ইসরায়েলের কাতার বোমাবর্ষণ: দাসত্বের শিক্ষা
ইসরায়েলের কোনো সামরিক প্রয়োজন ছিলোনা কাতারি ভবনে হামলা করার, যেখানে হামাসের মধ্যস্থতাকারীরা অবস্থান করছিলেন। এটি ছিল এক দৃশ্যমান ঘোষণা। গাজার অবরোধের অবসান ঘটাতে যারা মধ্যস্থতা করতে চাইছিলেন, তাদের হত্যার চেষ্টা করে ইসরায়েল স্পষ্ট করে দিল যে, শান্তি তার কাছে অসহনীয়, কারণ শান্তি মানে ভাগাভাগি করা। ইসরায়েল যে একমাত্র শান্তি চায় তা হলো—নদী থেকে সাগর পর্যন্ত সমগ্র ভূমি, যেখানে কোনো আরব বা ফিলিস্তিনি থাকবে না।
বছরের পর বছর কাতার বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সহযোগিতা করেছে, হামাসকে অর্থ জুগিয়েছে যাতে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলো বিভক্ত থাকে। এই হিসাব ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর নেতানিয়াহুর জন্য উল্টো ফল বয়ে আনে। বিভাজন বপন করে তিনি বিশৃঙ্খলা ঘরে তুলেছিলেন। এরপর নেতানিয়াহুর আর কাতারি মধ্যস্থতার প্রয়োজন রইল না। দোহা তার প্রয়োজনীয়তা হারাল। আর যখনই প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়, নেতানিয়াহুর কৌশল একই থাকে: ধ্বংস। তিনি গাজায় শান্তি চান না, তিনি চান গাজার বিলুপ্তি। তাই হামাসের মধ্যস্থতাকারীদের বোমা মেরে হত্যা করা হয়েছে—যুদ্ধ শেষ করতে নয়, বরং আলোচনার সম্ভাবনা শেষ করতে। কারণ আলোচনা তার প্রকৃত প্রকল্প অর্থাৎ অঞ্চলটিকে জাতিগতভাবে শূন্য করার ক্ষেত্রে অন্তরায়।
তবে তীক্ষ্ণ শিক্ষাটি কাতারের জন্য নয়। এটি রিয়াদ এবং আবুধাবির জন্য। তাদের শাসকরা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সবচেয়ে লজ্জাজনক পথ বেছে নিয়েছেন: একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা, অথচ নিজেদের রাষ্ট্রনায়ক বলে আত্মপ্রশংসা। তারা বিভ্রমে ভুগেছেন যে তেল আবিব ও ওয়াশিংটনের কাছে দাসত্ব প্রদর্শন করলে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। তারা তাদের আনুগত্যকে প্রজ্ঞা ভেবেছেন। তারা ভৃত্যতাকেই নিরাপত্তা বলে ভুল করেছেন।
তাদের ভুল আরও গভীর হয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে নতজানু হওয়ার মাধ্যমে। তারা তার পরিবারকে চাকচিক্যময় ব্যবসায়িক চুক্তি উপহার দিয়েছিল, ভেবে যে ট্রাম্প পরিবারকে ধনী করলে সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। কিন্তু ট্রাম্প বা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যতই তোষামোদ করা হোক না কেন, তাতে কখনোই ওয়াশিংটনের প্রিয় সন্তান ইসরায়েলকে বেঁধে রাখা যায় না। ট্রাম্প তাদের অর্থ নিয়েছেন। ইসরায়েল তাদের কাছ থেকে আনুগত্য নেবে। আর তাদের হাতে যা অবশিষ্ট থাকবে তা হলো কেবল দুর্বলতা।
ইসরায়েল কোনো আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার অংশীদার নয়। এটি একটি বর্ণবাদী ও গণহত্যাকারী রাষ্ট্র, যা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান করে না। যখনই সুবিধা হয়েছে প্রতিবেশীদের গ্রাস করেছে এবং যেসব সহযোগীর আর দরকার নেই তাদের পরিত্যাগ করেছে। উপসাগরীয় রাজতন্ত্রগুলো নিজেদের অপরিহার্য ভাবে মনে করে। বাস্তবে তারা কেবল দাস, যাদের টিকে থাকা নির্ভর করছে ইসরায়েলের ইচ্ছার ওপর। তাদের আনুগত্য কোনো বীমা নয়। এটি কেবল একটি শিকল।
সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়তো বিশ্বাস করে তাদের ভাণ্ডার এবং দৃষ্টিনন্দন প্রকল্পগুলো তাদের অন্যদের ভাগ্য থেকে রক্ষা করবে। তারা হয়তো ভাবে, গাজা নিয়ে নীরব থাকা এবং ইসরায়েলের অপরাধে সহযোগিতা করা তাদের জন্য শান্তি কিনে দেবে। কিন্তু দোহায় ইসরায়েলের বোমা প্রমাণ করেছে, আনুগত্য কোনো ঢাল নয়। সহযোগিতা কোনো আশ্রয় নয়। দাসত্ব কোনো কৌশল নয়।
তারা শুধু ফিলিস্তিনিদের উপহাস করেনি। তারা ইসরায়েলের আক্রমণকে অনুমোদন দিয়েছে, লজিস্টিক সহায়তা করেছে, এবং দখলদারির যন্ত্রপাতিকে সক্রিয় করেছে, এই ভেবে যে এতে তারা গুরুত্ব পাবে। তারা নিপীড়নকে প্রজ্ঞা ভেবেছে। কিন্তু তারা আসলে যা কিনেছে তা আধুনিকতা নয়, নৈতিক দেউলিয়াত্ব।
তাদের ঝকঝকে স্লোগান “ভিশন ২০৩০” এবং অন্যান্য তথাকথিত আধুনিকায়ন প্রকল্পগুলো নিছক ডালপালা। সুউচ্চ অট্টালিকা দাসত্ব আড়াল করতে পারে না। পর্যটন কেন্দ্র দমনকে লুকাতে পারে না। এই শাসকদের প্রকৃত জাতীয় নীতি হলো আত্মসমর্পণ।
মোহাম্মদ বিন সালমান এবং মোহাম্মদ বিন জায়েদকে এটি মনে রাখা উচিত। ইতিহাস দাসদের সংস্কারক হিসেবে মনে রাখে না। ইতিহাস তাদের মনে রাখে ভৃত্য হিসেবে, আর শেষে—বলির পাঁঠা হিসেবে। -জিয়াদ মোটালা, লেখক হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল অব ল-এর আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং ১৯৯৫ সাল থেকে ওয়েস্টার্ন কেপ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত তুলনামূলক ও আন্তর্জাতিক আইন কর্মসূচির সাবেক পরিচালক।



