থামছে না নিষ্পাপ শিশুদের করুণ মৃত্যুর মিছিল

Kidযুদ্ধ আর হিংসায় মত্ত অসমতার এই পৃথিবীতে জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রতিনিয়ত স্বপ্নভূমির উদ্দেশে দেশ ছাড়ছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জাহাজ বা নৌকায় চড়ে বসছেন অসংখ্য শরণার্থী। আর উত্তাল সাগরের বুকে একের পর নৌকাডুবিতে প্রাণ যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষের। এ তালিকায় সর্বশেষ এক মর্মান্তিক সংযোজন গত শুক্রবার ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার হওয়া এক শিশুর লাশ। ওই সাগরে সম্প্রতি অভিবাসীদের নৌকাডুবির ঘটনায় মারা যায় শিশুটি।
গত সোমবার নিহত শিশুটির একটি হৃদয়গ্রাহী ছবি প্রকাশ করে সি-ওয়াচ নামের একটি মানবিক সংগঠন। জার্মানির এক উদ্ধারকর্মীর বাহুতে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া ছোট্ট এক শিশুর দেহ- এই একটি ছবিই গত সপ্তাহে ভূমধ্যসাগরে শরণার্থীদের ভয়াবহ অবস্থার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। শিশুটির আনুমানিক বয়স এক বছর। অভিবাসনপ্রত্যাশী লোকজন বোঝাই কাঠের একটি নৌকা ডুবে যাওয়ার পর ভূমধ্যসাগর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
সি-ওয়াচ-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “ইইউ’র রাজনীতিবীদরা যদি ভবিষ্যতে সমুদ্রে মৃত্যুর মিছিল আর দেখতে না চান তবে সর্বনাশের প্রাক্কালে তাদের নিদ্রা ঘুম ভাঙানোর জন্য এ এক প্রবল ধাক্কা। যদি আমরা আর এই ধরনের ছবি দেখতে না চাই তবে আমাদেরকে অবশ্যই এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া ঠেকাতে হবে।”
ছবিটি বিতরণ করে মানবিক উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত সংগঠনগুলো ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষের চোখ খুলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। শিশুটিকে উদ্ধার করে কোলে নেয়ার মুহূর্তটিকে ‘হৃদয়বিদারক’ হিসেবে আখ্যা দেন মার্টিন নামের ওই উদ্ধারকারী ব্যক্তি।
মার্টিনের ভাষায়, ‘সাগরে ‘হাত দুটি ছড়ানো, পুতুলের মতো’ শিশুটিকে আমি শিশুটির হাত ধরে পানি থেকে টেনে তুলি। যত্নের সঙ্গে আমার বাহুতে শুইয়ে দেই। দেখে মনে হচ্ছিল, যেন সে তখনও জীবিতযেন সে তার ছোট ছোট আঙ্গুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে বাতাস ধরতে চাইছে, তার উজ্জ¦ল, মিশুক কিন্তু নিথর চোখ জোড়া সূর্যের আলোয় চকচক করছিল। নিজেকে শান্ত রাখতে আমি গুণগুণ করে গান গাইতে শুরু করি। মাত্র ছয় ঘণ্টা আগেও শিশুটি জীবিত ছিল।’
শিশুটির বাবা-মা জীবিত আছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত কোনও তথ্য দিতে পারেনি উদ্ধারকর্মীরা। রয়টার্স জানায়, জার্মান মানবিক ত্রাণ সংগঠন সি-ওয়াচ সমুদ্র থেকে প্রায় ২৫টি লাশ উদ্ধার করেছে। যাদের মধ্যে আরও শিশু রয়েছে।
এর আগে চার বছর বয়সী সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির সৈকতে ভেসে আসা লাশের ছবি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল। ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে তুরস্কের উপকূলে সন্ধান মেলে আয়লানের মৃতদেহের। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে নিথর পড়ে থাকা শিশু আয়লান কুর্দির নাম শুনলে এখনও স্তব্ধ হয়ে যান অনেকে। ছোট নৌকায় থাকা আয়লান ও তার ভাই ভেসে যায় তুরস্কের সৈকতে। তাদের মা ভেসে যান দূরের অন্য এক সৈকতে। এখনও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সপরিবারে সাগরে ভাসছেন হাজারো আয়লান কুর্দি। এই শরণার্থীদের সলিল সমাধি যেন থামছেই না। থামছে না নিষ্পাপ শিশুদের করুণ মৃত্যুর মিছিল।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button