হরতালের প্রথম দিনে সারাদেশে সহিংসতায় নিহত ৫

Hortalনির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা তিন দিনের হরতালের প্রথম দিনে রোববার বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় মোট পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন পাবনার ঈশ্বরদীতে জামায়াতকর্মী জুলহাস উদ্দিন মুন্নাফ (৩৫), পিরোজপুরে যুবলীগ কর্মী স্বপন শীল (৩০), ফরিদপুরে মারুফ হোসেন (১৬), যশোরে আলমগীর হোসেন শিমুল ও বগুড়ায় বিএনপি কর্মী শাজাহান আলী (৩৮)।
ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হরতাল চলাকালে ১৮ দলের সমর্থনে পিকেটিংয়ের সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলায় এক জামায়াত কর্মী নিহতসহ ছাত্রশিবির ও যুবদলের ৩০ জন আহত হয়েছে। আহতদের পাঁচজনের অবস্থা আশংকাজনক। তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিুব্ধ নেতাকর্মীরা আওয়ামীলীগের ৮/১০টি বাড়ী ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলাধীন মুলাডলির শেখ পাড়া নামক স্থানে নাটোর-পাবনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের উপর জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা পিকেটিং করছিল। সকাল ১১ টার সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের এক দল সন্ত্রাসী ১০/১২টি মটর সাইকেল নিয়ে পিকেটারদের উপর অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে। এসময় জুলহাস উদ্দিন মুন্নাফ (৩৫) নমের এক জামায়াতকর্মী নিহত ও ঈশ্বরদী দক্ষিণ শিবির সভাপতিসহ পাঁচজন গুরুতর আহত। আহতদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত জুলহাস উদ্দীন একই উপজেলার শরাইকান্দি গ্রামের শফিউদ্দিনের ছেলে। তার লাশ বাড়ীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ঈশ্বরদী শিবির সভাপতি ও এডওয়ার্ড কলেজের ইংরেজি অনার্সের ছাত্র ফরিদ উদ্দিন (২৫) এবং শিবিরকর্মী ইসলাম হোসেন (২৩) ও সোহাগকে আশংকাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বিুব্ধ জনতা যুবলীগ নেতা মিল্টনের বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করে। ১৮ দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় মিল্টন ও মিঠুর নেতৃত্বেই জামায়াত শিবিরের উপর গুলিবর্ষণ করা হয়।
এদিকে হরতালের প্রথমদিনে পিরোজপুরে নিহত হয়েছে একজন। পুলিশ ও সরকার দলীয়দের হামলায় শতাধিক ১৮ দলীয় জোটের নেতা কর্মীরা আহত হয়েছে। অন্তত ২৫ জন হরতাল সমর্থককে আটক করা হয়েছে বলে বিএনপির দলীয় সূত্র জানিয়েছে। সকালে জেলা বিএনপির সভাপতি গাজী নুরুজ্জামান বাবুল, সিনিয়র সহসভাপতি সাবেক পৌরসভা চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী শেখ বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা পিরোজপুর শহরের পোষ্ট অফিস রোডে অবস্থান নেয়। অপদিকে আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের নেতা কর্মীরা সদর রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। পুলিশ ও সরকার সমর্থকরা তাদের উপর হামলা চালায়। এসময় সাদ্দাম নামের ছাত্রদল কর্মী আহত হয়। জিয়ানগরের বালিপাড়ায় হরতালের আগের রাতে দুর্বৃত্তদের হাতে তিন জন যুবলীগ কর্মী গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় স্বপন শীল (৩০) নামের একজন যুবলীগ কর্মী নিহত হয়েছে বলে পুলিশ সুপার নিশ্চিত করেছেন। আপর আহত বাপ্পি ও তার পিতা আলাউদ্দিনকে কোথায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। এ ঘটনায় দুলাল খান সহ আট জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলায় হরতাল সমর্থকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে। এতে পুলিশসহ আহত এসআই খলিলসহ চার পুলিশ ও র‌্যাবসহ আরো ৫০ জনের মতো আহত হয়েছে। এদের মধ্যে ফাতেমা (১৮), বাদুল (১৬), আবু সাঈদ (৩০), মায়েম (৩০), ফেরদৌস (২০) নামে ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। সংঘর্ষে একজন পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যসহ আহত হয়। সকালে ৭টার দিকে নগরকান্দার জুঙ্গুরদি বাসষ্ট্যান্ডের ব্রিজের কাছে যুবদলের একটি মিছিল থেকে পিকেটিং করার সময় পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি ছুড়ে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এসময় গুলিতে মারুফ হোসেন (১৬) নামে একজন নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয় দুজন। এদিকে পুলিশের গুলিতে মারুফের মৃত্যুর খবর পেয়ে বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিএনপি ও হরতাল সমর্থকেরা ঢাল, সড়কি ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পরে। নগরকান্দা সদরসহ তালমার মোড় ও বিভিন্নস্থানে গাছের গুড়ি ফেলে বেরিকেড দিয়ে প্রতিবদ্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। এসময় নগরকান্দাসদর ও জুঙ্গুরদী ব্রীজের নিকট বিপ্তিভাবে পুলিশের সাথে হরতাল সমর্থকদের সংঘর্ষে আরো ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে, সংঘর্ষের পর জেলা সদর থেকে র‌্যাব ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
যশোরের অভয়নগরে হরতাল সমর্থক ও বিরোধীদের সংঘর্ষে এক যুবলীগ নেতা নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। রোববার সকালে নওয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন শিমুল গুরুতর আহত হন। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সংঘর্ষকালে বেশ কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। নিহত শিমুল হুইপ অধ্যক্ষ আব্দুল ওহাবের বডিগার্ড হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ ঘটনার পর পুলিশ এলাকায় অভিযান শুরু করে।
বগুড়ার গাবতলীতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দু’গ্রপের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত এবং আহত হয়েছে ১০ জন। নিহত শাজাহান আলী (৩৮) গাবতলী উপজেলার নেপালতলী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ও দওর গ্রামের মৃত ছায়েদ আলীর ছেলে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button