অবৈধ ইমিগ্রান্টদের বৈধতা দিতে দৃঢ় অবস্থানে হোয়াইট হাউজ

USAআনোয়ার হোসেইন মঞ্জু নিউ ইয়র্ক: প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নির্বাহী আদেশের অনুসরণে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের বৈধতা দিতে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনি উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছে হোয়াইট হাউজ। নির্বাহী আদেশের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশীসহ প্রায় ৫০ লাখ বিদেশী ইমিগ্রান্টকে সাময়িক বৈধতা দেয়ার জন্য গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে যে কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল, এর মাত্র দুই দিন আগে টেক্সাসের ফেডারেল আদালতের বিচারপতি এন্ড্র হ্যানেন এর এক রুলিংয়ের কারণে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এই স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে নিউ অরলিয়ন্সের ফিফথ সার্কিট কোর্ট অব আপিলস এ স্থিতাবস্থার আদেশ চেয়ে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ কার্যকর করার তোড়জোড় শুরু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘ দিনের ইমিগ্রেশন জট কাটিয়ে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের মূলধারায় আনতে প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০১২ সাল থেকে রিপাবলিকানদের প্রতি ‘কম্প্রিহেনসিভ ইমিগ্রেশন রিফর্ম বিল’ পাস করার জন্য যে আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন রিপাববলিকানরা তাতে কর্ণপাত না করায়, এমনকি সিনেটে বিলটি পাস হওয়ার পর রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ বিলটি পাস না করার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে থাকায় ওবামা গত বছরের ২০ নভেম্বর তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে অবৈধদের বৈধতা দেয়ার ঘোষণা দেন। প্রেসিডেন্টের এ আদেশের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দার অবৈধ ইমিগ্রান্ট বাবা-মা, যারা পাঁচ বছর ধরে অব্যাহতভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করছেন তারা বৈধতা লাভের জন্য আবেদন করার যোগ্য বিবেচিত হবেন। এ বৈধতা প্রাথমিকভাবে তিন বছরের জন্য দেয়া হবে বলে ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত ২৬টি অঙ্গরাজ্য ওবামার সেই আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করলে এর কার্যকারিতা স্থগিত হয়ে যায়। এর ফলে অবৈধ ইমিগ্রান্ট, যারা বৈধতা লাভের আশায় এত দিন বুক বেঁধে ছিলেন, তারা এখন ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
টেক্সাসের আদালত যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন তাতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ওবামা তার সাংবিধানিক এখতিয়ার লঙ্ঘন করে ইমিগ্রেশন ইস্যুতে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ আদেশ দিয়েছেন। কারণ অবৈধভাবে অবস্থান এবং অপরাধ সঙ্ঘটনের জন্য যেসব ইমিগ্রান্টকে য্ক্তুরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করে তাদের নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার কথা, প্রেসিডেন্টের আদেশে তারা বৈধতা লাভের যোগ্য বিবেচিত হবেন, যা কোনো আমেরিকানের কাম্য নয়। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রায় সোয়া কোটি অবৈধ ইমিগ্রান্টের মধ্যে ৫০ লাখ ইমিগ্রান্টকে ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে বৈধভাবে কাজ করার সুযোগ দিলে তারা আমেরিকান করদাতাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। এ সম্পর্কে হোয়াইট হাউজের বক্তব্য হলো, অবৈধদের বৈধভাবে কাজ করার সুযোগ দিলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি আরো গতিশীল হবে এবং তারা নিয়মিত কর দিলে রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে।
এ দিকে ১০৪ জন ইমিগ্রেশন আইন বিশেষজ্ঞ অভিমত ব্যক্ত করেছেন, জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট নিউ অরলিয়ন্সের ফিফথ সার্কিট কোর্টে টেক্সাসের ফেডারেল কোর্টের নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা রহিত করে যে স্থিতাবস্থা চেয়েছে, আপিল কোর্ট যদি সে স্থিতাবস্থার আদেশ দেন তাহলে ওবামা প্রশাসন নির্বাহী আদেশের আওতায় আবার স্থগিত হয়ে যাওয়া কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। কিন্তু আপিলের সিদ্ধান্ত যদি বিচারপতি এন্ড্রু হ্যানেনের রুলিংয়ের পক্ষে যায় তাহলে আইনি লড়াই মাসের পর মাস চলতে থাকবে এবং ইমিগ্রান্ট যারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার ভীতিমুক্ত হয়ে বৈধভাবে অবস্থানের আশায় দিন গনছেন, তারা আরো বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন।
ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের গভর্নর জেরি ব্রাউন গত শনিবার হোয়াইট হাউজে ওবামা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ইমিগ্রেশন ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ওবামা আইনগতভাবে এবং তার সাংবিধানিক এখতিয়ারের মধ্যে থেকেই অত্যন্ত বিজ্ঞতার সাথে তার আদেশ দিয়েছেন। রিপাবলিকান গভর্নররা প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ দেয়ার এখতিয়ারকে চ্যালেঞ্জ করে ভুল করেছেন। তাদের লজ্জিত হওয়া উচিত।’ উল্লেখ্য, ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে সর্বাধিকসংখ্যক অবৈধ ইমিগ্রান্টের বসবাস এবং ক্যালিফোর্নিয়াকে ইমিগ্রান্টবান্ধব অঙ্গরাজ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ক্যালিফোর্নিয়াসহ ১৪টি অঙ্গরাজ্য ওবামার নির্বাহী আদেশ কার্যকর করার জন্য আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে যাতে শিগগির শুনানির ব্যবস্থা করে ইমিগ্রান্টদের বৈধতা দান কর্মসূচি শুরু করার সুযোগ উন্মুক্ত করা হয়। আজ ১৯ মার্চ আপিল আদালত প্রাথমিক শুনানির দিন ধার্য করেছে বলে জানা গেছে।
জাস্টিস ডিপার্টমেন্টও আপিল আদালতকে অনুরোধ জানিয়েছে যাতে যথাশিগগির আপিলের নিষ্পত্তি করে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের ব্যাপারে স্থগিত কর্মসূচি শুরু করার অন্তরায় অপসারণ করা হয়। হোয়াইট হাউজের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর আমেরিকান প্রগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্শাল ফিটজ মনে করেন, ‘ইমিগ্রান্ট জনগোষ্ঠীর যে অংশটি সামনে এগিয়ে আসতে চায়, তাদের আকাক্সায় বাধা দান অত্যন্ত ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে এখনই প্রয়োজনীয় সবকিছু করা উচিত।’
প্রেসিডেন্ট ওবামা গত ফেব্রুয়ারি মাসে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ইমিগ্রেশন ইস্যুতে যতটা কঠোর হওয়া প্রয়োজন, আমরা ততটাই কঠোর হবো। এ ব্যাপারে শুধু যে আইন আমাদের পাশে তাই নয়, ইতিহাসও আমাদের পাশে।’ ইমিগ্রেশন সমস্যার সমাধান করাকে ওবামা তার শাসনামলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব বলে বিবেচনা করেন এবং তার প্রশাসন মনে করে যে, ইমিগ্রেশন ইস্যুতে প্রেসিডেন্টের এখতিয়ার নিয়ে রিপাবলিকানরা যে প্রশ্ন তুলেছে, অচিরেই তার নিষ্পত্তি হবে এবং অবৈধ ইমিগ্রান্টরা নির্বিঘœ হওয়ার সুযোগ লাভ করবেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button