পৌছে দিচেছন মানুষের কাছে। ধারনা করা হচ্ছে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর এই ইফতার মাহফিলে হবে বিরাট শোডাউন। আনোয়ারুজ্জামান নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন এমন আনুষ্ঠানিক ঘোষনা অতীতে তিনি না দিলেও ইফতার মাহফিলে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নিজেকে ঘোষনা দিতে পারেন। তার সাথে টেলিফোনে কথা হলে তিনি জানান, অনেক আগেই তিনি নিজেকে বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জের প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা দিয়েছেন। তবে দল যাকে মনোনয়ন দিবে সেই সিদ্ধান্ত তিনি মাথা পেতে মেনে নিবেন। তৃণমূল থেকে উঠে আসা তরুন রাজনীতিবিদ আনোয়ারুজ্জামানকে নিয়ে প্রবাসী আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে বিপুল আগ্রহ। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও সর্বশেষ যুক্তরাজ্যে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে বিপুল জনপ্রিয় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বালাগঞ্জ-বিশ্বানাথে প্রার্থী হচ্ছেন এমন প্রত্যাশা করছেন বিশেষ করে বালাগঞ্জ এলাকার প্রবাসীরা। ভোট ব্যাংকের হিসেবে বালাগঞ্জের প্রভাব থাকলেও গত দুই টার্মে এই এলাকা থেকে কেউ এমপি প্রার্থী হননি। এবার বালাগঞ্জবাসী আনোয়ারুজ্জামানকে প্রার্থী হিসেবে চাইতে পারেন এমন ধারনাও করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। দলের বাহিরেও কমিউনিটির মানুষের মধ্যে দ্রুত বাড়ছে আনোয়ারুজ্জামানের গ্রহনযোগ্যতা। একজন ভদ্র ও বিনয়ী তরুন রাজনীতিবিদ হিসেবে রয়েছে তার আলাদা সুনাম। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার কাছেও রয়েছে আনোয়ারুজ্জামানের আলাদা কদর। এই হিসেবে আগামী নির্বাচনে আনোয়ারুজ্জামান সিলেট-২ আসনের টিকিট পেলে অবাক হওয়ার মতো কিছু হবেনা বলে মনে করা হচ্ছে। জানাগেছে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ইফতার মাহফিলের পূর্বেই দেশে ফিরে যাচ্ছে শফিক চৌধুরী। বিগত দিনে আওয়ামীলীগের এই দুই প্রবাসী নেতার লড়াই বিশ্বনাথ বালাগঞ্জে সীমিত ছিলো। সরকারের শেষ প্রান্তে এসে এই লড়াই যুক্তরাজ্য প্রবাসী বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথবাসীদের কাছে জমে উঠছে। এখন দেখার পালা শেষ লড়াইয়ে কে জিতেন আর কে হন পরাজিত।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button