ভোটে জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটেনি

Kaledaবিএনপি চেয়ারপারসন ও ১৮ দলীয় জোট নেত্রী বলেছেন, গায়ের জোরে সরকার বেশি দিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। বাংলাদেশের জনগণ এ সরকারকে চায় না। তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চায়। তিনি আরো বলেন, দেশ এখন গণতন্ত্রবিহীন অবস্থায় রয়েছে। তাই এখন শুরু হবে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।
বুধবার বিকেলে রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনের আগে ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের ভোটচিত্র নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র সাংবাদিকদের দেখানো হয়।
খালেদা বলেন, এই ভোটে জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটেনি। এই প্রহসন দেশের মানুষ বর্জন করেছে। সারাদেশে কোথাও মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। গড়ে সারাদেশে পাঁচ শতাংশ ভোট পড়েনি। অথচ আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন ৪০ শতাংশ ভোট পড়ার ঘোষণা দিয়েছে। সবার চোখের সামনে এতবড় জালিয়াতি করে এখনো বড় বড় কথা বলছে। জনগণের থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে সরকার বেসামাল হয়ে পড়েছে। তারা রাজনীতিকে কলুষিত করে ফেলেছে। নির্বাচনের নামে গত ৫ জানুয়ারি তারা প্রহসন করেছে। প্রমাণিত হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ হতে পারেনা। প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগ তরুণ ভোটারসহ সারাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। নির্বাচন কমিশন আজ্ঞাবহ। এ নির্বাচন কোথায়ও গ্রহণযোগ্য হয়নি।
তিনি বলেন, কারসাজির মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ার মধ্য দিয়ে ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার অপকৌশল বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ার মানুষ মেনে নেয়নি। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, কোনো শক্তির চাপের কাছে তিনি মাথা নত করেন নি। ইতিহাসে প্রমাণ রয়েছে এমন শাসকরা কোনোকালে ক্ষমা পায়না।
খালেদা জিয়া বলেন, গায়ের জোরে সরকার বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। বাংলাদেশের জনগণ এ সরকারকে চায় না। তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চায়।
তিনি বলেন, জনগণ বিভ্রান্ত হয়নি। তারা প্রহসনের নির্বাচন বাতিল করে দিয়েছে। আন্দোলনে তারা সীমাহীন ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এ সরকার অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ।
খালেদা জিয়া বলেন, আন্দোলনে নিরীহ-নিরাপরাধ মানুষ প্রাণ দিয়েছে। গুম করা হয়েছে কয়েকশ বিরোধী নেতাকর্মীকে। বিরোধীদের মালামাল লুট করা হচ্ছে। তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়া হচ্ছে।
নির্দলীয় সরকারের বিকল্প নেই দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য সংলাপের উদ্যেগ নেয়ার জন্য আমি আহবান জানাচ্ছি। অবিলম্বের নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। পার্টি অফিস খুলে দিতে হবে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।
সংসদ জনপ্রতিনিধিত্বহীন উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ক্ষমতার দোহাই দিয়ে সংবিধান লংঘন করা হচ্ছে। এ সরকার বৈধ নয়। এ অবৈধ সরকার দীর্ঘায়িত হওয়া জনগণের জন্য বিপদজনক। এ জন্য সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, প্রহসনের নির্বাচন থেকে বিশ্বের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এব্যাপারে সরকারের ভূমিকা নীরব।
তিনি বলেন, সংবাদমাধ্যম ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, শাসক দলের নেতাকর্মীরা এতে জড়িত। আমি ১৮ দলের নেতাকর্মীদের এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানাচ্ছি। তদন্ত করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার আহবান জানাচ্ছি। এখন ব্যবস্থা না নেয়া হলে, জাতিসংঘ ও মানবাধিকার কমিশনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে তদন্ত করা হবে।
জামায়াতের সাথে জোট ছাড়া হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে  খালেদা জিয়া বলেন, আমরা সবার সাথে সুসম্পর্ক চাই। দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কারো হস্তক্ষেপ চাইনা। জামায়াত একটি গণতান্ত্রিক দল। জামায়াতকে সাথে নিয়ে অতীতে আওয়ামী লীগই নির্বাচনে গিয়েছিলো আমরা যাইনি। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়কের জন্য আওয়ামী লীগই জামায়াতকে নিয়ে আন্দোলন করে।
এছাড়া ২০ জানুয়ারি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ, ২৯ জানুয়ারি সারাদেশে কালো পতাকা বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ১৮ দলীয়ে জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আর এ গনি, লে. জে. অব. মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, আব্দুল মান্নান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, ব্যারিস্টার হায়দার আলী, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন এয়ার ভাইস মার্শাল অব. আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শমসের মবিন চৌধুরী, বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদীন ফারুক, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান পটল, বেগম সারওয়ারী রহমান  প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
১৮ দলীয় জোটে নেতৃবৃন্দের মধ্যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ড. কর্নেল অব. অলি আহমদ, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পাার্টির চেয়ারম্যান শফিউল আলম প্রধান, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ড. রেদোয়ান উল্লাহ শাহেদী, ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামী, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল মোবিন, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, খেলাফত মজলিশের সভাপতি মাওলানা ইসহাক, মুসলিম লীগের সভাপতি এইচ এম কামরুজ্জামান, জমিয়তে ওলামে ইসলামের সহ সভাপতি মাওলানা জহিরুল হক ভূইয়া, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্তুজা, এনডিপির সভাপতি শেখ শওকত হোসেন নীলু, ন্যাপের সভাপতি সভাপতি জেবেল রহমান গানি, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হক উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button