করোনাভাইরাস দেউলিয়া করতে পারে বিশ্বের বহু ব্যবসায়ীকে

করোনাভাইরাসের দরুন সংঘটিত আর্থিক ক্ষতি গণস্বাস্থ্যের প্রতি ঝুঁকির চেয়ে বহু বেশী। যদি ভাইরাস কারোর জীবনে সরাসরি আঘাত করে তবে এতে তার কাজে যাওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে, নিয়োগদাতা তাকে ছাঁটাই করতে পারে কিংবা ব্যবসা দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে।
এ সপ্তাহে আর্থিক বাজার থেকে ট্রিলিয়ন ডলার মুছে গেছে, যা শুরু মাত্র, যদি সরকারগুলো তা থামাতে না পারে। যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরিস্থিতি মোকাবেলায় অব্যাহতভাবে হোঁচট খেতে থাকেন তবে এটা তার পুন:নির্বাচনের সম্ভাবনাকে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বিশেষভাবে জো বাইডেন ট্রাম্পের জন্য কোভিড-১৯কে একটি দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি আমেরিকার প্রয়োজন মুহূর্তে দৃঢ় পুন:নিশ্চয়তাদানকারী নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ ৫১ মার্কিনীসহ ৫ হাজার ৬শ’র বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এ পর্যন্ত। কিন্তু এটা মিলিয়ন লোককে আর্থিক দিক দিয়ে পঙ্গু করে দেবে, বিশেষভাবে যেহেতু মহামারিটি স্টক মার্কেটকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সৌদী আরব ও রাশিয়ার মধ্যে তেলযুদ্ধ এবং সিরিয়ায় একটি প্রকৃত যুদ্ধ অপর একটি মারাত্মক শরণার্থী সংকট সৃষ্টির মতো কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।
ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মতোই- যদি তা এর চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ না হয়- তবে শংকার মহামরি প্রতিরোধে আমাদের অর্থনীতিকে প্রতিষেধক দিতে হবে। দৈহিক দুর্ভোগ অসুস্থতা ও মৃত্যুর আঙ্গিকে আসতে পারে। কিন্তু এটা বিল পরিশোধে অক্ষমতা কিংবা বাড়িঘর হারানোর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
ক্ষুদ্র ব্যবসা বিশেষভাবে যেগুলো সাপ্লাই চেইন হিসেবে সংগ্রাম করছে সেগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে, তাদের কোন পণ্য কিংবা আবশ্যকীয় সামগ্রী নেই। চীনে কলকারখানা বন্ধ হওয়ায় দেশটির ‘পারচেজিং ম্যানেজার্সেজ ইনডেক্স’ রেকর্ড নি¤œস্তরে পৌঁছেছে, যে ইনডেক্সে উৎপাদনের পরিমান প্রদর্শিত হয়। চীন বিশ্বের বৃহত্তম রফতানীকারক এবং মোট বৈশ্বিক উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশের উৎপাদনকারী। তাই চীনের সমস্যা হচ্ছে প্রত্যকের সমস্যা- এমনকি হোয়াইট হাউস ও বেইজিংয়ের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ চলাকালেও।

যুক্তরাজ্যে চ্যান্সেলর হৃষি সুনাক ইতোমধ্যে একটি ‘করোনাভাইরাস বাজেট’ ঘোষণা করেছেন। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সহ অন্যান্য দেশগুলোকে তাদের ছোট-বড়ো ব্যবসাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং নতুন অর্থনৈতিক বিশ্ব ব্যবস্থা থেকে ফায়দা হাসিল করতে সুযোগ অনুসন্ধান করতে হবে

এখন কল্পনাও করা কঠিন বিশ্বের নবম বৃহত্তম অর্থনীতি ইতালিতে মন্দা দেখা দিয়েছে। যদিও চীনকে ভাইরাসের আর্থিক ও মানবীয় ক্ষয়ক্ষতির ক্ষত বহন করতে হচ্ছে, তবুও বেইজিংয়ের অনেকে মার্কিন অর্থনীতির ক্রমশ: দুর্বল হয়ে পড়ার আলোর রেখা দেখতে পাচ্ছেন। ট্রাম্পের বাণিনজ্যযুদ্ধের প্রতি অনাসক্তির বিষয়টিও তাদের নজরে পড়ছে। অথচ ক’দিন আগেও এমন যুদ্ধের বিস্তার ঠেকানোর কোন উপায়ই দৃশ্যমান ছিলো না। করোনাভাইরাস নিয়ে খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে, একটি রাশিয়া-সোদী তেলযুদ্ধ শুরু হয়েছে। মস্কো ও রিয়াদ উভয়ই রাতারাতি তেলের দাম ৩০ শতাংশ হ্রাস করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দীর্ঘ অনাদায়ী পে-রুল ট্যাক্স কাটের মাধ্যমে ঘন্টা ভিত্তিক শ্রমিকদের সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যে চ্যান্সেলর হৃষি সুনাক ইতোমধ্যে একটি ‘করোনাভাইরাস বাজেট’ ঘোষণা করেছেন। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সহ অন্যান্য দেশগুলোকে তাদের ছোট-বড়ো ব্যবসাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং নতুন অর্থনৈতিক বিশ্ব ব্যবস্থা থেকে ফায়দা হাসিল করতে সুযোগ অনুসন্ধান করতে হবে, এসব সংকটকে অস্বীকার না করে। এগুলোকে অস্বীকার করা ফ্লু মহামারির চেয়েও মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হতে পারে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button